জঙ্গী তৎপরতার বিসত্মারে দারিদ্র্য মূল কারণ নয় by শামীম আহমেদ

সন্ত্রাস, জঙ্গী কর্মকা- সব যুগে ছিল। তবে সময়ে সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গী তৎপরতার রূপ, ধরন পরিবর্তিত হচ্ছে। পরিবর্তিত হচ্ছে তাদের ল্য, উদ্দেশ্য। বিশ্বব্যাপী শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার ল্যে নতুন নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযানও অব্যাহত রেখেছে।
২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার ও পেন্টাগনে আত্মঘাতী বিমান হামলার মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস ও জঙ্গী তৎপরতার যে প্রকাশ্য সূচনা হয়েছে, তা দিন দিন ব্যাপকতা লাভ করছে। জঙ্গী হামলা সর্বগ্রাসী রূপ লাভ করেছে। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, বিদেশী দূতাবাস, বাস, ট্রেন, বিমান, বাণিজ্যিক কেন্দ্র, খেলার মাঠ, নাইট কাব, কোন কিছুই বাদ পড়ছে না জঙ্গি হামলার আওতা থেকে। নারী-পুরম্নষ, শিশু-বৃদ্ধ, ধনী-দরিদ্র কোন শ্রেণীই বাদ পড়ছে না। আইনশৃঙ্খলা রার কাজে নিয়োজিত সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্যরা হামলার শিকার হয়ে অকাতরে প্রাণ হারাচ্ছে। এসব হামলার উদ্দেশ্য আর যাই হোন না কেন, তা যে পৃথিবীর জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ঢেকে আনছে সে বিষয়ে কারও কোন সন্দেহ নেই।
জঙ্গী হয়ে ওঠার নেপথ্যে পাঁচটি মিথ
মানুষের মনোভঙ্গিতে জঙ্গী বিষয়টি এমনভাবে স্থান করে নিয়েছে যে জঙ্গী হামলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চোখের সামনে তার একটা চিত্র ফুটে ওঠে। জঙ্গী সম্পর্কে আমাদের সার্বিক ধারণা হচ্ছে সে যুবক, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং ধর্মান্ধ হবে। সে আফগানিসত্মান, আলজিরিয়া, কিউবা, ইরান, ইরাক, লেবানন, লাইবেরিয়া, নাইজিরিয়া, পাকিসত্মান, সৌদি-আরব, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া বা ইয়েমেনের নাগরিক হবে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার্স ও পেন্টাগনে হামলার আট বছর পর, গত ২৫ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বেষ্টনী থেকে একজন জঙ্গীকে আটক করা হয়েছে। নাইজিরীয় যুবক ওমর ফারম্নক আবদুলস্নাহ মুতালিব হল্যান্ডের রাজধানী আমস্টার্ডাম থেকে যাত্রীবেশে নর্থ ওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে করে যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট যাচ্ছিল। ডেট্রয়েট বিমানবন্দরে অবতরণের আগ মুহূর্তে বিমানটি উড়িয়ে দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা চালায় ওমর। ওমর নিজেকে আল-কায়েদার সদস্য বলে দাবি করে। সে নিজের পায়ে বাঁধা ডিভাইসের সাহায্যে বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করেছিল। জানা য়ায় ২৩ বছর বয়সী ওমর ইংল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল বিভাগের ছা্ত্র। এই হামলার ব্যর্থ চেষ্টার ঘটনাকে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের গাফিলতি বলে অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, এই ঘটনা কারও ব্যক্তিগত কিংবা কোন সংস্থার একক গাফিলতি নয়। এটি নিরাপত্তা সংস্থা ও গোয়েন্দা বিভাগের পদ্ধতিগত ব্যর্থতা। যুক্তরাষ্ট্রের ডাটাবেজে ৫ লাখ ৫০ হাজার চিহ্নিত সন্ত্রাসীর তালিকায় ওই নাইজিরীয় যুবকের নাম রয়েছে। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে সে কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রগামী বিমানের যাত্রী হলো সে প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এই ঘটনার পর পুরো পৃথিবী জঙ্গী হামলা বিষয়ে আবারও সতর্ক হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নতুন ট্রান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি এ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিধান ঘোষণা করে। নতুন ঘোষিত এই বিধান অনুযায়ী উলেস্নখিত চৌদ্দটি দেশ থেকে আগত নাগরিক বা পাসপোর্টধারীদের বিমানে ওঠার প্রাক্কালে বিশেষ নিরাপত্তা তলস্নাসি করা হবে।
