খোকার শোডাউনে গরহাজির মির্জা সমর্থকরা- দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হলো

বুধবার রাজধানীর মুক্তাঙ্গনে মহানগর বিএনপির বিশাল সমাবেশের মধ্যদিয়ে ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা ব্যাপক শোডাউন করেছেন।
পৰানত্মরে মহানগর রাজনীতিতে খোকার প্রতিদ্বন্দ্বী মির্জা আব্বাসের সমর্থক ডেমরার সাবেক এমপি সালাউদ্দিন আহমেদের পরিকল্পনা মোতাবেক মহানগরের থানায় থানায় সমাবেশে হয়নি। মুক্তাঙ্গনের সমাবেশেও যোগ দেননি মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি মির্জা আব্বাস ও তাঁর সমর্থক স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা)। যদিও মহানগর বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচীতে তাদের সবসময় দেখা যেত। তবে খোকার সভাপতিত্বে মুক্তাঙ্গনের সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, আ স ম হান্নান শাহ, নজরম্নল ইসলাম খান, বেগম সরোয়ারী রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর, প্রচার সম্পাদক ও বিরোধীদলীয় চীফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারম্নকসহ অঙ্গ সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ। জানা গেছে, দলের চেয়ারপার্সনের নির্দেশক্রমেই এ সমাবেশের আয়োজন করা হয় এবং চেয়ারপার্সন মির্জা আব্বাস ও তাঁর অনুসারীদেরও এ সমাবেশে যোগ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। চেয়ারপার্সনের নির্দেশ অমান্য করেই মির্জা আব্বাস অনুসারীরা সমাবেশে যোগ দেয়া থেকে বিরত থাকে। এতে মহানগর রাজনীতিতে অভ্যনত্মরীণ দ্বন্দ্ব আরও প্রকট আকার ধারণ করল বলে দলের একটি সূত্র দাবি করেছে। এই সূত্রমতে, সমাবেশ বর্জন করে মির্জা আব্বাস তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল এবং ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছেন।
সমাবেশে বক্তারা বর্তমান সরকারের বিরম্নদ্ধে ভারতের কাছে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেয়ার অভিযোগ করে বলেছেন, দেশের জনগণ ভারতের সঙ্গে করা অসম চুক্তি সমর্থন করে না। জনগণ এই চুক্তি বাসত্মবায়নও করতে দেবে না। সরকার ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে অভিযোগ করে বক্তারা বলেন, সরকারের দেশবিরোধী বর্মকা- প্রতিরোধ করতে বিএনপি রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে। আর এই আন্দোলনে অংশ নেয়ার জন্য মহানগরের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান নেতারা।
সমাবেশ সফল করতে দুপুরের পর থেকেই মহানগরের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে মিছিল সহকারে বিএনপি নেতাকর্মীরা মুক্তাঙ্গনে আসতে থাকেন। এসব মিছিলে নেতৃত্ব দেন সংশিস্নষ্ট থানা ও ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ওয়ার্ড কমিশনাররা । এছাড়া বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও মিছিল নিয়ে মুক্তাঙ্গনে আসেন। বিকেল ৪টার আগেই মুক্তাঙ্গন দলীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে পূর্ণ হয়ে যায়। মূলত দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করা হলেও দলীয় সূত্র জানায়, মহানগর কমিটি না থাকার পরেও সমাবেশ আয়োজন করার দায়িত্ব পেয়ে খোকা মহানগর রাজনীতিতে তাঁর অবস্থান যে শক্তিশালী তা প্রমাণ করেছেন। আর খোকাকে এ দায়িত্ব দেয়ার মধ্যদিয়ে তাঁর হাতেই যে মহানগর বিএনপির দায়িত্ব তুলে দেয়া হবে- সেটা আব্বাস অনুসারীদের বুঝিয়ে দিয়েছেন চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। আর মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি হয়েও আব্বাস এ দায়িত্ব না পাওয়ায় হতাশ হয়েছেন তাঁর সমর্থকরা। পাশাপাশি আব্বাসকে অপমান করা হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁর অনুসারীরা। আর এই অপমানের প্রতিশোধ নিতে আব্বাস নেপথ্যে থেকে ডেমরার সাবেক এমপি সালাউদ্দিন আহমেদকে দিয়ে মহানগরের সব থানায় কর্মীসমাবেশ করার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু নেতাকর্মীদের সাড়া না পেয়ে শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করা হয় বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সমর্থকরা মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের থেকে যেমন সাড়া পায়নি, তেমনি দলের অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের থেকেও সাড়া পায়নি। দলের প্রায় প্রতিটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা মুক্তাঙ্গনের সমাবেশে যোগ দেন। এঁদের মধ্যে কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদু, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহিলা দলের নেত্রী শিরীন সুলতানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আমিরম্নল ইসলাম খান আলিম, সিনিয়র সহসভাপতি শহিদুল আসলাম বাবুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিরম্নজ্জামান খান শিমুল, সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগর উত্তর ও দৰিণ শাখা ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারাসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এমপি, শাম্মী আক্তার এমপি, রাশেদা আক্তার হীরা এমপি, সৈয়দা আসিয়া আশরাফি পাপিয়া এমপি।
সমাবেশে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার দেশের জনগণকে কিছু না জানিয়ে গোপনে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এসব চুক্তিতে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেয়া হয়েছে। কাজেই জনগণ এসব চুক্তি মানে না। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, দেশে কোন আইনের শাসন নেই। চলছে একদলীয় শাসন। ১৯৭৫ সালে সংবিধান সংশোধন করে আওয়ামী লীগ এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল কায়েম করেছিল উলেস্নখ করে তিনি বলেন, এবার তারা সংবিধান সংশোধন না করেই এক দলীয় শাসন চালাচ্ছে। সংবিধান সংশোধন না করেই যদি এক দলীয় কায়দায় শাসন করা যায় তাহলে আর সংবিধান সংশোধনের দরকার কি বলে মনত্মব্য করেন মওদুদ। তরিকুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা ভাবছেন, বিএনপির ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করে বিএনপিকে ধ্বংস করবে। কিন্তু জনগণের দল বিএনপিকে কখনোই ধ্বংস করা যাবে না। আ স ম হান্নান শাহ বলেন, ৰমতাসীন দলের নেতারা যদি শহীদ জিয়া, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান সম্পর্কে কটূক্তি করা থেকে বিরত না থাকে, তাহলে তাদের উচিত শিৰা দেয়া হবে। সাদেক হোসেন খোকা বলেন, অত্যাচার- নির্যাতন করে কেউই ৰমতায় টিকে থাকতে পারেনি। বর্তমান সরকারও পারবে না। তিনি সরকারের বিরম্নদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।

No comments

Powered by Blogger.