প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফর ॥ পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ ও প্রতিরক্ষা বিষয় প্রাধান্য পাবে

পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক সহায়তার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার তিনদিনের সফরে রাশিয়া যাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ সফরে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ ও প্রতিরক্ষা বিষয়টি। এ সফরে প্রধানমন্ত্রী রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বৈঠক করবেন। ১৪ থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত এ সফরে তিনি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে থাকছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং বিদ্যুত, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার ঋণ সহায়তা নিয়ে এ সফরে আলোচনা হবে। ২০১১ সালের ২ নবেম্বর রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনে রাশিয়ার সঙ্গে ‘সহযোগিতা চুক্তি’ সই করে বাংলাদেশ। ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে তৎকালীন বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং রাশিয়ার পরমাণু শক্তি কর্পোরেশন-রোসাটমের মহাপরিচালক এবং রাশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী সের্গেই কিরিয়েঙ্কো এই চুক্তিতে সই করেন। ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক ও একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এই চুক্তির আওয়তায় রাশিয়ার ঋণ সহায়তায় রূপপুরে ২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এতে ১ হাজার মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট থাকবে। বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে দেড় শ’ থেকে দু’শ’ কোটি ডলার। ওই বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। রাশিয়া এই কেন্দ্রের পুরো সময়জুড়ে জ্বালানি সরবরাহ করবে এবং সবচেয়ে বিপজ্জনক বর্জ্য ফিরিয়ে নেবে।
এর আগে ২০১১ সালের এপ্রিলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির রাশিয়া সফরের সময় রোসাটমের মহাপরিচালক সের্গেই পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দেন। জাপানের ফুকুশিমায় পারমাণবিক বিস্ফোরণের পর বিদ্যুত কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার নিশ্চায়তা দেন তিনি। পাশাপাশি জনমনে আতঙ্ক দূর করতে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ঢাকায় একটি কর্মশালা আয়োজন করার প্রস্তাব দেন সের্গেই।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বে বিভিন্ন আকারের ৪৪৯টি পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র চালু আছে। নির্মাণাধীন আছে আরও প্রায় ৩০টি।
সফরে রাশিয়া থেকে আধুনিক অস্ত্র কেনার বিষয়েও একটি চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে।
রাশিয়া সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মস্কো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে যেতে পারেন এবং সেখানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে পারেন বলে জানা গেছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও বক্তব্য রেখেছিলেন। স্বাধীনতার পর পর ১৯৭২ সালের এপ্রিলে মস্কো সফরের সময় বঙ্গবন্ধু ওই বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেছিলেন। একাত্তরে স্বাধীনতা অর্জনে বাংলাদেশকে অপরিসীম সহায়তা দেয়ার কারণে সেই সময় তিনি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

No comments

Powered by Blogger.