বাংলাদেশের সম্ভাবনার ইভেন্ট- মহিলা ক্রীড়াবিদদের নিয়েই প্রত্যাশা বেশি

দৰিণ এশিয়ার অলিম্পিক বলে খ্যাত এসএ গেমসে অতীতে প্রতিবার পুরম্নষ ফুটবলে স্বর্ণ আশা করা হয়েছে। ব্যতিক্রম কেবল এই বার। অথচ বাফুফের বর্তমান নির্বাহী কমিটিকে অনেকে বলে থাকেন ড্রিম টিম।
দেশ সেরা ফুটবলারদের পাশাপাশি এই কমিটিতে আছেন পোড় খাওয়া সংগঠকরা। এই প্রথম শিরোপা জয়ের কোন প্রত্যাশা নেই ফুটবলকে ঘিরে। বিওএ'র (বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশন) প্রত্যাশিত ১৭ স্বর্ণের তালিকায় নেই পুরম্নষ ফুটবলের নাম। বরং আশায় বুক বাঁধা হচ্ছে মহিলা ফুটবলকে ঘিরে। ফাইনালে খেলা তো বটে, স্বর্ণ জিতে একটা হৈহৈ রৈরৈ কা- ঘটিয়ে দিতে পারে তারা_ এই বিশ্বাস অনেকেরই। শুধু মহিলা ফুটবল কেন, এ্যাথলেটিক্সে সুমিতা রানী, সাঁতারে ডলি আক্তার, শূটিংয়ে শারমিন আক্তার রত্নার প্রতি নজর এবার সবার। শুধু প্রধান ডিসিপিস্নন কেন, তায়কান্দোতে রম্নমি, কারাতে খেলায় জয়প্রম্ন আর উশুতে বাসনা খন্দকারকে ঘিরেও আশার পাখায় ভর দিয়ে উড়ছে তাদের ফেডারেশন। অথচ অতীতে শূটিংয়ে সাবরিনা সুলতানা-কাজী শাহানা পারভিন আর শারমিন আক্তার ছাড়া কোন খেলাতে বাংলাদেশের কোন মহিলা ক্রীড়াবিদ কখনও স্বর্ণ জেতেনি।
১৭ স্বর্ণ জিততে পারে বাংলাদেশ এমন আলোচনা এখন সবার মুখে মুখে। যদিও কেউ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারছে না আমরা জিতবই। তবু আশার কথা বলতে হয়। বিশেষ করে ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে যেখানে দেশের মাটিতে ১৭ বছর পরে এসএ গেমস হচ্ছে, তখন চোখটা তো একটু উপরে রাখতে হবে। যদি বাংলাদেশ কাঁটায় কাঁটায় ১৭ স্বর্ণ জেতে, তবে প্রতি স্বর্ণের পিছনে বাংলাদেশের খরচ হবে ১০ কোটি টাকা। স্বর্ণালি সাফল্যের পাশাপাশি আমরা অনেকগুলো নতুন, আধুনিক ভেনু্য পেলাম এই প্রাপ্তিও কম নয় অবশ্য। আসা যাক কোন্ ডিসিপিস্ননে কি প্রত্যাশা। এ্যাথলেটিক্সে ১০০ মিটার হার্ডলসে সুমিতা রানী নিশ্চিত স্বর্ণ জিততে যাচ্ছে বলে আশা করা হচ্ছে। লংজাম্পে আল আমিন, হাই জাম্পে সজীব হোসেন ও পুরম্নষদের ৪*১০০ মিটার রিলের যে কোন একটি থেকে স্বর্ণ আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। সাঁতারে ৫০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে শাহজাহান আলী রনির স্বর্ণ নিশ্চিত ছিল। কিন্তু তিনি শেষ সময়ে এসে জন্ডিসে আক্রানত্ম হওয়ায় এলোমেলো অনেক কিছু। তবু জুয়েল আহমেদ, রম্নবেল রানা ও ডলি সব মিলে ২ নিশ্চিত স্বর্ণ সাঁতারে। সংখ্যাটা ৪ হতে পারে বলে মনে করেন অনেকে। প্রতিপৰ ভারতের কারণে শূটারদের বর্তমান স্কোর সম্পর্কে জানায়নি শূটিং ফেডারেশন। তবু মহিলা ও পুরম্নষদের এয়ার রাইফেলের দলগত ইভেন্টে স্বর্ণ আশা করা হচ্ছে। প্রায় নিশ্চিত এই দুই স্বর্ণের পাশাপাশি মহিলাদের প্রোন রাইফেল ও ব্যাক্তিগত ইভেন্টেও দুই-একটি স্বর্ণ বাড়তি প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এবার এসএ গেমসে প্রত্যাশার একটা বড় জায়গা জুড়ে আছে মার্শাল আর্ট খেলাগুলো। সবার চোখ রয়েছে বিশেষভাবে তায়কান্দোর দিকে। ২০০৬ সালে কলম্বো আসরে সবাইকে বিস্মিত করে স্বর্ণ জয় করা মিজানুর রহমানকে নিয়ে এবারও আশা করা হচ্ছে স্বর্ণের। পাশাপাশি আছেন + ৮৭ কেজি ওজন শ্রেণীর রাসিউল কবির। গত বছর দৰিণ কোরিয়ার ইনচনে অনুষ্ঠিত কোরিয়ান ওপেন তায়কান্দোতে স্বর্ণ জয় করে এই দুই ক্রীড়াবিদ এখন সবার গর্ব। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষভাবে অভিনন্দিত করেছেন মিজান-রাসিউল কবিরকে। ফেডারেশন হিসেবেও তায়কান্দো টিম ওয়ার্ক অনেক শক্তিশালী। সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল ইসলাম রানা জানালেন, শুধু দু'টি নয় এবার আমরা আরও বেশি স্বর্ণের প্রত্যাশী। মেয়েদের মধ্যে রম্নমি ও শাম্মী অত্যনত্ম সম্ভাবনাময়। সভাপতি ও চিত্রনায়ক মাসুম পারভেজ রম্নবেলের কারাতে ফেডারেশন কাতার দলগত ও ব্যক্তিগত ইভেন্টে জয়প্রম্নকে নিয়ে প্রত্যাশা করছে। উশুতে একটি নিশ্চিত স্বর্ণ ধরতে বিওএ। তবে ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের দাবি এটা একাধিক হতে পারে। জুডো দেরিতে অনত্মভর্ুক্ত হওয়ায় কিছুটা কোণঠাসা অবস্থাতে আছে। তদুপরি সম্ভাবনাময় কয়েকটি ইভেন্টে বাদ পড়াতে তারা হোম এ্যাডভান্টেজের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। জুডো উপহার দিতে পারে ১টি বা ২টি স্বর্ণ।
এই বছর এশিয়ান গ্রঁ্যা পিঁ্রতে সাজ্জাদ হোসেনের সাফল্য ও পরে ইমদাদুল হক মিলনের প্রাপ্তি_ সব মিলে আর্চারির দিকে মনোযোগ সবার। কিন্তু ফেডারেশন কর্তারা খুব বেশি আশাবাদ ব্যক্ত করতে পারছেন না ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান গ্রঁ্যা প্রিঁতে স্বর্ণ জিততে ব্যর্থ হওয়ায়। বিওএ আর্চারি থেকে এক স্বর্ণ আশা করছে। ভারোত্তোলন থেকেও এক স্বর্ণের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। আর যার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন সেই হামিদুল ইসলাম। ভারোত্তোলন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক উইং কমান্ডার (অব) মহিউদ্দিন আহমেদের আনত্মর্জাতিক লিয়াজোঁ ভাল হওয়াতে এই খেলাতে আরও স্বর্ণ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মহিলা ভারোত্তোলন সুযোগ পেল না এটাই যা ৰোভ সবার। গলফ, রেসলিং, বক্সিং ও সাইকিংয়ে একটি করে স্বর্ণ আশা করা হচ্ছে। যদিও এই সব ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের দাবি তারা আরও বেশি স্বর্ণ আশা করছে। দলগত ইভেন্টে হ্যান্ডবল ও ক্রিকেটে স্বর্ণের কথা ভাবা হচ্ছে। ফেডারেশন থেকে অবশ্য জোর প্রত্যয় জানানো হয়েছে ফাইনাল পর্যনত্ম খেলার। বাকি দলগত খেলা হকি, পুরম্নষ ও মহিলা কাবাডি, ভলিবল প্রত্যেকে ফাইনালে খেলার কথা বলছে। ব্যাডমিন্টন-টিটি অতীত রেকর্ড অনুজ্জ্বল। তাই তারা বেশি ভরসা দিতে পারছে না।
