মাওলানা ইউসুফের বিরুদ্ধে গণহত্যা, লুণ্ঠনের প্রমাণ মিলেছে- যুদ্ধাপরাধী বিচার

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতা মাওলানা একেএম ইউসুফের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত সংস্থা চারদিন তদন্ত করে হত্যা, গণহত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরিত করার প্রমাণ পেয়েছে।
তার নেতৃত্বে বৃহত্তর খুলনায় প্রায় ১ লাখ লোককে হত্যা করা হয়। এদিকে ফেব্রুয়ারি মাসে জামায়াত নেতা এটিএম আজাহারুল ইসলাম, হাজী মোবারক ও খোকন রাজাকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। তদন্ত সংস্থা সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পাশাপাশি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিযার কবীর বলেছেন, শুধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নয়, একই সঙ্গে সংগঠক হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকেও বিচার করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ট্রাইব্যুনাল গঠন। ২০১২ সালের ২৫ মার্চ মানবতাবিরোধীদের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। মামলার সংখ্যা বাড়ার কারণে ২০১২ সালের ২৫ মার্চ আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। বর্তমানে দুটি ট্রাইব্যুনালে বিএনপি ও জামায়াতের মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে বিচারকাজ চলছে। তদন্ত সংস্থার প্রধান এমএ হান্নান খান জনকণ্ঠকে বলেছেন, ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা আরও তিনটি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করব। এগুলো হলো জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজাহারুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাজী মোবারক ও ফরিদপুরের খোকন রাজাকার। ইতোমধ্যে এটিএম আজাহারুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হাজী মোবারক জামিনে রয়েছেন।
তদন্ত সংস্থার প্রধান আরও বলেন, তদন্ত দল বাগেরহাটের শরণখোলায় গিয়ে মাওলানা একেএম ইউসুফের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছে। তিনি খুলনা অঞ্চলের শান্তিকমিটির সভাপতি ছিলেন। তিনিই প্রথম রাজাকার সৃষ্টি করেছেন। দ্বিতীয়ত: রাজাকাররা খুলনাতেই বেশি নৃশংসতা চালিয়েছে। খুলনা এলাকাতেই পাক হানাদার বাহিনীর সতায়তা ছাড়া রাজাকাররা হত্যা লুণ্ঠনসহ বিভিন্ন ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ চালিয়েছে। তিনি বলেন, তদন্ত শেষে আমরা তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট প্রদান করব। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) এএসপি মোঃ হেলাল উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেছেন, মাওলানা একেএম ইউসুফের নেতৃত্বে বৃহত্তর খুলনাতে প্রায় ১ লাখ লোককে হত্যা করা হয়েছে, যা বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে এসেছে। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের তেমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে তদন্ত চলছে। তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি চারদিন শরণখোলাসহ বিভিন্ন স্থানে তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, মাওলানা ইউসুফ সব হত্যার সঙ্গেই জাড়িত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, ধর্মান্তরিত করাসহ বিভিন্ন ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে আরও তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রদান করা হবে।
তদন্ত সংস্থা সূত্রে আরও জানা গেছে, মাওলানা একেএম উইসুফ, গ্রাম-রাজৈর, থানা-শরণখোলা, জেলা- বাগেরহাট একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাঁর এই কর্মতৎপরতার অংশ হিসেবে তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মালেক মন্ত্রিসভার সদস্য হন। ১৯৭১ সালের মে মাসে খুলনা জেলায় তিনিই প্রথম রাজাকার বাহিনী প্রতিষ্ঠিত করেন ৯৬ জন জামায়াত কর্মীর সমন্বয়ে। মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই মাওলানা একেএম ইউসুফ খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর নেতা ছিলেন। উল্লেখ্য, বর্তমান দুটি ট্রাইব্যুনালে বিএনপি জামায়াতের মোট ১৪ জনের বিচারকাজ চলছে। এর মধ্যে বিএনপির দু’জন এবং জামায়াতে ইসলামীর ১২ নেতা রয়েছেন। যার মধ্যে আছেন জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আরেক নায়েবে আমির মাওলানা আবদুস সুবহান, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজাহারুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাসেম আলী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী, হাজী মোবারক ও পটুয়াখালীর রুস্তম আলী। এঁদের বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজাহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আগামী ফেব্রুয়ারিতে দেয়া বলে জানা গেছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আটক রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তদন্ত সংস্থার প্রধান এমএ হান্নান খান জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে আরও তিন জনের প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.