বর্তমানে সন্ত্রাসী বা জঙ্গী তৎপরতা কোন নির্দিষ্ট দেশ বা ভূখ-ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন নামে সংগঠন আত্মপ্রকাশ করছে। নতুন নতুন সদস্য যুক্ত হচ্ছে জঙ্গী সংগঠনগুলোর সঙ্গে। ভৌগোলিক সীমারেখার ন্যায় জঙ্গীদের সংখ্যা, হামলার কৌশল, ল্যবস্তু প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। জঙ্গী শীর্ষ সংগঠন আল-কায়েদা তাদের ল্য অর্জনের জন্য মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী সংগঠনের পরিচয় ছাড়াই নতুন নতুন লোকদের তাদের দলভুক্ত করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের মূল টার্গেট হচ্ছে যুবক শ্রেণী। ধর্মীয় অনুশাসনের ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে জঙ্গী নেতারা যুবকদের জিহাদি পথ বেছে নিতে উদ্বুদ্ধ করছে। পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে তারা ইন্টারনেটকে বেছে নিয়েছে। বিভিন্ন সাঙ্কেতিক বার্তার মাধ্যমে সদস্যরা নিজেদের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান করে।
এেেত্র ঐ চৌদ্দটি দেশের বাইরে অন্য স্থান থেকে আগতদের েেত্র কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে সে বিষয়টি কম গুরম্নত্বপূর্ণ নয়। যদি কোনো জঙ্গী উত্তর ভার্জিনিয়া থেকে আসে তবে তখন কি হবে? যেমন ৮ ডিসেম্বর পাকিসত্মানে পাঁচ যুবককে আটক করা হয়েছে এবং পাকিসত্মানের গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী আটককৃত ঐ পাঁচ যুবক জঙ্গী তৎপরতার পরিকল্পনার সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। মূল কথা হচ্ছে, জঙ্গীরা কোন নির্দিষ্ট দেশ থেকে আসবে অথবা তাদের জীবনবৃত্তানত্ম আমাদের সার্বিক ধারণার সঙ্গে মিলে এ রকম ভাববার কোন অবকাশ নেই।
আমাদের মধ্যে একটা প্রচলিত ধারণা আছে যে, সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ অভাবের তাড়নায় বিভিন্ন সমাজবিরোধী অপতৎপরতায় জড়িত হয়ে পড়ে। অর্থের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক সময় তারা জঙ্গীর খাতার নাম লেখায়। জঙ্গী সংগঠনগুলো মানুষের দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে অর্থের লোভ দেখিয়ে অনেককে বিপথগামী করে জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে। কিন্তু এই অনুমান এখন সর্বেেত্র সঠিক বলে প্রমাণিত হচ্ছে না। পুরনো ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে মানুষ কি কারণে বা কি ধরনের পরিস্থিতিতে পড়ে জঙ্গী সংগঠনগুলোর সঙ্গে জড়িত হয় সে বিষয়ে আমাদের বিসত্মারিত জানতে হবে। বাসত্মবে অনেক নামকরা জিহাদি, জঙ্গী সমাজে প্রতিষ্ঠিত এবং উচ্চ শিতি। বড় দিনে যুক্তরাষ্ট্রে বিমানে বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টাকারী ওমর ফারম্নক আবদুল মুতালেব নাইজিরিয়ার একটি ধনী পরিবারের সদস্য। এমনকি শীর্ষ জঙ্গী নেতা ওসামা বিন লাদেনও খুবই ধনাঢ্য ব্যক্তি। সৌদি রাজ পরিবারের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। অন্যদিকে ২০০১ সালের হামলার পর বোঝা যায়, হামলাকারীদের প্রকৌশল বিষয়ে ধারণা রয়েছে। বাসত্মবে যে কোন আর্থ-সামাজিক প্রোপট থেকে যে কেউ যে কোন সময় জঙ্গী তৎপরতায় জড়িয়ে পড়তে পারে। তবে কোন দেশের অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর কেউ কেউ অর্থ উপার্জনের জন্য জঙ্গী তৎপরতায় জড়িয়ে পড়তে পারে।
