দীর্ঘতম শৈত্যপ্রবা- ০ দীর্ঘ ৩০ দিনে ২৯ দিন শৈত্যপ্রবাহ- ০ চলবে আরও বেশ কিছুদিন- ০ ত্রিশ দিনে মারা গেছে ১৩৫ জন- ০ ৰেতে কাজ করতে গিয়ে মৃতু্য হয়েছে কৃষকের- ০ বোরো-আলু ৰতিগ্রস্থ হচ্ছে- ০ চলাচলে বাধাগ্রস্থ সকল যানবাহন

 টানা দু'দিনের কনকনে শীত, হিমেল বাতাস ও ঘন কুয়াশায় বিপর্যসত্ম রাজধানীসহ সারাদেশ। গত ত্রিশ দিনে দেশে মাত্র একদিনের জন্য শৈত্যপ্রবাহ ছিল না। একদিন বিরতির পর সোমবার থেকে আবার শুরম্ন হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ।
শৈত্যপ্রবাহ আজ বুধবার আরও বেশকিছু নতুন এলাকায় বিসত্মৃতি লাভ করতে পারে। সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। আবহাওয়ার এমন অবস্থা আরও দু'তিন দিন থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বেড়েছে শীতজনিত রোগে আক্রানত্ম ও মৃতু্যর সংখ্যা। গত ত্রিশদিনে সারাদেশে ১৩৫ জনের মৃতু্য হয়েছে। মঙ্গলবার নতুন করে ১৭জনের মৃতু্য ঘটেছে দিনাজপুর, পিরোজপুর, বাগেরহাট, বরগুনা, নাটোর ও কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে। চরম বিঘ্ন ঘটছে জল, স্থল ও আকাশপথে যান চলাচলে। ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকা থেকে পিরোজপুরগামী লঞ্চগুলো ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা দেরিতে পৌঁছে। দু'দিন ধরে ঢাকা-বরিশাল নৌ রম্নটের লঞ্চগুলো ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা বিলম্বের শিকার হচ্ছে। ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামগামী দূরপালস্নার যানবাহনগুলো পৌঁছে অনেক দেরিতে। সকাল দশটার বেসরকারী এয়ারলাইন্স জিএমজি ও ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ফাইট আকাশে ওড়ে বেলা ২টায়। আলু ও বোরো ফসল পড়েছে হুমকির মুখে। অনেক অঞ্চলে বোরো আবাদ পিছিয়ে পড়েছে। শৈত্যপ্রবাহের কারণে বরগুনার বামনা উপজেলা প্রশাসনু সকল শিা প্রতিষ্ঠান ৩ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীসহ দেশের অনেক অঞ্চলে বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়েছে। গত দু'দিন ধরে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি রাজধানীতে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, ঈশ্বরদী ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে বিরাজমান মৃদু্য শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে এবং তা রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে বিসত্মার লাভ করতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা কমতে পারে। মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সোমবারের তুলনায় ৪ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস কমেছে। অর্থাৎ মঙ্গলবার দেশের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ কক্সবাজারে ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস কমলেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়ে যায় শূন্য দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, তাপমাত্রা খুব বেশি নিচে না নামলেও শীত অনুভূত হচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাস। আর দিনের বেলায় থাকে না সূর্যের আলো। ঘন কুয়াশার কারণে উত্তাপ গ্রহণ করতে পারছে না মাটি। আর সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্য খুব বেশি বাড়েনি।
