বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলা

বৃহস্পতিবার সকালে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসিবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর বহিরাগতদের হামলায় ক্যাম্পাসে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। জানা গেছে, একটি ছাত্র সংগঠনের নামধারী বহিরাগত সন্ত্রাসীরা আন্দোলনকারীদের ‘দুর্নীতিবিরোধী মঞ্চ’, মাইক ও ব্যাটারি ভাংচুর করে এবং শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করে।
এ সময় ব্যাটারির এ্যাসিড ছিটকে পড়ে দুই শিক্ষকের চোখ ও মুখ ঝলসে যায়। আহত অবস্থায় দুই শিক্ষককে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলায় বেশ কয়েকজন শিক্ষক জখম হয়েছেন। এই ঘটনার পর দুপুরের দিকে ক্যাম্পাসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ঘটনার সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার রাতে ভিসি অনির্দিষ্টকালের জন্য রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে তীব্র উত্তেজনা বজায় ছিল। শিক্ষকদের ওপর হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিগত কয়েক বছর ধরে দেশে বেশ কিছু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে সর্বক্ষণিকভাবে শান্তিশৃঙ্খলা ও শিক্ষার পরিবেশ বজায় থাকে, তা দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে এসব বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষার সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশে প্রায় সব সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক সুবিধাসহ নানাবিধ রয়েছে। তাই মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও সাধারণ মানুষের সন্তানরা এখানে পড়ার সুযোগ পায়।
উন্নত দেশগুলোতে উচ্চশিক্ষা খুবই ব্যয়সাপেক্ষ। সেই তুলনায় বাংলাদেশে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষার খরচ এখনও সাধ্যের মধ্যে। বিষয়টি অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ধরনের দুর্নীতি, অনিয়ম, সন্ত্রাস ও সহিংসতার কারণে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের সব কল্যাণকর উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়ছে। এটা কেন হবে? সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, রাজনৈতিক দল সমূহ, শিক্ষক ও ছাত্রসমাজ যদি সচেতন হয় তবে উচ্চশিক্ষার অঙ্গন থেকে যাবতীয় সন্ত্রাস ও অনিয়ম দূর করা তেমন কঠিন কিছু নয়। সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় চলে এদেশের জনগণের কষ্টার্জিত অর্থে। তাই উচ্চশিক্ষার অঙ্গনে অস্থিরতা সৃষ্টি করার অধিকার কারও নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতি এখন অনেকাংশেই অছাত্রদের হাতে চলে গেছে। এরা অনেকেই ছাত্র নয়, বহিরাগত সন্ত্রাসী। এবার রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার সঙ্গেও জড়িত আছে বহিরাগতরা। তবে এদের কেউ কেউ একটি ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনের নাম ব্যবহার করছে। পত্রিকাতেও খবরটি প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়ে সঠিক তদন্ত করা উচিত। বহিরাগতদের পরিচয় ও উদ্দেশ্য খুঁজে বের করা দরকার। একই সঙ্গে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কোন শিক্ষকের কর্মকা- নিয়েও অনেক প্রশ্ন উঠেছে। সরকার নিয়োজিত ভিসির বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতিবিরোধী মঞ্চ’ গঠন করল কি উদ্দেশ্যে? অভিযোগ থাকলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে জানানো যায়। পড়াশোনার পরিবেশে বিঘœ হোক, ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার মূল্যবান সময় ব্যাহত হোক. এমন কোন কিছু করা কারও জন্যই মঙ্গল নয়।

No comments

Powered by Blogger.