সন্তু লারমাকে লৰ্য করে গাড়িবহরে তিন দফা গুলি- দেহরৰীসহ আহত ৪ ইউপিডিএফকে দায়ী করল জনসংহতি

 খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বেধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমাকে লৰ্য করে তাঁর গাড়িবহরে তিন দফা সশস্ত্র হামলা ও গুলি চালিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা।
তাঁকে হত্যার উদ্দেশে পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। জানা গেছে, বুধবার সকালে রাঙ্গামাটি থেকে খাগড়াছড়ি যাওয়ার পথে পৃথক তিনটি স্থানে সন্তু লারমার গাড়িবহরে গুলি চালানো হয়। এতে সন্তু লারমা ও তাঁর দেহরৰীসহ ৪ জন সামান্য আহত হয়েছেন। উলেস্নখ্য, এই গাড়িবহরে চাকমা রাজা দেবাশীষ রায়ের গাড়িও ছিল। এঁরা দু'জনই সুস্থ ও ভাল আছেন। সন্তু লারমা এই হামলার জন্য তাঁর প্রতিপৰ শানত্মি চুক্তিবিরোধী ইউপিডিএফকে দায়ী করেছেন। ইউপিডিএফ পাল্টা বিবৃতিতে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, এটা জনসংহতি সমিতির অভ্যনত্মরীণ কোন্দলের বহিঃপর্্রকাশ। সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশনের সভায় যোগ দিতে খাগড়াছড়ি যাচ্ছিলেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরডট কম জানায়, সন্তু লারমা খাগড়াছড়ি পৌঁছে সাংবাদিকদের জানান, সকাল ১০টার দিকে মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কে তিন স্থানে গাড়িবহরে হামলা হয়। প্রথমবার হামলাটি হয় রাঙ্গামাটির বেতছড়িতে, দ্বিতীয়বার কাটাপাহাড় এলাকায়। এরপর মাইকছড়ির ত্রিরত্ন বৌদ্ধ বিহারের পাশের জঙ্গল থেকে ৩ থেকে ৪ রাউন্ড গুলি চালানো হয়।
হামলাকারীরা খাকি পোশাক পরে ছিল বলে সন্তু লারমার সফরসঙ্গীরা জানান। তবে হামলা এড়াতে দ্রম্নতগতিতে গাড়ি চালিয়ে আসায় ৰয়ৰতি তেমন হয়নি বলে তাঁরা জানান।
হামলায় ষক্ত লারমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকমর্ী জিন পাল চাকমা ও বরম্নণ চাকমা আহত হন। গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে সন্তু লারমার হাতেও বিঁধেছে।
খাগড়াছড়িতে তাৎৰণিক সংবাদ সম্মেলনে সন্তু লারমা শানত্মি চুক্তিবিরোধী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রাটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) হামলার জন্য দায়ী করেছেন। আইনশৃঙ্খলা রৰাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে তার ওপর হামলায় ৰোভও প্রকাশ করেন তিনি।
মন্ত্রীর মর্যাদাধারী পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু বলেন, "আমার ওপর হামলা হয়েছে, এতে দুঃখ নেই। কিন্তু বাংলাদেশের পতাকার ওপর হামলা পুরো দেশের পরই হামলা।"
হামলাকারীদের বিরম্নদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে এক সময়ের গেরিলা নেতা প্রশাসনের উদ্দেশে বলেন, তারা ব্যবস্থা না নিলে তিনি নিজেই ব্যবস্থা নেবেন।
এদিকে হামলার অভিযোগের বিষয়ে ইউপিডিএফ নেতা নিরন চাকমা বলেন, "এমন কোন খবর আমরা শুনিনি। আমাদের সংস্কারবাদী গ্রম্নপ হামলা চালিয়ে থাকতে পারে।"