এদিকে গত দু'দিনের হিমেল বাতাস ও তীব্র শীতে স্থবির হয়ে পড়ছে রাজধানীবাসীর জীবনযাত্রা। রাজধানীতে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। মঙ্গলবার দিনভর নগরীর আকাশ ছিল কুয়াশার দখলে। হিমেল বাতাস বাড়িয়ে দেয় শীতের তীব্রতা। গত দু'দিনে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি রাজধানীতে। ছিন্নমূল মানুষের কষ্টের সীমা ছিল না। অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হতে সাহস করেনি মানুষ। গরম কাপড় ব্যবহার করতে হয়েছে সকলকে। পড়ে যায় গরম কাপড় কেনার হিড়িক। দেড় থেকে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয় গরম কাপড়। মাথায় গরম টুপি, গলায় মাফলার, গায়ে ভারি চাদর বা জ্যাকেট এবং পায়ে মোজা_ এ সবই ছিল শনিবারের পোশাক। ভিড় জমে ওঠে প্রতিটি চা দোকানে। ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় কমে যায় গ্যাসের চাপ। রাজধানীতে সৃষ্টি হয় গ্যাসের সঙ্কট। অনেক এলাকায় গ্যাসের চাপ একেবারেই ছিল না। সকালে কর্মজীবী মানুষ এবং স্কুলগামী শিশু ও তাদের অভিভাবকদের কনকনে শীতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার দিনাজপুর থেকে জানান, শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যসত্ম। শীতজনিত রোগে আক্রানত্ম ও মৃতু্যর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গত এক সপ্তাহে জিয়া হার্ট ফাউন্ডেশন ও দিনাজপুর মেডিক্যাল কলে হাসপাতালে শীতজনিত রোগে ৫২ জনের মৃতু্য হয়েছে। এ সময় হাসপাতালে ভর্তি হয় ৩ শতাধিক রোগী। শীতে নয়, শীত মৌসুমে প্রয়োজনীয় পানি পান না করা এবং অন্যান্য নিয়ম কানুন না মানার কারণে মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। মঙ্গলবার ভোর থেকে দিনাজপুরে আবারো শুরম্ন হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। উত্তরের হিমেল হাওয়া এবং কনকনে শীতের কারণে জেলার ২৫ লাখ মানুষের জীবন জবুথবু হয়ে গেছে। শীতজনিত রোগে গত ২৪ ঘণ্টায় দিনাজপুরে আরও ৬ জনের মৃতু্য হয়েছে। শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে বিভিন্ন মসজিদে বিশেষ দোয়া আদায় করা হয়। ঘন কুয়াশায় দিনাজপুর-রংপুর ও দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কে ৮টি ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ সব দুর্ঘটনায় ১ জন নিহত এবং ২১ জন আহত হয়েছে।
নিজস্ব সংবাদদাতা নাটোর থেকে জানান, শনিবার থেকে দ্বিতীয় দফা শৈত্যপ্রবাহ শুরম্ন হয়েছে। স্থবির হয়ে পড়েছে মানুষের জীবনযাত্রা। জরম্নরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না কেউ। শহরে লোকজনের চলাচলও গেছে কমে। গরম কাপড়ের অভাবে বিপাকে রয়েছে দরিদ্র জনগোষ্ঠী। তীব্র ঠা-ায় শনিবার মাঠে কাজ করার সময় বড়াইগ্রাম উপজেলার দিঘইর গ্রামের আইয়ুব আলীর (৬০) মৃতু্য হয়েছে।
নিজস্ব সংবাদদাতা দৌলতপুর থেকে জানান, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সোমবার রোতে এবং মঙ্গলবার সকালে তীব্র শীতে আরও ৬ জনের মৃতু্য হয়েছে। তারা হচ্ছে, উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউপির সোলাইকু-ি গ্রামের শাহাবাজ আলী (৭২), তাজপুর গ্রামের গোলাম মুর্তজা (৬৮), পিয়ারপুর ইউপির আলদহ গ্রামের আমিরম্নন্নেছা (৬৫), রহিমা খাতুন (৮০), সদর ইউপির সরম্নপপুর গ্রামের বাগু মালিথা (৮২) ও দৌলত আলী গ্রামের আব্দুল বাছেদ (৯২)। গত চারদিনে এলাকায় সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। মানুষের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই।
স্টাফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম থেকে জানান, জেলার জনজীবন বিপর্যসত্ম হয়ে পড়েছে। আলু ও বোরো ফসল চরম হুমকির মুখে। মঙ্গলবার সকাল ১১টা পর্যনত্ম ঘন মেঘে ঢাকা ছিল পুরো এলাকা। হিমালয়ের বরফ ছোঁয়া বাতাসে কাহিল হয়ে পড়েছে মানুষ। অব্যাহত ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকা থেকে দূরপালস্নার যানবাহনগুলো অনেক দেরিতে পৌঁছে। অব্যাহত শৈত্যুপ্রবাহে পিছিয়ে যাচ্ছে বোরো আবাদ। বোরো আবাদের পিক সময় চললেও কৃষকরা চারা লাগাতে পারছে না। অনেক তে হলুদ হয়ে গেছে। কীটনাশক ওষুধ দিয়েও সামাল দিতে পারছে না কৃষকরা।
