শীতের তীব্রতা কমছে, বেড়েছে তাপমাত্রা দশমিক ৮ ডিগ্রী

 দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠছে। শনিবার দশমিক ৮ ডিগ্রী বৃদ্ধি পেয়ে তা ৪.৮ ডিগ্রীতে উন্নীত হয়েছে। তবে সারাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এখনও ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে সীমাবদ্ধ রয়েছে।
শুধু তিনটি এলাকার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রীর সামান্য ওপরে রয়েছে। কৃষিবিদদের তথ্য মতে শীতকালে যেসব ফসলের চাষ হয় তার জন্য উপযোগী তাপমাত্রা হলো ১২ থেকে ২০ ডিগ্রীর মধ্যে। তাপমাত্রা এর নিচে নেমে গেলে অথবা উপরে উঠে গেলে শীতকালীল ফসলের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। অথচ বিগত কয়েকদিন ধরে সারাদেশের ওপর দিয়ে এ ধরনের তাপমাত্রা বিরাজ করছে। শনিবার ঈশ্বরদীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ঢাকার তাপমাত্রা আগেরদিন শুক্রবারের চেয়ে শনিবার দশমিক এক ডিগ্রী পরিমাণ কমে গেছে। শনিবার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭.৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আগের দিন এ তাপমাত্রা ছিল ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তবে ঢাকার ওপর দিয়ে যাওয়া বাতাসের গতিবেগ কিছুটা কমে এসেছে। শনিবার বাতাসের এ গতি ছিল ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এ ছাড়া ঢাকাসহ দেশের কিছু কিছু এলাকায় তাপমাত্রার গড় ব্যবধান বেড়ে যাওয়ায় শীত কমতে শুরু করেছে। তবে শীত এখনও তা সহনীয় পর্যায়ে আসেনি। সহনীয় পর্যায়ে আসতে আরও কয়েকদিন লাগতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় শীতজনিতরোগে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আবহাওয়া অধিদফতরে হিসাবে দেখা গেছে দেশের তিনটি এলাকাবাদে সবগুলো অঞ্চলের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে অবস্থান করছে। দেশের প্রায় অর্ধেক এলাকার তাপমাত্রা এখানও ৬ থেকে ৭.৯ ডিগ্রীর মধ্যে অবস্থান করছে। দেশের ৫টি অঞ্চলের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ থেকে ৫.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে। ৭টি অঞ্চলের তাপমাত্রা ৬ থেকে ৬.৮ ডিগ্রী, ৭টি অঞ্চলের তাপমাত্রা ৭ থেকে ৭.৯ ডিগ্রী, ৪টি অঞ্চলের তাপমাত্রা ৮.১ থেকে ৮.৮ ডিগ্রী এবং ৫টি অঞ্চলের তাপমাত্রা ৯ থেকে ৯.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে। শুধু টেকনাফ, হাতিয়া ও কক্সবাজার এলাকার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রীর সামান্য ওপরে রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ও শ্রীমঙ্গলসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ রয়েছে। এ অবস্থা আরও কয়েকদিন চলতে পারে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে আজ ৫ থেকে ৬ ডিগ্রীতে আসতে পারে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের হিসাবে দেখা গেছে দেশের দু’একটি জায়গা বাদে প্রায় এলাকায় তাপমাত্রার সামান্য উন্নতি হয়েছে। তবে তাপমাত্রার এ উন্নতি দশমিকের ঘরেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। ঢাকা বিভাগের ময়মনসিংহে শনিবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬.৫ ডিগ্রী, টাঙ্গাইলে ৬.১ ডিগ্রী, ফরিদপুরে ৬.৩, মাদারীপুরে ৭.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৫ ডিগ্রী, সন্দ্বীপে ৭.৪, সীতাকু-ে ৬.৫, রাঙামাটিতে ৫.৫, কুমিল্লায় ৬.৮, চাঁদপুরে ৮.১ মাইজদীকোর্টে ৯.৩, ফেনীতে ৭.৪, হাতিয়ায় ৭.৮, কক্সবাজারে ১০.৫, কুতুবদিয়ায় ১০ ডিগ্রী এবং টেকনাফে ১১.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সিলেট ও শ্রীমঙ্গলে যথাক্রমে ৭.৮ ও ৫.৩ ডিগ্রী। রাজশাহীতে তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৬.৩, ঈশ্বরদীতে ৪.৮ দেশের সর্বনিম্ন, বগুড়ায় ৬.৮, রংপুরে ৫.৬, দিনাজপুরে ৫.৭ ডিগ্রী এবং সৈয়দপুরে ৫.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। খুলনা বিভাগের খুলনায় তাপমাত্রা রয়েছে ৮.৮ ডিগ্রী, মংলায় ৯.৬ ডিগ্রী, সাতক্ষীরায় ৮.৫ ডিগ্রী, যশোরে ৬ ডিগ্রী এবং চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫.২ ডিগ্রী। এ ছাড়া বরিশালে ৭.৭ ডিগ্রী, পটুয়াখালীতে ৯.৩ ডিগ্রী, খেপুপাড়ায় ৯.