কোচদের সঙ্গে নাটকীয় চুক্তি

সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছিল বেলা ২টায়। সেটি শুরু হলো ঠিক দুই ঘণ্টা ১৫ মিনিট পর। মাঝে খবর রটে, দুই পক্ষের আলোচনা ভেঙে গেছে। চুক্তি হচ্ছে না।
‘বিয়ে’ ভেঙে গেলে যা হয়, ঠিক তেমন আবহ। দুই কোচ বাইরে নিজেরা কথা বলছেন। ভেতরে আলোচনা করছেন বাফুফের কর্মকর্তারা। ভবনের দোতলায় তখন কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। যেন কারফিউ চলছে! থমথমে পরিবেশ। এক কর্মী গেট লাগিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। কী রোমাঞ্চ! এই দৃশ্য বাংলাদেশের ফুটবলে আগে কখনো দেখা যায়নি। নশেষ পর্যন্ত দুই পক্ষ সংবাদ সম্মেলনে এল খুশি মনেই। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন ঘোষণা করলেন, ‘দুই কোচের সঙ্গে আমরা একটু আগে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি। আগামী সেপ্টেম্বরে সাফ ফুটবল সামনে রেখে জুন থেকে তাঁরা কাজ করবেন। দুই বছরের চুক্তি। তবে মার্চের শুরুতে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে তিন সপ্তাহ কাজ করতে ওদের অনুরোধ করেছি।’
হাঁফ ছেড়ে বাচল সবাই! যাক, নাটকের অবসান হলো! তবে প্রশ্ন উঠল, সমঝোতা স্মারক নাকি পূর্ণাঙ্গ চুক্তি? সালাউদ্দিন পরিষ্কার করলেন, ‘মূল চুক্তিই করেছি আমরা। এখন দুই পক্ষের আইনজীবীর সই-স্বাক্ষরের ব্যাপারটাই শুধু বাকি। সেটিও কয়েক দিনের মধ্যেই হবে।’
আইনজীবীদের সঙ্গে কথাবার্তা চালাচালি নিয়েই মূলত কাল সংবাদ সম্মেলনে আসতে দেরি হয়েছে দুই পক্ষের। বাংলাদেশ জাতীয় দলের ১৬তম বিদেশি কোচ হিসেবে সদ্য নিয়োগ পাওয়া লোডভিক ডি ক্রুইফ দফায় দফায় আমস্টারডামে তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। জাতীয় দলে তাঁর সহকারী এবং বাফুফের একাডেমির প্রধান কোচ রেনে কোস্টার ব্যস্ত ছিলেন একই কাজে। একই সঙ্গে চুক্তির নানাদিকও ছিল চূড়ান্ত আলোচনায়।
পেশাদারদের দুনিয়াটাই এমন। চুক্তির আগে সব ঠিক করে নেওয়াই নিয়ম। বাফুফে এমন ‘পেশাদার চুক্তি’ আগে করেনি। তাই দুই ডাচ কোচের সঙ্গে সব বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছাতে গত পাঁচ দিনে হাজার রকম বিপত্তি সামলাতে হয়। এত দিন বাফুফে কোচ নিত জীবনবৃত্তান্ত দেখে। এবার ওটা ছিল গৌণ ব্যাপার।
এর সঙ্গে যোগ করুন, দুজনই ডাচ কোচ। ডাচ ফুটবল মানেই একটা রোমাঞ্চ, যা বাংলাদেশের ফুটবলেও ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন ডি ক্রুইফ। সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে এই চুক্তিতে আমরা খুব খুশি।’ কোস্টারের কথা, ‘এটা আমাদের অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।’
চ্যালেঞ্জ তো বটেই। আর দুই কোচকে পেতে বাফুফেকে ঝরাতে হয়েছে অনেক ঘাম। আর্থিক ব্যাপারটা তো ছিলই, একই সঙ্গে ঢাকায় পরিবার নিয়ে থাকা-খাওয়া, বাসস্থান, সন্তানদের স্কুল, চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়েও সমঝোতায় পৌঁছাতে হয়েছে।
ফ্ল্যাট, গাড়ি, বোনাস, স্বাস্থ্যবিমা, বিজ্ঞাপন বাবদ টাকা, জাতীয় দলের প্রতিপক্ষের খেলা দেখতে যেতে আগাম টিকিট, পরিবারের জন্য বাড়তি বিমান টিকিট, এসবের পাশাপাশি বাবুর্চিও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে আগেই। দুই বছরে চুক্তির আর্থিক মূল্য আট কোটি টাকার মতো।
কোচ নিয়োগই যখন দেওয়া হলো, জুন থেকে কেন? কারণ ডি ক্রুইফ যুক্ত আছেন ডাচ ক্লাব পিএসভি আইন্দহোফেনের সঙ্গে, রেনে আয়াক্সের একাডেমির সঙ্গে। জুন নাগাদ তাঁরা মুক্ত হবেন। ফেব্রুয়ারি-মার্চে তিন সপ্তাহ কাজ করতে বাফুফে সভাপতির অনুরোধ প্রসঙ্গে ডি ক্রুইফ বললেন, তাঁর আশা, আসতে পারবেন।’
সংবাদ সম্মেলন শেষ। বাফুফের জাতীয় টিমস কমিটির প্রধান কাজী নাবিল আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সালাউদ্দিনের কণ্ঠে স্বস্তি, ‘উফ্, একটা কঠিন সময় গেল!’

চুক্তি
মেয়াদ: ২ বছর
পাবেন ফ্ল্যাট, গাড়ি, বোনাস, স্বাস্থ্যবিমা বিজ্ঞাপন বাবদ টাকা, জাতীয় দলের প্রতিপক্ষের খেলা দেখতে যেতে আগাম টিকিট, পরিবারের জন্য বাড়তি বিমান টিকিট। দুই বছরে চুক্তির আর্থিক মূল্য আট কোটি টাকার মতো।

No comments

Powered by Blogger.