গ্রামে গ্রামে ঘুরে শিক্ষার প্রকৃত চিত্র দেখছেন শিক্ষামন্ত্রী- সিলেটে ব্যতিক্রমী সফর সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলছি, ভালমন্দ দুটোই বলছেন তাঁরা

দেশের শিক্ষায় ইতিবাচক পরিবর্তনের ধারা সূচিত করে এবার মফস্বলের শিক্ষার উন্নয়নের প্রকৃত অবস্থা দেখতে গ্রামে গ্রামে ঘুরে খোঁজখবর নিচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ লক্ষ্যে তিনি প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সিলেটে অবস্থান করছেন।
গ্রামে গ্রামে ঘুরে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষার প্রকৃত চিত্র দেখছেন এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষার সমস্যা চিহ্নিত করছেন। ব্যতিক্রমী এ সফরের ষষ্ঠ দিনে শনিবার সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে শীতকালীন জাতীয় স্কুল ও মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেছেন। এ সময়ে তিনি ঢাকায় এমপিওর দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সরে আসার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, আর্থিক সীমাবদ্ধতায় এখনি সকল প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা সম্ভবপর নয়। তবে এটি চলমান প্রক্রিয়া। পর্যায়ক্রমে এমপিও করা হবে। শিক্ষার উন্নয়নে একজন মন্ত্রীর এভাবে গ্রামে গিয়ে কাজ করার ঘটনা বিরল। আগামী ১৬ জানুয়ারি শেষ হবে মন্ত্রীর ব্যতিক্রমী এ সফর।
শনিবার রাতে এ সফর সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী তাঁর সেলফোনে জনকণ্ঠকে বলেছেন, আমি প্রায়ই সময়ে পেলে গ্রামে আসি, এলাকায় আসি। মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যা, ভাল-মন্দ জানান চেষ্টা করি। এবার একটু ব্যতিক্রম যে দীর্ঘ সময় নিয়ে মফস্বলে এসছি। আমি প্রতিদিন সকাল থেকে অনেক রাত পর্যন্ত বিভিন্ন স্কুল-কলেজে যাচ্ছি। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলছি। তাঁদের কথা শুনছি। তাঁরা ভালও যেমন বলছেন আবার আমার সমালোচনা, মন্দ যা তাও তাঁরা বলছেন। এতে আমি আমার সঠিক কাজটা করার পথ খুঁজে পাই। মানুষ আমাকে পেলে তাঁদের নানা সমস্যা তুলে ধরছেন। আমি সব সমাধান করে ফিরতে পারছি তা নয়, তবু এটা করণীয় বের হচ্ছে। আমি তো সাধারণ মানুষেরই একজন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে অনেক কিছু জানতে পারছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেবল সমস্যা নয়, কোথায় সরকারের কোন্্ কাজটা ঠিকভাবে হচ্ছে বা হচ্ছে না তাও দেখার চেষ্টা করছি। আমার পার্টির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছি। তাঁরা তাদের পরামর্শ আভযোগ যাই করছেন তাও তো আমার চলার পথকে এগিয়ে দিচ্ছে। মন্ত্রী আরও বলেন, শিক্ষা ছাড়াও গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন কাজ দেখছি। যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর কি অবস্থা, কোথাও কোন সমস্যা আছে কিনা সকল বিষয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলছি। শুক্রবার দুই ঘণ্টা নৌকায় করে সেই হাকালুকি হাওরের এলাকায় গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমার কাছে তাদের অভাব-অভিযোগ যেমন করছেন আবার ভালও বলছেন। আগামী ১৬ তারিখ পর্যন্ত এবারের সফরে এভাবে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। জানা গেছে, গত ৭ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে দুপুরেই মন্ত্রী চলে যান সিলেটে। বিমান থেকে নেমেই মাঠ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সোজা চলে যান ফুলসাইন্দ গ্রামে। সেখান তিনি ফুলসাইন্দ দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫০ বছরপূর্তি উৎসবে সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এখান থেকেই শুরু করেন তাঁর কাজ। এভাবে প্রতিদিন ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছেন, লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন এবং শিক্ষার চিত্র ও উন্নয়নের প্রকৃত অবস্থা নিজ চোখে দেখছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যাচ্ছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এছাড়া শিক্ষার বাইরেও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন তিনি। কথা বলে জানা গেল, এবার একটানা দীর্ঘ সময় থাকলেও ঘুরে ঘুরে মফস্বলের অবস্থা দেখা তাঁর নতুন কোন ঘটনা নয়। ঢাকায় প্রচ- ব্যস্ততার মধ্যেও সময় বের করে তিনি প্রায়ই গ্রামে চলে যান। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা এমনকি একেবারে তৃণমূলের শিক্ষাঙ্গনেও চলে যান শিক্ষামন্ত্রী। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও উন্নয়ন কার্যক্রম কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে তা সরেজমিন দেখার জন্য ঢাকা ও ঢাকার বাইরের প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন তার জন্য একেবারে নতুন নয়। এছাড়াও শিক্ষাক্ষেত্রে কোন ধরনের অঘটনের খবর পেলেই তিনি ছুটে যান ঘটনাস্থলে। কোথাও কোন শিক্ষার্থী নির্যাতিত বা আক্রান্ত হলে, কোন সমস্যা হলে সচিবালয়ে মন্ত্রীর অফিস ছেড়ে তিনি ছুটে যান নির্যাতিতের কাছে। শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর এমন অসংখ্য ঘটনায় তিনি প্রশাসনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতিবেদনের অপেক্ষা না করে নিজেই ছুটে গেছেন ঘটনাস্থলে। নির্যাতিতাকে সান্ত¡না দিয়েছেন যেমন, তেমনি স্থানীয় প্রশাসনকেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি স্থানীয় মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেছেন সে অপকর্মের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াতে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান অবকাঠামো কার্যক্রমে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করছেন তিনি। সচিবালয়ে দৈনন্দিন দাফতরিক কাজ শেষে যে সময় পাচ্ছেন, তা তিনি শিক্ষার উন্নয়নে ব্যয় করছেন। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সফরের সপ্তম দিনে আজ সকাল ৯টায় গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘা ইউনিয়নের উদ্দেশে যাত্রা করবেন মন্ত্রী। ১০টায় কালাকোনা-রামগঞ্জ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ১১টায় গোলাপনগর সরকারী প্রাথকি বিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। সাড়ে ১১টায় উত্তর গোলাপনগর কালাচাঁদ মন্দির পরিদর্শন করবেন। ১২টায় বাঘা-২ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে দেড়টায় দক্ষিণ বাঘা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। এছাড়া ৩টায় হেকিম আলী রেজিস্টার্ড বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৪টায় তুড়ুকবাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি অংশ নেবেন। আগামীকাল সোমবার সকালে বিয়ানীবাজারে প্রযুক্তি সম্প্রসারণ বিষয়ে একটি সেমিনারে অংশগ্রহণ শেষে সাড়ে ১১টায় দক্ষিণ মড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করে একটি সুধী সমাবেশে অংশ নেবেন। পরদিন মঙ্গলবার গৌরিনাথ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত মেলার উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী। ১২টায় সাচান চক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। আগামী বুধবার বেলা সোয়া ২টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন তিনি। এই সময়ের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষা ছাড়াও নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেবেন।

No comments

Powered by Blogger.