৩ এবং ভোলায় শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, প্রচ- শীতে চট্টগ্রাম মহানগরীর সাধারণরাও কাবু হয়ে গেছেন। বিকেল গড়াতেই শীতের কাঁপুনিতে রাস্তাঘাট জনশূন্য হয়ে পড়ছে। সন্ধ্যা নামতেই নিস্তব্ধ হয়ে পড়ছে পুরো নগরী। কনকনে শীতে জুবুথুবু অবস্থা নিম্নআয়ের ও বস্তি এলাকার লোকজনের। শীতের কারণে স্কুল-কলেজে ছাত্রছাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। অনেক কিন্ডার গার্টেন স্কুলে উপস্থিত নেমে এসেছে উল্লেখযোগ্য। অপ্রয়োজনে ঘর থেকে লোকজন সহজে বের হওয়ার সাহস পাচ্ছে না। অফিস-আদালতেও শীতের প্রভাবে উপস্থিতিতে ভাটা। বিভিন্ন সুপার মার্কেট এবং বিপণি বিতানে ক্রেতা নেই। ব্যতিক্রম শুধু হকার মার্কেট এবং ফুটপাথের গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে। কম্বল, সোয়েটারসহ বিভিন্ন ধরনের গরম কাপড় কেনাবেচা হচ্ছে দেদার। পুরাতন কাপড় বিক্রির হিড়িক বেশি। শীতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন ফুটপাথে বসবাসকারীরা। অনেকে শীত নিবারণে বাধ্য হয়ে রাতে আগুন জ্বালিয়ে রাখছেন। শীতের তীব্রতার কারণে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রাতে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করছে।
স্টাফ রিপোর্টার রংপুর থেকে জানান, জেলার তাপমাত্রা খানিকটা বাড়লেও এবং নিয়মিত রোদের দেখা মিললেও কনকনে শীতের তীব্রতা কমেনি তেমন একটা। হাড় কাঁপানো কনকনে শীতে এখনও বিপর্যস্ত হয়ে আছে এখানকার জনজীবন। শনিবার রংপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এদিকে লাগাতার শীতের কারণে ব্রঙ্কাইটিসসহ শীতজনিত নানা রোগের প্রকোপ বেড়েছে। শিশু এবং বয়োবৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে শীতজনিত নানা রোগে।
নিজস্ব সংবাদদাতা চাঁদপুর থেকে জানান, জেলায় শীতজনিত রোগে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার মতলব আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে ৩ শিশু এবং চাঁদপুর সদর হাসপাতালে দুই বৃদ্ধ ও শিশুসহ মোট ৫ জনের মৃত্যু হয়। শীতে রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ৩ দিনে ৪ শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। শীতজনিত রোগের কারণে গত এক সপ্তাহে ৩ শতাধিক শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মতলব আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে ভর্তি হয়। মতলব আইসিডিডিআরবির হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মোঃ নাজিম উজ জামান জানান, হাইফারনেট্রেইমিয়া অর্থাৎ লবণের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়ার কারণে ৩টি শিশু মারা যায়। অনেক অভিভাবক না বুঝে অতিরিক্ত স্যালাইন খাওয়ান। যা শিশুদের জন্য ক্ষতির কারণও হতে পারে।
নিজস্ব সংবাদদাতা সুনামগঞ্জ থেকে জানান, তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রচ- শীতে শিশুসহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নে শুক্রবার রাতে প্রচ- শীতে শিশুসহ ৩ জনের মৃত্যু হয়। তাঁরা হচ্ছেন, উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ধীরেন্দ্রনগরে ইয়াছিন আলী (৭৫), একই গ্রামের আব্দুস সোবহান (৬৫) ও ইন্দ্রপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (১)।
নিজস্ব সংবাদদাতা গাইবান্ধা থেকে জানান, সপ্তাহব্যাপী শৈতপ্রবাহ চলার পর শনিবার সূর্যের মুখ দেখা গেলেও গাইবান্ধা জেলায় হাড় কাঁপানো শীত ও কুয়াশার প্রকোপ এখনও অব্যাহত রয়েছে। এদিকে শীতের কারণে শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। কৃষক মাঠে নামতে না পাড়ায় ইরি বোরো চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার খামার পাঁচগাছী গ্রামের আব্দুর রশিদ ওরফে লাল মিয়া (৪৫) তীব্র শীতজনিত রোগে শুক্রবার রাতে মারা গেছেন। তিনি ওই গ্রামের মৃত খিজির উদ্দিনের পুত্র। এ নিয়ে গাইবান্ধা জেলায় শীতজনিত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৫ জনে।
কৃষি বিভাগ জানিয়ে, তীব্র শৈত্যপ্রবাহ এবং কুয়াশার কারণে ইরি বোরোর বীজতলা হলুদ বিবর্ণ হয়ে গেছে। সরিষা ও শীতকালীন সবজির ফুল ঝড়ে যাচ্ছে। ফলে চলতি মৌসুমে ইরি বোরো চাষে চারা বীজের অভাবসহ সর্ষে এবং সবজির উৎপাদন ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংবাদদাতা পাথরঘাটা থেকে জানান, বরগুনার পাথরঘাটায় শীতজনিত রোগে এক রাতে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের বাড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের নিজ লাঠিমার গ্রামের নয়াব শিকদার (৫৫), মোতালেব (৭০) , কাঠালতলী ইউনিয়নের আবু কালাম (৪৮), পাথরঘাটা পৌরসভার সৈয়দ আলীর স্ত্রী ছবুরন (৬০) ও আহম্মেদ আলী (৬৫)।
সংবাদদাতা, বোয়ালমারী থেকে জানান, সারাদেশের ন্যায় ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে চলছে শৈত্যপ্রবাহ। উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় কয়েকদিনের তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বোরো ফলের বীজতলা। শনিবার রাতে উপজেলা শেখর ইউনিয়নের বারাংকুলা গ্রামের বৃদ্ধা মোঃ আবন শেখ (৭০) শীতজনিত রোগে মারা যায়। একই ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামের সাংস্কৃতিক কর্মী মোঃ কাইয়ুম শেখ (৫৫) মারা যায়।

No comments

Powered by Blogger.