অন্যদিকে, নিজস্ব সংবাদদাতা, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি থেকে জানান, সন্তু লারমা, রাজা দেবাশীষ রায় ও রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমার গাড়ির জানালার কাঁচ ভাংচুর হয়েছে। আকস্মিক এ হামলা ও সন্ত্রাসীদের গুলিবর্ষণের পর সন্তু লারমার দেহরৰী পাল্টা গুলি ছুড়লে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ঘটনার জন্য সন্তু লারমা তাদের প্রতিপৰ ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করেছেন। ঘটনার পর প্রশাসন পার্বত্য এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।
সকাল ১০টার দিকে জেলার মাইচছড়ি, লেমুছড়ি ও বেতছড়িতে পৃথক পৃথক স্থানে এ সশস্ত্র হামলা হয়। হামলায় রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা ও রাঙ্গামাটি চাকমা সার্কেলের রাজা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের গাড়ি বহরেও সশস্ত্র হামলা ও ভাংচুর হয়েছে।
পুলিশ জানায়, সন্তু লারমার গাড়ি বহর খাগড়াছড়ির তিনটি স্থানে হামলায় আক্রানত্ম হয়েছে। এ সময় সন্ত্রাসী ও সন্তু লারমার দেহরীর মধ্যে গুলিপাল্টাগুলি বিনিময় হলে সন্ত্রাসীরা জঙ্গলে পালিয়ে যায়। হামলায় সন্তু লারমাসহ তাঁর এপিএস বরম্নণ চাকমা, হাবিলদার ঝিনুপাল খীসা ও দেহরী টারজেন চাকমা সামান্য আহত হয়। ঘটনায় সন্তু লারমার গাড়িসহ আরও তিনটি গাড়ির কাঁচ ভেঙ্গে যায়। বেলা এগারোটার দিকে একই স্থানে রাঙ্গামাটি থেকে আসা রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমার গাড়িবহরেও হামলা হয়। তিন ঘটনাস্থলে প্রত্যৰদশর্ী সূত্রে জানা গেছে, হামলাকারীদের সবুজ রঙের পোশাক এবং মুখে কাপড় বাঁধা ছিল।
পরে খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের দেয়া এক ব্রিফিংয়ে সন্তু লারমা বলেন, সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণে এ হামলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সুপরিকল্পিতভাবে ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা এ হামলা চালিয়েছে। তিনি সরকারের নিকট প্রশ্ন রেখে বলেন, পার্বত্য এলাকায় সেনা উপস্থিতির পরেও কেন সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করে। সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য শানত্মি চুক্তি সম্পাদনের পর পরই একটি বিশেষ মহলের পৃষ্ঠপোষকতায় ইউপিডিএফের জন্ম হয়। তিনি পার্বত্য এলাকায় স্থায়ী শানত্মি প্রতিষ্ঠায় ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। এ দিকে হামলার ঘটনার পর পরই খাগড়াছড়ি শহরের নিরপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুলস্নাহ জানান, সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করতে প্রশাসনের প থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে স্বাভাবিক থাকে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশ সুপার আমির জাফর জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের যে কোন মূল্যে আইনের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের জন্য সহকারী পুলিশ সুপার মাকছেদুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশী অভিযান শুরম্ন হয়েছে। তবে সন্ধ্যায় এ সংবাদ লেখা পর্যনত্ম কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
খাগড়াছড়ি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণাথর্ী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, মহাজোট সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য সারাদেশে ষড়যন্ত্র চলছে। আজকের এ হামলাও সেই ষড়যন্ত্রের অংশ। হামলাকারীরা যেই হোক না কেন তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
অপরদিকে ইউপিডিএফ ঘটনার সঙ্গে তাদের সংশিস্নষ্টতার কথা অস্বীকার করেছে। ইউপিডিএফের প্রেস সেকশনের প্রধান নিরন চাকমা সাংবাদিকদের জানান, জনসংহতি সমিতির অভ্যনত্মরীণ কোন্দলের কারণে এ হামলার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তাদের অভ্যনত্মরীণ কোন্দলের বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য ইউপিডিএফের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। এদিকে এ ঘটনার বিচারের দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি তাৎৰণিকভাবে রাঙ্গামাটিতে বিােভ মিছিল করে এবং বৃহস্পতিবার সড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছে। এদিকে দুপুরে খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউসে ভূমি নিষ্পত্তি কমিশনের বৈঠক শেষ করে সন্তু লারমা কড়া পুলিশী পাহারায় রাঙ্গামাটি ফিরে যান।

No comments

Powered by Blogger.