সেই হিসেবে স্বর্ণের সম্ভাবনা ১৭ থেকে বেড়ে যেতে পারে। আবার কমতেও পারে। পুরো বিষয়টা অনেকখানি নির্ভর করছে গেমস পলিটিক্সের ওপরে। কারণ এই অঞ্চলে খেলাধুলায় সেরা তিন দেশ ভারত-পাকিসত্মান-শ্রীলঙ্কায় এই বিষয়ে অনেক এগিয়ে। বাংলাদেশে কোন সংগঠক এক চেয়ারে বেশিদিন না থাকাতে আনত্মর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের প্রভাব-প্রতিপত্তি কম। ১৯৮৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সাফ গেমসে ৯টি এবং ১৯৯৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ সাফ গেমসে ১১টি স্বর্ণ পদক অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। এখন নতুন দেশ আফগানিসত্মান যুক্ত হওয়াতে সাফ গেমসের নাম বদলে হয়েছে এসএ গেমস। ডিসিপিস্ননও বেড়েছে অনেক। এবার ১১তম আসরে সর্বোচ্চ ২৩ ডিসিপিস্ননে খেলা হচ্ছে। এখানে ভারত সর্বোচ্চ স্বর্ণ শিকারী হবে সেটা নিশ্চিত। পাকিসত্মান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে লড়াই থাকবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় হওয়া নিয়ে। আর চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানের জন্য লড়াই করবে বাংলাদেশ ও নেপাল। এখন নেপালকে হারিয়ে চতুর্থ স্থান পাওয়াটাই হবে বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ। ২০০৬ সালে কলম্বো এসএ গেমসে ২১৬ স্বর্ণের মধ্যে ভারত জিতেছিল ১১৮টি। পাকিসত্মান ৪৩টি স্বর্ণ জিতে পেয়েছিল দ্বিতীয় স্থান। আর বাংলাদেশ সেখানে মাত্র ৩টি পদক জয় করে। এসএ গেমসের বিগত ১০ আসরে বাংলাদেশের অর্জন মোট ৪৫ স্বর্ণপদকের মধ্যে শূটিং থেকে এসেছে সর্বোচ্চ ১৮টি স্বর্ণ। সাঁতার উপহার দিয়েছে ১৫ টি এবং এ্যাথলেটিক্স ৮টি। এ ছাড়া বক্সিংয়ে ২টি, ফুটবল এবং তায়কান্দোতে ১টি করে পদক জিতেছে বাংলাদেশ। দলীয় ডিসিপিস্ননের মধ্যে শুধু ফুটবলের স্বর্ণ জয়ের রেকর্ড থাকলেও এবার তারা ফাইনালে খেলার প্রত্যাশাও ব্যক্ত করতে ভয় পাচ্ছে। হ্যান্ডবলকে শুধু বিওএ রাখতে সম্ভাব্য স্বর্ণের তালিকায়। মহিলা ফুটবলকে অত্যনত্ম সম্ভাবনাময় ধরা হচ্ছে। অতীতে যে কোন গেমসে অংশ নেবার ব্যাপারে বঞ্চিত করা হতো এই দেশের মহিলা খেলোয়াড়দের। সীমিত সুযোগ সুবিধার মধ্য দিয়ে তবু তারা পদক জিতে দেশে ফিরত। যেমন ২০০৪ সালে ইসলামাবাদ সাফ গেমসে বাংলাদেশ এ্যাথলেটিক্সে তিনটি পদক জেতে, তিনজনই ছিল মহিলা ক্রীড়াবিদের বদৌলতে। তারকা এ্যাথলেটরা বিদেশে খেলতে গিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় এমন করম্নণদশা হয়েছিল এ্যাথলেটিক্স দলের। এভাবে একাগ্রতা, পরিশ্রম ও শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে উঠে আসছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। এবার এসএ গেমসে প্রথম বারের মতো বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টের জেনারেল টিম ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করার গৌরব অর্জন করেছেন মাহফুজা আক্তার কিরন। সব মিলে ১১তম এসএ গেমস বাংলাদেশের জন্য নারী ক্রীড়াবিদদের নিজেদের মেলে ধরার গেমসও হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.