যত ভাল কাজই করি বিরোধীদলীয় নেত্রী বিরোধিতা করবেনই- সংসদে প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী

বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ যে ৰতিগ্রসত্ম হচ্ছে, সে সম্পর্কে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া সচেতন আছেন কিনা সে ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, "আমি যত ভাল কাজই করি, বিরোধীদলীয় নেত্রী তার বিরোধিতা করবেনই।
তিনি (খালেদা জিয়া) শুধু বিরোধিতার স্বার্থে বিরোধিতা করছেন। কারোর বিরম্নদ্ধে আমার কোন কিছু বলার নেই, ৰোভ বা বিদ্বেষ নেই। আমি ন্যায়-সত্য, দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে ও স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছি। দেশ ও জনগণ যাতে ৰতিগ্রসত্ম না হয়, দেশ ও বিশ্বের সকল ৰতিগ্রসত্ম মানুষের জন্য আমি কাজ করেই যাব।" বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরপর্বে সরকারী দলের সিনিয়র সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। 'কোপেনহেগেন সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ভিৰা চেয়েছেন'_ বিরোধীদলীয় নেত্রীর এমন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ যে ৰতিগ্রসত্ম হচ্ছে সে সম্পর্কে বিরোধীদলীয় নেত্রী সচেতন কিনা সেটাই প্রশ্ন। ৰতিগ্রসত্ম মানুষগুলোকে বাঁচাতে ফান্ড চেয়েছি, সেটাকে ভিৰাবৃত্তি বলা হলে আমার বলার কিছু নেই। যার যে ধরনের স্বভাব, চিনত্মাভাবনা, সে ধরনেরই কথা বলবে।
সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী বন ও পাহাড় ধ্বংসকারীদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য যে নষ্ট করার চেষ্টা করবে, সে যে দলেরই হোক তাকে ছেড়ে দেয়া হবে না। যেই জড়িত থাকবে তার বিরম্নদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধে অচিরেই 'বালু উত্তোলন নীতিমালা' প্রণয়নের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, স্রোতস্বিনী নদীতে কাঠা বা বাঁশ দিয়ে ঘেরাও বন্ধ এবং এসব নদী লিজ দেয়া বন্ধে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে। জড়িতদের বিরম্নদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারিত ৩০ মিনিটের প্রশ্নোত্তরপর্বের অধিকাংশজুড়েই ছিল বিশ্ব জলবায়ু ও বৈশ্বিক উষ্ণতায় বাংলাদেশের ৰতির বিষয়টি। তবে শুরম্নতেই প্রশ্নের উত্তর দিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী গ্রেনেড হামলায় নিহত সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার পঞ্চম মৃতু্যবার্ষিকী উপলৰে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তিনি (কিবরিয়া) আমাদের শুধু অর্থমন্ত্রীই ছিলেন না, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, রাজনৈতিক সেলের প্রধান ছিলেন। তাঁকে অত্যনত্ম নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি এ হত্যাকা-ের জন্য বিএনপি-জামায়াত জোটকে দায়ী করে বলেন, এ হত্যা মামলার তদনত্মেই বেরিয়ে আসছে কারা জড়িত ছিল। বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীরাই যে ড. কিবরিয়াকে হত্যা করেছে তা বেরিয়ে আসছে। ইনশালস্নাহ এ হত্যাকা-েরও বিচার হবে, হত্যাকারীদের শাসত্মি পেতেই হবে।
সরকারী দলের সংসদ সদস্য আলহাজ এ্যাডভোকেট রহমত আলীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রসীমার পানি এক মিটার বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের দৰিণাঞ্চলসহ অনেক এলাকা একেবারেই তলিয়ে যাবে। এতে বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ ঘরবাড়ি হারাবে, প্রায় ৪০ মিলিয়ন মানুষ ৰতিগ্রসত্ম হবে। তাই দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। সেজন্য আগাম সতর্কতা হিসেবে চলতি বাজেটে এ খাতে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ রেখেছি। নদীগুলোর ধারণৰমতা বৃদ্ধি করতে ব্যাপক নদী ড্রেজিং করার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, বিশ্ব জলবায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশ ৰতিগ্রসত্ম হচ্ছে। অথচ বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য উন্নত দেশগুলো দায়ী, বাংলাদেশ সামান্যও দায়ী নয়। কোপেনহেগেন সম্মেলনে এ বিষয়টি আমরা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছি। মূল প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সম্মেলনে বাংলাদেশের বড় সাফল্য ছিল, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ৰতিগ্রসত্ম দেশ হিসেবে বিশ্ববাসীর স্বীকৃতি পাওয়া। বিশ্ব জলবায়ুর কারণে ৰতিগ্রসত্ম দেশগুলোকে সহায়তা করতে ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যনত্ম ৩০ মিলিয়ন ডলারের একটি কাইমেট চেঞ্জ ফান্ড গঠন করা হয়েছে। এ সময়ে ৰতিগ্রসত্ম দেশসমূহ প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা) পাওয়ার কথা রয়েছে। যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
