অবৈধ সরকারের সব কাজ অবৈধ

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার বিদায় নিলে তাদের সব কর্মকাণ্ড অবৈধ বিবেচিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁর দাবি, মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীন অবৈধ সরকারের মতো এ সরকারও অবৈধ। বিদায় নিলে তাদের সব কর্মকাণ্ড অবৈধ বলে বিবেচিত হবে।
সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, �অতি বাড় বেড়ো না ঝড়ে পড়ে যাবে, অতি ছোট হোয়ো না ছাগলে মুড়ে খাবে।�
গতকাল শনিবার বিকেলে ছাত্রদলের ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, �এ সরকার যে বাড়াবাড়ি করছে তার পরিণতি খুব খারাপ হবে। সরকারকে বলতে চাই, এই দিনই শেষ দিন নয়। ইনশা আল্লাহ সামনে আরো দিন আসছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।� গত দুই বছরে সরকারের সফলতা কী, তাও জানতে চেয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন।
খালেদা জিয়ার অভিযোগ, সরকার বিরোধী দলকে দমন করতে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিচ্ছে এবং অনেক নেতাকে মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করে কারাবন্দি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, �আমাদের নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, এহছানুল হক মিলন, নাসিরউদ্দিন পিন্টু, লুৎফুজ্জামান বাবর, ইসহাক সরকারসহ অনেকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে মোবাইল ফোনসেট ও ভ্যানিটি ব্যাগ চুরির মামলা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির নয়, আওয়ামী লীগেরই ছিঁচকে চুরির অভ্যাস আছে। সে কথা মনে পড়লেই তারা এ ধরনের মামলা দেয়। এ ছাড়া চৌধুরী আলমকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে ১৭ ঘণ্টা পানি পর্যন্ত খেতে দেওয়া হয়নি। এ সরকার স্বৈরাচারের চেয়েও খারাপ।�
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, �তাঁকে যে নির্যাতন করা হয়েছে, তা কোনো মানুষ করতে পারে না। আমাদের সন্দেহ জাগছে, দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোতে কি দেশের লোকজনই কাজ করছে, নাকি বিদেশিরা ঢুকে এ নির্যাতন করছে।�
সংসদে না যাওয়ার প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, �সরকার অন্যায় করলে, ভুল করলে বিরোধী দলের দায়িত্ব সংসদে তা তুলে ধরা। কিন্তু সেখানে বিরোধী দলকে কথা বলতে দেওয়া হয় না। জনগুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নিয়ে বেশ কয়েকটি নোটিশ দিলেও তা তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সেখানে কথা বলতে না পেরে মাঠে কথা বলতে চেয়েছি। কিন্তু সেখানেও বাধা দেওয়া হয়েছে। পল্টন, মুক্তাঙ্গন, এমনকি নয়াপল্টনের বিএনপির পার্টি অফিসের সামনেও সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। অথচ আওয়ামী লীগ তাদের পার্টি অফিসের সামনে প্রতিদিন সভা-সমাবেশ করছে। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না বলেই আওয়ামী লীগ এসব কাজ করছে।� স্পিকার নিরপেক্ষ হতে চান স্বীকার করে খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী স্পিকারকে পরিচালনা করছেন। একইভাবে বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করে প্রধানমন্ত্রী নিজেই প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নিয়ে বসে আছেন।