নিজস্ব সংবাদদাদা মির্জাপুর থেকে জানান, শীতজনিত রোগে আক্রানত্মের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন শত শত শিশু রোগী মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালের শিশু বিভাগে ভিড় জমাচ্ছে। হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. তাহমিনা খন্দকার জানান, বর্তমানে যে মাত্রায় শৈত্যপ্রবাহ ও শীত পড়েছে তা শিশু সহ্য করতে পারছে না। প্রচ- ঠা-ার কারণে শিশুরা নানা অসুখে ভুগছে।
স্টাফ রিপোর্টার সিরাজগঞ্জ থেকে জানান, শীতে কাঁপছে সিরাজগঞ্জবাসী। গত ১৫ দিনের একটানা শীতে জেলার বিভিন্ন স্থানে শিশুসহ কমপ ে১০ জন মারা গেছে। যমুনার চর এবং গ্রাম থেকে মানুষ ছুটে আসছে শহরে। এখন পর্যনত্ম রেড ক্রিসেন্ট, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং বিত্তবানদের খয়রাতি গরম কাপড় পায়নি এলাকার মানুষ। মঙ্গলবার উত্তরের বাতাসের সঙ্গে সামান্য সময় পানির মতো কুয়াশা পড়েছে । শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। জবুথবু হয়ে গেছে সাধারণ মানুষ। রাসত্মাঘাট প্রায় ফাঁকা। প্রচ- কুয়াশায় বোরো চাষীরা মাটে নামতে পারছে না। পোল্ট্রি খামারে ১০ হাজারের বেশি মুরগি মারা গেছে বলে জানালেন শিয়ালকোটার খামরি নরেশ ভৌমিক।
নিজস্ব সংবাদদাতা বরগুনা থেকে জানান, মঙ্গলবার সকালে পাথরঘাটার বড়ইতলা গ্রামের নাজেম আলীর স্ত্রী চান ভানু (৮৫) শীতজনিত রোগে মারা গেছে। প্রচ- শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে বরগুনার মাইঠা গ্রামের আব্দুল খালেক (৬৫) অগি্নদগ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হয়েছে। শৈত্যপ্রবাহের কারণে বামনা উপজেলা প্রশাসন সকল শিা প্রতিষ্ঠান ৩ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছেন।
নিজস্ব সংবাদদাতা পিরোজপুর থেকে জানান, দু'দিন ধরে জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। শীতজনিত রোগে আক্রানত্মের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ভা-ারিয়া সদর ইউনিয়নে জামিরতলা গ্রামের মোঃ রম্নসত্মম ফকির (৭৫) শীতে মারা গেছে। কাজে নামতে পারছে না দিনমজুররা। শীতার্ত মানুষের জন্য এখন পর্যনত্ম সরকারীভাবে কোন বরাদ্দ আসেনি। ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকা থেকে পিরোজপুরগামী লঞ্চগুলো ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা দেরিতে পৌঁছে।
নিজস্ব সংবাদদাতা বাগেরহাট থেকে জানান, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলায় হাড় কাঁপানো শীতে দু'জনের মৃতু্য হয়েছে। তারা হচ্ছে, পূর্ব সরালিয়া গ্রামের হাকিম শেখের স্ত্রী সাহিদা বেগম (৬০) ও বারইখালী গ্রামের আনছার আলী হাওলাদার (৭০)। সোমবার রাতে মোরেম্নলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুব্রত কুমার শিকদার শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করেছেন।
স্টাফ রিপোর্টার যশোর অফিস থেকে জানান, জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। বেড়েছে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব। দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করেছে যানবাহনগুলো। স্কুল কলেজে শিার্থীর উপস্থিতি কমে গেছে। শহরের রেল ও বাসের সিডিউল নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সংশিস্নষ্টরা। গতকাল বেসরকারী এয়ারলাইন্স জিএমজি ও ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের সকালের ফাইটের নির্ধারিত সময় ছিল সকাল ১০টা। কিন্তু ঘন কুয়াশা ও শীতের কারণে সেই বিমান দুপুর ২টায় আকাশে ওড়ে।
নিজস্ব সংবাদদাতা বরিশাল থেকে জানান, অচল হয়ে পড়েছে জনজীবন। স্কুল-কলেজ ও অফিস-আদালতে উপস্থিতি ছিল তুলনামূলকভাবে কম। গত দু'দিন ধরে ঘন কুয়াশায় ঢাকা-বরিশাল নৌ রম্নটের লঞ্চ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। লঞ্চগুলো নির্ধারিত সময়ের ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর পেঁৗছছে।

No comments

Powered by Blogger.