তিনি জানান, ২০২০ সাল নাগাদ আর্থিক এ সহায়তা প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হওয়ায় বিশেষ বিবেচনায় অর্থ বরাদ্দ, প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এবং সংশিস্নষ্ট ৰেত্রে সৰমতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা পাবে।
স্পীকার এ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের দৃষ্টি আকর্ষণী এক মনত্মব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের নদ-নদীর স্রোতধারা ঠিক না থাকলে দেশের জন্য বিপদ আসবেই। অনেক স্থানেই স্রোতস্বিনী নদীতে কাঠ বা বাঁশ দিয়ে ঘেরাও করে স্বাভাবিক স্রোতকে বাধাগ্রসত্ম করে শুকিয়ে ফেলা হচ্ছে। আগামীতে এ কাজ যাতে কেউ করতে না পারে সেজন্য কঠোর পদৰেপ নেয়া হবে। ভূমি ও পানিসম্পদমন্ত্রীর পাশাপাশি আমি নিজেই বিষয়টির দিকে লৰ্য রাখব।
সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকীর অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবন আমাদের দেশের সম্পদ। এ বন আমাদের বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও ঝড়ের হাত থেকে রৰা করে। অথচ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সুন্দরবনের গাছপালা নির্বিচারে কেটে উজাড় করে দেয়া হয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গঙ্গার পানি চুক্তির পাশাপাশি গড়াই নদী খনন প্রকল্প চালু করায় দৰিণাঞ্চলে লবণাক্ততা হ্রাস এবং সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল। অথচ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এসে গড়াই নদীর খাল খনন প্রকল্প বন্ধ করে দিলে আবারও ওই অঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পায়।
সামশুল হক চৌধুরীর প্রশ্নোত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, কৃষি খাতে গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য সরকার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বাজেটে কৃষি খাতকে অগ্রাধিকার, সারের মূল্য হ্রাস, বরেন্দ্র এলাকার কৃষকদের ১০০ ঘণ্টা বিনামূল্যে সেচ প্রদানে সহায়তা, ব্যাপক হারে কৃষিঋণ বিতরণ, বন্যা-খরা-লবণাক্ততা সহ্যকারী ফসলের বীজ উদ্ভাবন, কৃষি গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধি, রাত ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যনত্ম নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদু্যত সরবরাহ নিশ্চিতকরণসহ নানা পদৰেপ নেয়া হয়েছে। এছাড়া কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ সরবরাহের লৰ্যে প্রতি কৃষককে সরকারীভাবে কার্ড বিতরণ করা হবে।
সংসদ সদস্য হারম্ননুর রশিদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা জানান, দেশের ৫৩টি নৌপথ ও মৃতপ্রায় নদনদীর নাব্য বৃদ্ধির লৰ্যে প্রায় ১১ হাজার ৫শ' কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেজিংয়ের একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পাইলট ক্যাপিটাল ড্রেজিং অব রিভার সিস্টেম ইন বাংলাদেশ ( ১ম পর্যায়) প্রকল্প, ১ হাজার ৫১৪ কোটি ব্যয়ে বুড়িগঙ্গা পুনরম্নদ্ধার প্রকল্প, ১ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশের নদী ড্রেজিং করে ড্রেজার ও এনসিলারি ইকুপমেন্ট ক্রয় ইত্যাদি।
সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সমবায় খাতকে সাংবিধানিকভাবে দ্বিতীয় গুরম্নত্বপূর্ণ খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সে কারণে সামগ্রিকভাবে সমবায় খাতে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে সরকার প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ। এবিএম আশরাফ উদ্দিন (নিজাম)-এর লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিৰণ বু্যরোর অধীন বর্তমানে দেশে ৩৮টি কারিগরি প্রশিৰণ কেন্দ্র রয়েছে। প্রশিৰণ কেন্দ্রগুলোকে আধুনিকায়ন করে দৰ শ্রমিক তৈরির পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.