৪টা ৩৫ থেকে ৫টা ২৬ পর্যন্ত ৫১ মিনিটের বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, �সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) বলেছে, কোথায় কোথায় দুর্নীতি হয়। তারা প্রকাশ করেছে, দেশের বিচার বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসনই সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত। সরকারপ্রধান দায়িত্ব নিয়ে বিচার বিভাগ পরিচালনা করছে। তাহলে নিরপেক্ষতা থাকবে কী করে। উচ্চ আদালতে বসানো হয়েছে দলীয় লোকদের। ফলে জনগণ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।� সরকারের দুর্নীতি, ঘুষবাণিজ্য ও লুটপাটে মানুষ দিশাহারা দাবি করে বিএনপিপ্রধান বলেন, �তারা দুই বছরে দেশের কী উন্নয়ন করেছে, তার হিসাব চাই। গত দুই বছরে সরকারের কে কোথায় কী করেছেন, তার তথ্য আমাদের কাছে আছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।�
খালেদা জিয়া বলেন, সরকার সেনাবাহিনীসহ প্রতিটি খাতেই অন্যায়ভাবে সরকারি কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত এবং ৪৫০ জন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে ওএসডি করেছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলেই তাঁদের বকেয়া বেতনসহ চাকরি ফেরত দেওয়া হবে।� তিনি আরো বলেন, সচিবালয়ে ফাইল নড়ে না। আর কাজের ব্যত্যয় হলে সরকার সেখানে বিএনপির ভুত দেখে। আসলে তারা যাঁদের প্রমোশন দিয়েছেন তাঁরা কাজ বোঝেন না। তিনি বলেন, সরকারের মন্ত্রীরা কাজ জানেন না। তাঁরা আইনও বোঝেন না। সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ও তাঁর কয়েকজন উপদেষ্টা দেশ পরিচালনা করছেন। খালেদা জিয়া বলেন, �এই সরকারের সর্বোচ্চ ব্যক্তি, এক থেকে জিরো নম্বর পর্যন্ত সবাই মিথ্যা কথা বলায় অভ্যস্ত। বিএনপি যেটা পারে না, সেটা বলে না। বিএনপি মিথ্যা বলতে পারে না।�
বিএনপিপ্রধান বলেন, �জনগণের মৌলিক ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সমস্যার সমাধানের দিকে সরকারের নজর নেই। তারা আছে একজন ব্যক্তির নামফলক বসানোর কাজ নিয়ে। দেশে যে বিমানবন্দর আছে, তা-ই সম্পূর্ণ ব্যবহার হয় না। তার ওপর নামফলক বসানোর জন্য নতুন বিমানবন্দর করতে চায় সরকার। পারবে কি না জানি না। তবে ওই নামফলক একদিন থাকবে না।�
খালেদা জিয়া ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, দলীয় শৃঙ্খলার বাইরে কাজ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন কোনো ভাইয়ের নামে স্লোগান দিলে হবে না। এমনকি সমাবেশে লোকসমাগম করলেই হবে না। তিনি বলেন, প্রকৃত ছাত্রদের সমন্বয়ে শিগগিরই সংগঠনের নতুন কমিটি দেওয়া হবে। সেটা মেনে নিয়ে দলের জন্য কাজ করতে হবে।
এর আগে বিকেল সোয়া ৩টায় অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে খালেদা জিয়াকে করতালি ও স্লোগানের মাধ্যমে হাজার হাজার ছাত্রদল নেতা-কর্মী স্বাগত জানান। খালেদা জিয়া রঙিন বেলুন উড়িয়ে ছাত্রসমাবেশ উদ্বোধন করেন। তিনি সেখানে জাতীয় ও দলীয় পতাকাও উত্তোলন করেন। পরে কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভা।
সমাবেশস্থলটি ছাত্রদলের পতাকার পাশাপাশি উৎসব পতাকা, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বড় বড় প্রতিকৃতিসহ বেলুন-ফেস্টুন-ব্যানার দিয়ে সাজানো হয়। সভায় সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন। পরে বিএনপির চেয়ারপারসন ছাত্রদলের একটি নিজস্ব ওয়েবসাইট উদ্বোধন এবং �তোমার অপেক্ষায় বাংলাদেশ� নামে একটি সিডির মোড়ক উ�ে�াচন করেন।
ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীমের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শফিউল বারী বাবুসহ বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
এর আগে শনিবার সকালে ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের নেতাদের নিয়ে জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দিনের প্রথম প্রহরে শুক্রবার রাত ১২টায় মহানগর কার্যালয়ের ভাসানী মিলনায়তনে কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.