ইরাকে নিযুক্ত মার্কিন ডিটেইনি অপারেশন্স কমান্ডার মেজর জেনারেল ডগলাস স্টোন-এর মতে, ২০০৭ সাল পর্যনত্ম ইরাকে বিভিন্ন হামলা ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে মার্কিন বাহিনী কর্তৃক আটক প্রায় ২৫০০০ জন ইরাকীর অধিকাংশই পূর্বে কোন না কোন কাজ করতেন। কার্নেজি এনডাউমেন্টের ক্রিস্টোফার বোক-এর মতে, সৌদি সরকার সে দেশে বিভিন্ন জঙ্গী তৎপরতার দায়ে আটক ৬৩৯ জন জঙ্গীর জন্য একটি পুনর্বাসন কর্মসূচী পরিচালনা করছে। এদের অধিকাংশই সমাজের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য। এদের মধ্যে মাত্র তিন ভাগ অবস্থাসম্পন্ন।
১১ সেপ্টেম্বর হামলার সঙ্গে জড়িত আল-কায়েদার মূল সংগঠন বর্তমানে পাকিসত্মান ভিত্তিক। কিন্তু জঙ্গী সংগঠনগুলো দাবি করছে উত্তর আফ্রিকার ইসলামিক মাগরেব, ইন্দোনেশিয়ায় জামেয়া ইসলামিয়া এবং দণি সোমালিয়ায় আল-শাহবাব আল-কায়েদার সংগঠন। পশ্চিমা দেশেও আল-কায়েদার দলভুক্ত করার কাজ চলছে। বিশ্বব্যাপী আল-কায়েদার অসংখ্য স্বাধীন কেন্দ্র ও ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। এটা নির্দিষ্টকরণ ও গণনা করা অসাধ্য বিষয়, কারণ এটি কোন নির্দিষ্ট স্থানে কেন্দ্রীভূত নয়।
ব্যাপকভাবে বলা যায়, এমন কোন নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ব্যবস্থা নেই যা নির্ভরযোগ্যভাবে জঙ্গি বা সন্ত্রাসী তৎপরতা বাড়াতে বা কমাতে পারে। গণতন্ত্র সব কিছু ভাল করে ফেলবে এটাও সবসময় ভাবা ঠিক না। গণতান্ত্রিক ভারতেও অনেক জঙ্গী হামলার ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে চীন ও সৌদি-আরবের মতো অগণতান্ত্রিক দেশ তাদের নিজেদের ভূখ-ে জঙ্গীবাদকে নিয়ন্ত্রণ করতে সম হয়েছে। হার্বার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ আলবার্টো আবাদি সত্তর দশকের স্পেন, সমাজতন্ত্র পতনের পর রাশিয়া এবং বর্তমান ইরাকের পরিস্থিতি বিবেচনা করে বলেছেন, গণতন্ত্রের পথে উত্তরণের সময় একটা দেশে জঙ্গীবাদের উৎপত্তি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। যেমন ইয়েমেন ও সোমালিয়ার মতো ব্যর্থ রাষ্ট্র জঙ্গীবাদের আবাসভূমি হয়ে উঠছে।
অন্যদিকে সাধারণ জঙ্গী যারা দাবি করে ধর্মীয় মূল্যবোধ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তারা জঙ্গী পথ বেছে নিয়েছে, বেশিরভাগ েেত্র দেখা যায়, ইসলাম সম্পর্কে তাদের তেমন কোন ধারণা নেই। সৌদি-আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশটির জেলখানায় আটক হাজার হাজার জঙ্গীকে প্রশ্ন করেছে কেন তারা সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে, দেখা গেছে, অধিকাংশেরই ধর্মীয় অনুশাসন সম্পর্কে তেমন কোন জ্ঞান নেই এবং ইসলাম সম্পর্কে তাদের ধারণাও খুবই সীমিত। সৌদি কর্মকর্তাদের ভাষ্য মতে, জিহাদি হিসেবে পরিচিতি লাভকারী নাগরিকদের মধ্যে যারা পুনর্বাসন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছে, তাদের এক-চতুর্থাংশ আগে সন্ত্রাসী কাজে জড়িত ছিল, প্রায় মাদক সংক্রানত্ম অপরাধে জড়িয়ে পড়ত। অন্যদিকে মাত্র পাঁচ ভাগ ছিল ধর্মীয় নেতা।
নেদারল্যান্ডস ও ইউরোপের অন্য কোন কোন স্থানে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রজন্মের মুসলিম যুবকরা মনে করছে ইসলামী সংস্কৃতি দূষিত হয়ে গেছে, তাই ইসলাম পুরম্নদ্ধারের জন্য তার সংগ্রাম করছে। তাদের বাবা-মা দূষিত ইসলাম অনুসরণ করছে। প্রকৃত ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য তারা সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছে। স্থানীয় মসজিদ, ইন্টারনেট ও মধ্যপ্রাচ্যের ইমামদের দ্বারা তার এ বিষয়ে অনুপ্রাণিত হচ্ছে। এ যুবকদের সামনে ইসলামকে খুব গোঁড়াভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। বাসত্মবে ইসলাম খুব উদার ধর্ম। উদাহরণস্বরূপ, তরম্নণ মুসলিমদের মৌলিক পরিবর্তনের একটি নেটওয়ার্ক হচ্ছে নেদারল্যান্ডসে হপস্টাড গ্রম্নপ। এই ওয়েবসাইটে ইসলামী বিভিন্ন বিষয়ে দিক নির্দেশনা থাকে। যা তরম্নণদের জিহাদি হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করে। এই ওয়েব সাইটে সিরিয়ার একজন ইমাম শিা দিচ্ছেন, তিনি আগে মাদক বিক্রেতা ছিলেন।
সোমালিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে আলকায়দার সঙ্গে জড়িত গ্রম্নপগুলো তাদের প্রকাশিত ভিডিওচিত্রে মার্কিন বিরোধী গান ও সেস্নাগান প্রকাশ করেছে। জঙ্গী নেটওয়ার্ক কতর্ৃক ব্যবহৃত এসব সঙ্গিত গোঁড়া ইসলামের বিপরীত মনে করা হলেও তরম্নণদের উজ্জীবিত করতে এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। আল-কায়েদা যুবকদের ইসলামের নামে জঙ্গী তৎপরতার সঙ্গে জড়িত করলেও, অনেক েেত্র তারা ইসলামের মূল ভিত্তি থেকে বিচু্যত। ইসলামী মূল্যবোধের সঙ্গে তাদের এসব কর্মকা-ের কোন মিল নেই।
অন্যায়-অবিচারের বিরম্নদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসাবে সন্ত্রাসী অন্দোলন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। মতাদর্শ গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয় হলেও, শুধু মতাদর্শগত কারণে নয়, ব্যক্তিগত সিদ্ধানত্মে অনেকে জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। জঙ্গীদের সাাতকার ও গবেষণায় থেকে জেসিকা স্ট্রেন দেখেন, নির্দিষ্ট ল্য অর্জনে কোন সন্ত্রাসী গ্রম্নপকে সহায়তা করার পরিবর্তে নতুনভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে তারা বেশি আগ্রহী। অনেকে বলেছেন, নির্দিষ্টভাবে অপমান, অভিমানের অনুভূতি থেকে তারা এই পথ বেছে নিয়েছে। কাশ্মীরের একজন জঙ্গী নিজের দল প্রতিষ্ঠা করেছে। কারণ তার ভাষায়, 'পশ্চিমা বিশ্ব মুসলমানদের দমিয়ে রেখেছে। আমাদের অত্মসম্মানে আঘাত করেছে... আমরা নিজেরা নিজেদের মতো করে বেঁচে থাকতে সম নই।'
নমনীয় মতাদর্শের কারণে অনেক সময় অনেক সন্ত্রাসী গ্রম্নপ দ্রম্নত হারিয়ে যায়। এদের মধ্যে আল-কায়েদা খুবই শৃঙ্খল জঙ্গী গ্রম্নপ। কিন্তু এর ল্য এবং শত্রম্নদের তালিকা ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে। মার্কিন মিলেটারি একাডেমীর কমবেটিং টেররিজম সেন্টারের গবেষকগণ তথ্য-উপাত্ত বিশেস্নষণ করে দলের ল্য, উদ্দেশ্য এবং সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে অশ্চর্যজনক ধারণা প্রকাশ করেছেন। আল-কায়দার একজন শীর্ষস্থানীয় নীতিনির্ধারকের কৌশলগত ল্য ক্রমাগত পরিবর্তনের বিষয়ে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন।
ওয়াশিংটন পোস্টের মতে, বড়দিনের সময় অভিযুক্ত বিমান হামলাকারী আব্দুল মুতালিস্নব ওনলাইন ইসলামিক ফোরামে লিখেছেন, 'আমার কেউ নেই আলোচনার জন্য, আমাকে সহায়তা করার কেউ নেই এবং আমি খুব বিষণ্ন ও একাকিত্ব বোধ করছি। আমি জানি না কি করতে হবে। এবং তখনই আমি চিনত্মা করি এই একাকিত্ব আমাকে অন্য পথে ধাবিত করবে'।
জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হওয়ার পেছনে বন্ধুত্বহীনতার চেয়ে ভুল বন্ধু নির্বাচই বেশি দায়ী। যুক্তরাষ্ট্রে যারা দুবর্ৃত্ত কাজে জড়িত হয়ে পড়ছে, তাদের ধরনও প্রায় একই রকম। সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে, কারণে তার বন্ধুও একই ধরনের কাজ করেছে। গুয়ানত্মানামো বন্দীশিবিরে আটক ৫১৬ জন বন্দীর ওপর এক জরিপ পরিচালনা করে কমবেটিং টেররিজম সেন্টার দেখতে পায় আল- কায়দার অন্য সদস্যদের সঙ্গে জানাশোনা অনেকের জঙ্গী হওয়ার পেছনে উৎসাহ যুগিয়েছে। যাদের কাছ থেকে তারা জিহাদের ধারণা লাভ করেছে।

No comments

Powered by Blogger.