উৎফুলস্ন শিশু টোকাই থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

নিখিল মানখিন একবার নয়, বঙ্গবন্ধু পরিবারের যতজন শহীদ হয়েছেন, প্রত্যেক খুনীকে ততবার ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত। তাদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা উচিত ছিল জনসমৰে। ঐতিহাসিক খুনীদের প্রতি কারও মায়া-মমতা ও সমবেদনা থাকতে পারে না।
মরে গিয়ে খুনীরা মানসিক যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেয়েছে। কিনত্মু অভিশপ্ত জীবন রেখে গেছে তাদের পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজনদের জন্য। পালিয়ে বেঁচে থেকে পলাতক ছয় খুনীর খুব বেশি লাভ হবে না। ফাঁসিতে ঝুলে মরার চেয়ে বেশি যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে তাদেরকে। খুনীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে কেউ তাদের অপরাধের অংশীদার হতে চাইবে না। বঙ্গবন্ধু খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর বৃহস্পতিবার এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিভিন্ন পেশার মানুষ।
পাঁচ বঙ্গবন্ধু খুনীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে বুধবার গভীর রাতে। বৃহস্পতিবার ঘরেবাইরে সর্বত্র আলোচনার প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে খুনীদের ফাঁসি। আনন্দ-উলস্নাসের পাশাপাশি চলে খুনীদের প্রতি ােভ ও ঘৃণা প্রকাশ। বাংলামোটর মোড়ে সিএনজি (নারায়ণগঞ্জ দ- ১১-০০৬৫) থামিয়ে চা খাচ্ছেন চালক মোসত্মফা। ফাঁসির কথা উঠতেই মুখ থেকে চা নামালেন তিনি। আলাপরত অন্য লোকদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিনি বলে উঠলেন, একবার নয়, বঙ্গবন্ধু পরিবারের যতজন শহীদ হয়েছেন, প্রত্যেক খুনীকে ততবার ফাঁসি দেয়া উচিত। জনসমৰে তাদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা উচিত ছিল। এ কথা বলে সিএনজি চালিয়ে চলে গেলেন মোসত্মফা। পাশের চা দোকানেও একই আলাপ। দোকানের সামনে যাত্রীর অপোয় আছেন রিকশাচালক (রেজিঃ ৫৩২০৫) হেলাল মিয়া। লালবাগ এলাকায় থাকেন তিনি। প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে হেলাল মিয়া (৪০) বলেন, শেখ সাহেব ভাল মানুষ ছিলেন। তাঁর খুনীদের ফাঁসিতে শুধু আমি নই, সকলেই খুশি হবে। অনেক আগেই খুনীদের শেষ করে দেয়া উচিত ছিল বলে তিনি মনে করেন।
শাহবাগ এলাকা। পাবলিক লাইব্রেরির মূল গেটের বাইরে ফুটপাথে চা বিক্রি করছেন মোঃ হাবিব (৩৫)। আজিমপুর এলাকায় থাকেন তিনি। খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার খবর তিনিও জানেন। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, খুনীদের কে মা করবে ? যারা মানুষ খুন করে, তাদেরকেও একইভাবে মরতে হয়। ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় মনে শানত্মি লাগছে বলে তিনি জানান। কাঁচাবাজারেও ফাঁসির আলাপ। হাতিরপুল বাজারে কাঁচাবাজার করতে এসেছেন ভূতের গলির ১১/৩৪ হোল্ডিংয়ের বাসিন্দা গৃহিণী খোদেজা (৪৩)। তিনি বলেন, পাপ কাউকে মা করে না। যারা অন্যের প্রাণভিা গ্রহণ করেনি, তাদের প্রাণভিা ফিরিয়ে দিয়ে সঠিক সিদ্ধানত্ম নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় উৎফুলস্ন তিনি। কোন পেশার মানুষের কাছ থেকেই সহানুভূতি পায়নি খুনীরা। ফার্মগেট হলিক্রস কলেজের সীমানা দেয়ালের ফুটপাথ থেকে পরিত্যক্ত জিনিস সংগ্রহ করছে দশ বছরের শিশু টোকাই সেলিম। কাঁধে ঝোলানো পস্নাস্টিকের খালি বসত্মা। খুনীদের সমর্থন করতে নেই বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সে। তেজগাঁও রেলগেটের সামনে হাশেম আলীর মুদি দোকান। ক্রেতা না থাকায় পত্রিকা পড়ছেন মনোযোগ দিয়ে। সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই খুনীদের পরিণতির কথা বলতে লাগলেন তিনি। পত্রিকা পড়তে পড়তে বলতে লাগলেন, মরে গিয়ে খুনীরা মানসিক যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেয়েছে। কিনত্মু অভিশপ্ত জীবন রেখে গেছে তাদের পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজনদের জন্য। পলাতক ৬ খুনীর ব্যাপারে তিনি বলেন, পালিয়ে বেঁচে থেকে তাদের লাভ নেই। ফাঁসিতে ঝুলে মরার চেয়ে বেশি যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে পলাতকদের। খুনীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে কেউ তাদের অপরাধের ভাগীদার হতে চাইবে না বলে তিনি মনে করেন। ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় ধিক্কার প্রকাশ করেছে দেশের চিকিৎসক সমাজ। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. রাকিবুল ইসলাম লিটু। তিনি বলেন, দেরিতে হলেও খুনীরা তাদের প্রাপ্তি ভোগ করেছে। ফাঁসি কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে যে, অপরাধীদের শাসত্মি হয়। বাকি ছয় খুনীকেও একই শাসত্মি ভোগ করতে হবে বলে তিনি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। খুনীদের ফাঁসিতে উলস্নাস প্রকাশ করতে ভোলেনি আদিবাসীরাও। বৃহস্পতিবার ইসলামিয়া চু হাসপাতালে স্ত্রী রাখি মানখিনকে পরীা করাতে এসেছেন কমল রেমা। গুলশান থানার কালাচাঁদপুরে একটি বেসরকারী কোম্পানিতে কাজ করেন তিনি। বুধবার রাতেই তিনি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ফাঁসি দেয়ার খবর শুনেছেন। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার প্রতিবাদে কাদের বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন শত শত গারো আদিবাসী। প্রতিবাদ করায় তাদেরকে অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। খুনীদের ফাঁসি হওয়াতে শুধু আমি নই, সমগ্র আদিবাসী সমাজ আজ খুবই খুশি বলে তিনি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের ফাঁসিতে এভাবে সব শ্রেণী পেশার মানুষ সনত্মোষ প্রকাশ করেন।

No comments

Powered by Blogger.