বাহরাইনে আগুনে পুড়ে ১১ বাংলাদেশির মৃত্যু

বাহরাইনের রাজধানী মানামায় আগুনে দগ্ধ হয়ে ১৩ জন প্রবাসী কর্মী মারা গেছেন। এঁদের মধ্যে ১১ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁরা সবাই বাংলাদেশি। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাহরাইনের বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকেলে মানামার মুখারকা এলাকার তিনতলা একটি ভবনে আগুন লাগলে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। উপমহাদেশের শ্রমিকেরা গাদাগাদি করে ওই ভবনে থাকতেন, যাঁদের বেশির ভাগই বাংলাদেশি।
মৃত ব্যক্তিরা হলেন: চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর চরখিজিপুর এলাকার শাকির আহমেদের ছেলে নাজির আহমেদ, পটিয়ার পাথুয়া গ্রামের মাহবুব আলমের ছেলে রশিদ আহমেদ, মারিয়া এলাকার আবদুল আজিজের ছেলে জামাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার গোয়ালী গ্রামের আবু নাসির মিয়ার ছেলে জসিম, কাইতলার শহীদ মিয়ার ছেলে সাইফুল ইসলাম ওরফে সুজন ও স্বপন, গুড়িগ্রামের আবুল বাশারের ছেলে আনোয়ার হোসেন ও খড়িয়ালা গ্রামের চান মিয়ার ছেলে জারু মিয়া, চাঁদপুরের কচুয়ার নওয়াপাড়ার আলমের দুই ছেলে শাহাদাত ও টিটো মিয়া এবং নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর কাশীপুর এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে ওসমান গনি।
বাহরাইনের বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মহিদুল ইসলাম এই ১১ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মৃতদের মরদেহ বাহরাইনের বাদশা হামাদ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ২৭ মে বাহরাইনের পূর্ব রিফা এলাকার একটি ভবনে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে সৃষ্ট আগুনে দম বন্ধ হয়ে ১০ বাংলাদেশি মারা যান।
এ ছাড়া ২০০৬ সালে গুদাইবিয়া এলাকায় আগুনে পুড়ে মারা যান ১৬ বাংলাদেশি। এ ছাড়া গত বছরের ২৭ মে আগুনে পুড়ে ১০ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়।
মহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুক্রবার বিকেলে আগুন লাগার খবর পেয়েই আমরা ঘটনাস্থলে যাই। অনেক রাত পর্যন্ত আমরা সেখানে ছিলাম। কিন্তু ভবনটি ধসে যাবে আশঙ্কায় ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আমাদের দূরে সরিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর সত্যি সত্যি ভবনটি ধসে পড়ে। ওই ভবনটি ভাড়া নিয়েছিল পাকিস্তানিরা। তবে অনেক বাংলাদেশিও সেখানে থাকতেন।’
বাহরাইনের প্রধানমন্ত্রী প্রিন্স খলিফা বিন সালমান আল খলিফা এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। বাহরাইনের সিভিল ডিফেন্সের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক দেশটির গণমাধ্যমকে জানান, স্থানীয় সময় পৌনে চারটার দিকে তিনতলার ভবনটিতে (শ্রমিক ক্যাম্প) আগুন লাগে। ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি ধসে পড়ে। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মীও গুরুতর আহত হয়েছেন।
বাহরাইনের গালফ ডেইলি নিউজ জানিয়েছে, ভবনের ২৬টি কক্ষে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের শ্রমিকেরা থাকতেন।
গণমাধ্যম বলছে, ওই ভবনটি অবৈধভাবে করা হয়েছিল এবং সেখানে যেসব প্রবাসী থাকতেন, তাঁদের বেশির ভাগেরই সুনির্দিষ্ট কোনো কোম্পানির কাজ ছিল না। ফলে তাঁরা যখন যেখানে ভালো সুবিধা পেতেন, সেখানেই কাজ করতেন।
মৃত ব্যক্তিদের লাশ খুব শিগগির দেশে আনা হবে বলে জানিয়েছেন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিচালক (কল্যাণ) মুহসিন চৌধুরী। গতকাল রাতে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই ঘটনা হূদয়বিদারক। আমরা দূতাবাসের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। মৃতরা যে কোম্পানিতে চাকরি করতেন, সেখানে তাঁদের বেতন বকেয়া রয়েছে কি না, কত ক্ষতিপূরণ পাবেন—এই বিষয়গুলোর ব্যাপারেও আমরা খোঁজখবর করছি।’

No comments

Powered by Blogger.