ভৈরব বিদ্যুত কেন্দ্র বাস্তবায়ন এখন অনিশ্চিত- অর্থের সংস্থান করতে পারেনি কাজ পাওয়া কোম্পানি

সরকারের অনুমোদনের প্রায় এক বছর পরও ভৈরব ৫৪ দশমিক ৫ মেগাওয়াট আইপিপি বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য অর্থসংস্থান করতে পারেনি কাজ পাওয়া কোম্পানিটি।
রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ভৈরব সফরের সময় সেখানে একটি ৫০ থেকে ১০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতির প্রতিশ্রুতি পূরণে বিদ্যুত বিভাগ উদ্যোগ নিলেও দরদাতা কোম্পানির ব্যর্থতায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, আইপিপি বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য ৭০ ভাগ বৈদেশিক ঋণ সংগ্রহের বিধান রয়েছে। যার সুদের হার হতে হবে সাড়ে চার ভাগের মধ্যে। কিন্তু উদ্যোক্তা কোম্পানি সাড়ে ছয় ভাগ সুদে ঋণ সহায়তা পাওয়ার কথা জানিয়েছে বিদ্যুত বিভাগকে। বিনিয়োগ বোর্ডের তরফ থেকে বলা হচ্ছে এত বেশি সুদের হারে ঋণ গ্রহণ যুক্তিসঙ্গত হবে না। এতে বিদ্যুতের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি পড়বে। যা আইপিপি বিদ্যুত কেন্দ্রের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে না।
বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুল হকের সভাপতিত্বে গত বৃহস্পতিবার বিদ্যুত বিভাগ রাষ্ট্রপতির প্রতিশ্রুত বিদ্যুত কেন্দ্রটির অগ্রগতি নিয়ে বৈঠক করেন। এতে বিদ্যুত সচিব মনোয়ার ইসলাম, পিডিবির চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব খানসহ উদ্যোক্তা কোম্পানির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠক সূত্র জানায়, উদ্যোক্তা কোম্পানিটি বৈঠকে সাড়ে চার ভাগ সুদের হারে ঋণ সহায়তা না পাওয়ার বিষয়টি আবারও সরকারকে জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ২০১০ সালের ২৪ অক্টোবর ভৈরব সফরকালে সেখানে একটি ৫০ থেকে ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিদ্যুত বিভাগকে নির্দেশনা দেয়া হয়। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নীতিগত সম্মতি দেয়ার পর কেন্দ্রটি স্থাপনের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। যাতে তিনটি কোম্পানির দর প্রস্তাব যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। এরমধ্যে কনসোর্টিয়াম অব এটকেন স্পেন্স পিএলসি এ্যালায়েন্স হোল্ডিংস লিমিটেড সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচিত হয়। কোম্পানিটি প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ১২ দশমিক ৭৮ সেন্ট দর প্রস্তাব করে, যা স্থানীয় মুদ্রায় ৯ দশমিক ৩৭ টাকা। গত বছর ২৯ জানুয়ারি সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি প্রস্তাবটি অনুমোদন করেন।
সূত্র জানায়, গত বছর ২০ মার্চ পিডিবির তরফ থেকে এলওআই ইস্যু করার সময় কোম্পানিটিকে জানানো হয়, এ ধরনের বিদ্যুত কেন্দ্রর জন্য ৭০ ভাগ বৈদেশিক ঋণ সংগ্রহ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যার সুদের পরিমাণ হতে হবে সাড়ে চার ভাগের মধ্যে। যা চুক্তি স্বাক্ষরের আগেই উদ্যোক্তার যোগাড় করতে হবে। পিডিবির চিঠির প্রেক্ষিতে একই বছর ২৬ মার্চ কোম্পানিটি এক চিঠিতে পিডিবিকে জানায়, বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণের আর্থিক প্রস্তাবে ৭০ ভাগ বৈদেশিক ঋণ সংগ্রহের বিষয়টি ছিল না। কাজেই তাদের অর্থসংস্থানের সময়সীমা অতিরিক্ত তিন মাস বৃদ্ধি করতে হবে। পিডিবি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে বাণিজ্যিক উৎপাদনের সময়সীমা ঠিক রেখে কোম্পানির অর্থসংস্থানের সময় পাঁচ মাস বৃদ্ধি করে। এরপর গত বছর ১১ জুলাই আইন মন্ত্রণালয়ের ভ্যাটিং পাওয়ার পর গত ৮ আগস্ট চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্ত কোম্পানিটি অর্থসংস্থান না করতে পারায় চুক্তি স্বাক্ষর বা বৈদেশিক ঋণ সংস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি। এ বিষয়ে গত অক্টোবর এবং নবেম্বরে আরও দুই দফা বৈঠক করা হয়।
বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এখন কোম্পানিটি বৈদেশিক ঋণের বদলে স্থানীয় ঋণ সংগ্রহের চেষ্টা করছে বলে আমাদের জানিয়েছে। কিন্তু স্থানীয় ঋণের সুদের হার আরও বেশি। এ অবস্থায় বিদ্যুতের দাম আরও বেশি পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যাতে বিদ্যুত কেন্দ্রটির বাস্তবায়ন এখন অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.