শাহজালালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং-বিদেশি প্রতিষ্ঠান নয়, বিমানের কাছেই থাকছে by বিপ্লব রহমান

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্রী পরিষেবার (গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং) কাজ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার চিন্তা বাতিল করে দিয়েছে সরকার। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস থেকে কাজটি ফেরত নিয়ে বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার বিষয়ে সম্প্রতি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিভিল এভিয়েশন) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল।
তবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সব দিক বিবেচনা করে সরকার শাহজালালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ বিমানের কাছেই রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খবরটি নিশ্চিত করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনবিষয়ক মন্ত্রী ফারুক খান। যোগাযোগ করা হলে তিনি গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শাহজালাল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ বিমানের কাছেই থাকছে। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে এই কাজ দেওয়া হচ্ছে না। বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলবে।'
সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি দুবাইভিত্তিক এপোজি অপারেশন্স লিমিটেড (অল), অ্যাসোসিয়েটস সার্ভিসেস এক্সপার্টাস (এএসসি), ডানাটা, সিঙ্গাপুরভিত্তিক স্যাটস ও সিআইএস প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান শাহজালালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায়। সবশেষ বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ সাত দফা দাবিতে সম্প্রতি সিবিএর নেতৃত্বে বিমানকর্মীদের আকস্মিক ধর্মঘটে গত মঙ্গলবার তাঁরা শাহজালাল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাঁচ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখেন। ফলে অচল হয়ে পড়ে বিমানবন্দরের ফ্লাইট ওঠানামা। যাত্রী দুর্ভোগও ওঠে চরমে। চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরও একইভাবে অচল হয়ে যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিনই বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিভিল এভিয়েশন) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দেওয়া এক চিঠিতে বিমানকে বাদ দিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার অনুরোধ জানায়।
বিমানের সিবিএ সভাপতি মশিকুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিমান বাদে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে শাহজালাল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ দেওয়া হবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। এর পরও এই চেষ্টা করা হলে তা যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করা হবে।'
ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরের পর ১৯৮০ সালে কুর্মিটোলায় প্রতিষ্ঠা করা হয় দেশের ওই প্রধান বিমানবন্দর। তখন থেকেই বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করে আসছে জাতীয় পতাকাবাহী বিমান। এ বিমানবন্দরে ১৯টি এয়ারলাইনসের প্রতিদিন অন্তত ১৮৫টি ফ্লাইট ওঠানামা করে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং থেকে বছরে বিমানের আয় হয় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। সূত্র মতে, বিভিন্ন সময় প্রভাবশালী একাধিক মহল শাহজালালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ বিমান বাদে অন্য প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলেও একবার এমন চেষ্টা হয়েছিল। সে সরকারের সাবেক এক মন্ত্রীর পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দিতে তোড়জোড়ও শুরু হয়। সে সময় বিমান শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) আন্দোলনের মুখে সরকার ওই সিদ্ধান্ত বাতিল করে।

No comments

Powered by Blogger.