সংসদ গ্যালারি থেকে

উত্তম চক্রবতর্ী ঢিলেঢালা অধিবেশন চলছে। বিরোধী দল সংসদে নেই। তাই নেই কোন উত্তাপ বা বিতর্ক। কলকাতায় গেছেন প্রধানমন্ত্রীসহ অধিকাংশ সিনিয়র মন্ত্রী, নেতা ও মহাজোটের শীর্ষ নেতারা।
সংসদে তাঁদের অনুপস্থিতির সুযোগে অন্য সংসদ সদস্যদেরও ছিল গাছাড়া ভাব। অধিবেশন কৰের অধিকাংশ আসনই ছিল ফাঁকা। সবে ধন নীলমণি স্পীকার এ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ। যতৰণ ওই আসনে তিনি থাকেন, ততৰণ নানা মনত্মব্য ছুড়ে কিছুটা হলেও প্রাণ সঞ্চারের চেষ্টা করেন অধিবেশনের।
নিরাশ হবেন না, মন্ত্রীর বিশাল ৰমতা!
কোন কিছু আদায় করতে হলে মন্ত্রীদের কাছে ধর্ণা তো দিতেই হয়। অনেক সংসদ তাঁর প্রভাব খাটিয়ে কাজটি দ্রম্নত করতে পারেন, যাঁর তেমন প্রভাব নেই তাঁকে ঘুরতে হয় একটু বেশিই। মঙ্গলবার সংসদেও ঘটেছে তেমন ঘটনা। সাংসদ মেজর জেনারেল (অব) সুবিদ আলী ভূঁইয়া তাঁর নির্বাচনী এলাকায় দুটি ড্রেজিং প্রাপ্তি নিয়ে মন্ত্রীর কাছে দু'বার তাগিদ দিয়েও ব্যর্থ হন। বিষয়টি পানিসম্পদ মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রসিক স্পীকার বলেন, "মাননীয় সদস্য, পানিসম্পদ মন্ত্রীর বিশাল ৰমতা সম্পর্কে আপনার জানা নেই। আশায় বুক বাঁধেন। দু'বার হয়নি তো কি হয়েছে, এবার নিশ্চয়ই হবে। আশাবাদী হন, নিরাশ হবেন না।'

ভুল জায়গায় নক করেছেন!
প্রশ্নোত্তর পর্বে সম্পূরক প্রশ্নের জন্য রীতিমতো প্রতিযোগিতা নতুন নয়। যিনি এ সুযোগটি পান প্রশ্নের নামে নিজ নির্বাচনী এলাকার সমস্যাগুলো তুলে ধরে তা সমাধানের জন্য মন্ত্রীকে তদ্বির করেন। কিন্তু সম্পূরক প্রশ্ন করতে দাঁড়িয়ে ভুল জায়গায় প্রশ্ন করেন সংসদ সদস্য শাহিদা তারেক দীপ্তি। তিনি প্রশ্ন করতে উঠে পানিসম্পদমন্ত্রীর কাছে মাওয়া-শিবচর-দৌলতদিয়া রম্নটে ফেরি চলাচলে অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরেন। চুপ করে বসে থাকার পাত্র নন স্পীকার এ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ। বলেন, 'মাননীয় সদস্য, পানিসম্পদমন্ত্রী আপনাকে ফেরি দিতে পারবেন না। ফেরি দেয়ার দায়িত্ব নৌপরিবহনমন্ত্রীর। আপনি ভুল জায়গায় নক করেছেন।' ভুল বুঝতে পেরে স্পীকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বসে পড়েন সাংসদ দীপ্তি।

'কারো পৌষমাস, কারো...'
'কারো পৌষমাস, আর কারোর সর্বনাশ।' বহুল প্রচলিত এই প্রবাদ বচনটি ঘুরে ফিরে সবসময়ই আসে। মঙ্গলবার সংসদেও বিষয়টি তুলে ধরেন সরকারী দলের সংসদ সদস্য ইস্রাফিল আলম। পানিসম্পদমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, "মাননীয় মন্ত্রী, মে-জুন মাসে অর্থ বরাদ্দ দিলে পোয়াবারো হয় ইঞ্জিনিয়ার আর ঠিকাদারদের। এ দু'মাস তাঁদের পৌষমাস, আর আমাদের হয় সর্বনাশ! এ দু'মাসকে দুর্নীতির মাসও উলেস্নখ করে সাংসদ ইস্রাফিল আলমের বক্তব্যে টেবিল চাপড়িয়ে সমর্থন দেন সতীর্থ সংসদ সদস্যরা।

'খাল এ্যান্ড নদী সমাচার'
সংসদে মঙ্গলবার প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন। বেশিরভাগ প্রশ্নই ছিল সাংসদদের নির্বাচনী এলাকায় নদী ড্রেজিং, নাব্য ও বাঁধ নির্মাণ প্রসঙ্গে। মন্ত্রী সারাদেশের খাল ও নদী খননের বিষয়ে তাঁর সরকারের প্রতিশ্রম্নতির কথা তুলে ধরেন। এ সময় রসিক স্পীকার টিপ্পনি কেটে মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেন, 'হোয়াট ইজ দ্য ডিফারেন্স বিটুইন খাল এ্যান্ড নদী?' কম যান না মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন। বলেন, "খাল হলো খাল। খাল দিয়ে পানি যায়।' স্পীকার আবারও প্রশ্ন করেন, 'নদী দিয়ে তাহলে কী যায়?' এ প্রশ্নে মন্ত্রী কিছুটা বিব্রত হলে পুরো অধিবেশন জুড়ে হাসির রোল ওঠে।

সমুদ্র খনন সমাচার
প্রশ্নোত্তর পর্বজুড়েই ছিলেন পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন। যে সংসদ সদস্যই তাঁর এলাকার নদী-খালগুলোর নাব্য ফিরিয়ে আনতে ড্রেজিংয়ের দাবি জানালে তা করার আশ্বাস দিতে থাকেন মন্ত্রী। এই সুযোগটি নিতে ফোর নেন পার্বত্য অঞ্চল থেকে সংরৰিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য এথিন রাখাইন। তিনিও তাঁর এলাকার নদীগুলোর খননের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। ছেড়ে দেয়ার পাত্র নন স্পীকার আবদুল হামিদ। তাৎৰণিক প্রশ্ন, "মাননীয় সদস্য, কক্সবাজারসহ পার্বত্য অঞ্চল মানেই তো বঙ্গোপসাগর। আপনি কী সমুদ্র খননের কথা বলছেন?" জবাবে এথিন রাখাইন বলেন, সমুদ্র ছাড়াও নদী-খাল আছে। এ সময় সবাই হেসে ওঠেন।

No comments

Powered by Blogger.