শিক্ষকদের প্রাণনাশের হুমকি- ছাত্রলীগের ফের হামলা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ফের হামলা চালিয়েছেন। এতে ২৫ জন শিক্ষক আহত হয়েছেন। এদিকে ক্লাস ও পরীক্ষা চালু না করলে প্রাণনাশের হুমকির মুখে আজ রোববার থেকে ক্লাসে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষকেরা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ক্লাস ও পরীক্ষা চালুর দাবিতে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে সচেতন শিক্ষার্থীদের ব্যানারে সাধারণ শিক্ষার্থীরা গণ-অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। বেলা ১১টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। সোয়া তিনটায় তাঁরা অবরোধ প্রত্যাহার করেন। এ সময় প্রধান ফটকের দুই পাশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।
সড়ক অবরোধ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির ব্যানারে আন্দোলনরত প্রায় ৪০ জন শিক্ষক মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভেতর শিক্ষক লাউঞ্জে অবস্থান করছিলেন। বেলা পৌনে তিনটার দিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বহিরাগতদের নিয়ে লাঠিসোঁটাসহ অনুষদ ভবনের দিকে আসতে দেখে অনুষদের ফটকে তালা দিয়ে দেন সেখানকার দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মী। বেলা তিনটার দিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তালা ভেঙে ভবনে ঢুকে লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালান। হামলাকারীদের মধ্যে ছিলেন ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি মো. লেলিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ও মো. কাসেম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সজীব, প্রচার সম্পাদক মো. সুমন, ছাত্রলীগের কর্মী রানু, ইলিয়াস, রাসেলসহ প্রায় ২৫-৩০ জন বহিরাগত। পরে শিক্ষকেরা দরজা খুলে দিলে নেতা-কর্মীরা ভেতরে ঢুকে সোফা, টেবিল, পানির বেসিনসহ অন্যান্য আসবাব ভাঙচুর করেন। তাঁরা শিক্ষকদের ওপর চড়াও হলে অন্তত ২৫ জন আহত হন। আহত শিক্ষকেরা হলেন: শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজিবুল হক, এয়াকুব আলী, ইকবাল হোসাইন, মো. লোকমান, রহমান হাবিব, জাহাঙ্গীর হোসাইন, মাহবুবুর রহমান, মো. আশরাফ, মাহবুবর রহমান, রুহুল আমিন ভূঁইয়া, নাসিরুদ্দিন মিঝি, আহসান উল আম্বিয়া, আবদুল লতিফ, মোতালেব হোসেন, গোলাম মাওলা, রাকিব হোসাইন, হোসাইন মো. ফারুকী, বাকিবিল্লাহ বিকুল, মোস্তাফিজুর রহমান ও তারেক আল মামুন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিক্ষকদের ওপর হামলার সময় অনুষদের বাইরে পুলিশ সদস্যরা থাকলেও তাঁদের ভূমিকা ছিল নীরব। ঘটনার সময় কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর প্রশাসন ভবনে উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনা শোনার পর তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকেরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আহত কয়েকজন শিক্ষক এ সময় অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা শিক্ষক লাউঞ্জে অবস্থানের সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালান। তাঁরা লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে আমাদের অনেক শিক্ষককেই আহত করেছেন। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের জোরপূর্বক ক্লাস-পরীক্ষা চালু করার ঘোষণা দিতে বলেন, নইলে তাঁরা আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দেন।’
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মফিজউদ্দিন বলেন, ‘বড় কোনো দাবি আদায় করতে হলে এ ধরনের ছোটখাটো ঘটনা ঘটতেই পারে।’
প্রক্টর এ এইচ এম আক্তারুল ইসলাম বলেন, ‘অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি।’ তবে শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান তুহিন হামলার সঙ্গে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের ন্যক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। বর্তমান উপাচার্য দুর্নীতিবাজ প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার নির্দেশে ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়ে এ হামলা চালিয়েছে। আমরা সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে হামলাকারীদের শাস্তি এবং প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করছি।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নজিবুল হক আজ রোববার থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা চালু হওয়ার ঘোষণা দেন এবং তাঁদের আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করেই আমরা ক্লাসে ফিরে যাচ্ছি। তবে প্রশাসনের কাছে আমাদের দেওয়া পূর্বের দাবিগুলো বহাল থাকবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হাকিম সরকার বলেন, ‘হামলার ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এর আগে গত ১৯ নভেম্বর উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে প্রথম দফায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ।

No comments

Powered by Blogger.