যুদ্ধের কাছে প্রেমের হার...

মানবজমিন ডেস্ক: অনেকটা প্রথম দেখায় প্রেমের মতো ঘটনা। দু’জনের মধ্যে সাক্ষাতের মাত্র এক সপ্তাহের মাথায় বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে প্রেমকে স্থায়ী রূপ দিয়েছেন সিরিয়ার তরুণ জুটি মাহমুদ আল কাসাব ও আয়ত আল কাসাব। এখনও খেলার বয়স পার হয়নি মাত্র ১৮তে পা দেয়া আয়াতের। নিজের বিয়ের দিনের সাজে সাজতেন খেলাচ্ছলে। দু’জনের স্বপ্ন ছিল স্বৈরশাসক মুক্ত সিরিয়া দেখার। ফলে পার্টটাইম যোদ্ধা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছিলেন মাহমুদ। আর তার প্রেয়সী আয়ত। নারীদের যুদ্ধ করা এখনও সুযোগ না থাকায় স্বামী ও ভাইদের দিয়ে আসছিলেন উৎসাহ। অন্যরা যখন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে দেশ থেকে পালাচ্ছিলেন আয়াত ও তার স্বামীর পরিবার তখন দেখতে শুরু করেন স্বাধীন এক সিরিয়ার স্বপ্ন। পালানোকে ঘৃণা করে রয়ে যান দেশে। এরই মধ্যে নিজেদের প্রথম সন্তানের আগমন গণনা শুরু করেন চটপটে আয়াত ও মাহমুদ। এমন সময় একদিন বোমার আঘাতে একহাতে মারাত্মক ক্ষত হয় আয়াতের। মাহমুদ সিএনএনকে বলেছেন, তখনই বুঝতে পারি আর বেশি দিন হাতে নেই প্রেয়সীর। এ যাত্রায় বাঁচলেও পরেরবার হয়তো প্রিয়তমাকে আর বাঁচানো যাবে না ঘাতক সরকারি বাহিনীর হাত থেকে। ঠিক এক সপ্তাহ পর তার আশঙ্কা সত্যে পরিণত হলো। বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল অন্তঃসত্ত্বা আয়াতের পুরো শরীর। নিজ হাতে অনাগত সন্তানসম্ভবা প্রিয়তমাকে কবর দিতে হলো স্বামী মাহমুদকে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ যত দীর্ঘ হচ্ছে ততই এভাবে প্রিয়তমা স্ত্রীকে হারাচ্ছেন নতবিবাহিত স্বামী। প্রেমিককে হারাচ্ছেন নবজীবনে প্রবেশের প্রত্যাশায় দিনগুনতে থাকা প্রেমিকা। অবশেষে স্রষ্টার কাছে নিহতদের শহীদি মর্যাদা লাভের প্রার্থনা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না আপনজন হারানোদের। যেমনটি বলছিলেন আয়াতের মাহমুদ ও মা আয়শা। এভাবে দীর্ঘ হচ্ছে স্বজন হারানোর লাইন। ইউনসেফের মতে সরাসরি ২৫ লাখ মানুষ ভুক্তভোগী হচ্ছেন সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের। যার মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪০ হাজারের বেশি মানুষ। এর মধ্যেও বেসামরিক মানুষ বেশি। যার উল্লেখযোগ্য অংশ আবার নারী ও শিশু। এভাবে দিনের পর দিন শূন্য হচ্ছে কোন নবপরিণীতার বুক। স্ব্বামী হারাচ্ছেন প্রিয়তাম স্ত্রী। পিতামাতা হারাচ্ছেন বহু কষ্টে লালন-পালন করা সন্তান। তবুও ন্যূনতম ছাড় দিতে রাজি হচ্ছে না প্রেসিডেন্ট আসাদ ও তাকে সরানোর জন্য লড়াইরত বিদ্রোহীরা।

No comments

Powered by Blogger.