পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি-বিশেষজ্ঞদলের মতামত চলতি মাসেই সমাধান সম্ভব : গোল্ডস্টেইন

আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের কাছ থেকে চলতি মাসেই প্রতিবেদন পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি এলেন গোল্ডস্টেইন। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়ন করবে বলেও তিনি আশাবাদী।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের কপি হাতে পেলেই পদ্মা সেতুর দুর্নীতি বিষয়ে ষড়যন্ত্র মামলার তিন ভিনদেশি আসামি রমেশ সাহা, ইসমাইল ও কেভিন ওয়ালেসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মহাখালীতে আইসিডিডিআর,বিতে গতকাল মঙ্গলবার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আঞ্চলিক বৈঠকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে এলেন গোল্ডস্টেইন সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুদকের করা দুর্নীতি মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করছে তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেল। সেতু নির্মাণের বিষয়ে এরই মধ্যে অন্য তিন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত একটা সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেল সর্বশেষ গত ১ ডিসেম্বর ঢাকা সফর করে দুদকের তদন্তের অগ্রগতি দেখে গেছে। প্যানেলের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করছে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন। প্যানেল কবে নাগাদ প্রতিবেদন জমা দেবে, জানতে চাইলে গতকাল গোল্ডস্টেইন বলেন, 'এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিশ্বের অনেক দেশেই বছরের এই সময়ে ছুটি থাকে। তাই একটু সময় লাগছে। তবে চলতি মাসেই প্রতিবেদন পাওয়া যাবে।'
এদিকে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান গতকাল এক অনানুষ্ঠানিক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, 'আগ বাড়িয়ে কিছু বলা যাবে না। এটা খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। বিশ্বব্যাংকের কাছে আমরা এজাহারের কপি পাঠিয়েছি। এর বিপরীতে তাদের রিপোর্ট পাঠানোর কথা। সেটি হাতে পেলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।' তিনি বলেন, 'বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞদলের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। চিঠি আদান-প্রদান হচ্ছে। তারা বক্তব্য সময়মতো জানাবে।' তিনি আরো বলেন, 'আমরা স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান প্রতিবেদন তৈরি করেছি। তার ভিত্তিতে এজাহারের কপি বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞদলের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্যানেলের ভিত্তিতে বক্তব্য জানাবে।'
পদ্মা সেতু প্রকল্পে কানাডিয়ান কারিগরি প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনকে পরামর্শক হিসেবে কাজ পাইয়ে দিতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গত ১৭ ডিসেম্বর সাবেক সেতুসচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়াকে প্রধান আসামি করে সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। বাকি আসামিরা হলেন- তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রিয়াজ আহমেদ জাবের, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্ল্যানিং কনসালট্যান্ট লিমিটেডের (ইপিসি) উপব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মোস্তফা, এসএনসি-লাভালিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ সাহা ও সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর নাম এজাহারে থাকলেও সরাসরি তাঁদের আসামি করা হয়নি।
মামলার পর দুদক বাংলাদেশের চার আসামিকে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। মামলার ১০ দিনের মাথায় গত ২৬ ডিসেম্বর শাহবাগ জাদুঘরের সামনে থেকে মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া ও কাজী ফেরদৌসকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সময় হলে বলব- অর্থমন্ত্রী : জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল আমিরা হকের সঙ্গে বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, 'পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে আমি এখন কিছু বলতে পারব না। যখন বলার সময় হবে তখন বলব'।

No comments

Powered by Blogger.