ইরাকে বস্ন্যাকওয়াটার by এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া

সারাবিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থরৰায় কাজ করছে 'বস্ন্যাকওয়াটার' গার্ড। ইরাক যুদ্ধের সময় বিষয়টি সবচেয়ে পরিষ্কার হয়ে ওঠে। ২০০৩ সালে তারা সবচেয়ে বড় অংকের একটি ঠিকাদারি পায়।
কোন প্রতিযোগিতা ছাড়াই ইরাকের তৎকালিন কোয়ালিশন প্রভিশনাল অথরিটির প্রধান এল পল ব্রেমারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে ২ কোটি ১০ লাখ ৫ ডলারের ঠিকাদারি লাভ করে। ২০০৪ সালের ৩১ মার্চ বস্ন্যাকওয়াটার সিকিউরিটি কনসাল্টিংয়ের (বিএসসি) চার কমর্ী ফালুজায় চোরাগোপ্তা হামলায় নিহত হয়। তাদের লাশ ব্রিজের ওপর ঝুলিয়ে রাখা হয়। বিশ্বব্যাপী নিজেদের লোকের নিরাপত্তা দেয়ার কাজে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের পাঁচ বছর মেয়াদি বাজেটের অঙ্ক একশ' কোটি ডলার। বিশেষ করে সংঘাতপ্রবণ কিংবা সংঘাত বিৰুব্ধ এলাকায় নিজেদের লোকজনের নিরাপত্তাকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। এর বাইরে ২০০৪ সালের জুন থেকে বস্ন্যাকওয়াটারকে অতিরিক্ত ৩২ কোটি ডলার দেয়া হয়েছে।
২০০৬ সালে বস্ন্যাকওয়াটার ইরাকে মকিন দূতাবাসে কর্মরত আমেরিকান কূটনীতিকদের নিরাপত্তা রৰায় বড় অংকের কাজ পায়। পেন্টাগণ এবং কোম্পানি প্রতিনিধিদের অনুমান, ইরাকে নিরাপত্তা ঠিকাদারির কাজে ২০ থেকে ৩০ হাজার কিংবা কারও কারও মতে, ১ লাখ ঠিকাদার কর্মরত রয়েছে। নিরাপত্তার কাজে বস্ন্যাক ওয়াটারের মতো বেসরকারি ঠিকাদারদের উপর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের নির্ভরতা প্রসঙ্গে ইরাকে মার্কিন দূত রিয়ান ক্রমার মার্কিন সিনেটকে বলেন, পররাষ্ট্র দফতরের কূটনৈতিক নিরাপত্তা বু্যরোর পৰে ইরাকে তাদের লোকজনের নিরাপত্তা কাজে পর্যাপ্ত সংখ্যক পূর্ণকালিন কমর্ী নিয়োগ করা সম্ভব নয়। তাই ঠিকাদার নিয়োগের কোন বিকল্প নেই।
২০০৮ সালের নবেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাস্ট্র দফতর বস্ন্যাকওয়াটারের কয়েক কোটি ডলারের জরিমানা ধার্য করে। প্রয়োজনীয় অনুমোদন ছাড়া এবং শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ইরাকে স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রের চালান পাচারের দায়ে এই জরিমানা ধার্য করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এসব অস্ত্রের চালান কালোবাজারে চলে গেছে।
বস্ন্যাকওয়াটার ইরাকে কাজ করার জন্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা তাদের পেশাদার কমর্ীদের 'পুল' বা তালিকা থেকে ঠিকাদারের বাছাই ও নিয়োগ করে। সাবেক সৈন্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীল সদস্যদের সমন্বয়ে ২১ হাজার কমর্ীর একটি ডাটাবেজ আছে। যেমন, প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট গ্যারি জ্যাকসন নিশ্চিত করেছেন যে, বিমানবন্দর থেকে শুরম্ন করে পল ব্রেমারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে বসনিয়া, ফিলিপাইন এবং চিলির কমর্ীদের নিয়োগ করা হয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যনত্ম ১৯৫টি ঘটনায় বস্ন্যাকওয়াটার সদস্যদেরকে গুলি ছুড়তে হয়েছে। তার মধ্যে ১৬৩টি ঘটনায় বস্ন্যাকওয়াটার কমর্ীরা আগে গুলি ছোঁড়ে। আইন অমান্য, অ্যালকোহল নীতির আলোকে ২৫ এবং অস্ত্র সংক্রানত্ম ঘটনায় ২৮ বস্ন্যাকওয়াটার সদস্যকে চাকুরি থেকে বরখাসত্ম করা হয়।
ফালুজা ও নাজাফ
২০০৪ সালের ৩১শে মার্চ ইরাকি বিদ্রোহীরা ফালুজায় বস্ন্যাকওয়াটার ঠিকাদারদের বহনকারী একটি সামরিক যানের ওপর হামলা চালায়। এতে চার ঠিকাদার প্রাণ হারায়। তারা হচ্ছে স্টক হেলভেনস্টন, জেরি জভকভ, ওয়েসলি বাটালোনা এবং মাইকেল টিগ। তাদরে লাশ দজলা নদীর একটি সেতুতে ঝুলিয়ে রাখা হয়। ফালুজা শহরে প্রথম মার্কিন অভিযানের প্রতিবাদে বস্ন্যাক ওয়াটারের ওপর এই প্রতিশোধমূলক হামলা চালানো হয়। ২০০৭ সালের শীতকালে কংগ্রেসের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে। বস্ন্যাকওয়াটার ইচ্ছাকৃতভাবেই ঠিকাদারদের মৃতু্যর ঘটনা কাজ বিলম্বিত করে এবং বাধার সৃষ্টি করে।
২০০৪ সালের এপ্রিল, ফালুজা ব্রিজে লাশ ঝুলিয়ে রাখার ঘটনার কয়েকদিন পর, বস্ন্যাকওয়াটার কমর্ীদের একটি ছোট দল, মার্কিন মেরিন সেনাদের একটি দল সঙ্গে নিয়ে দ্রম্নত আল নাজাফে ছুটে আসে। কারণ চারশ' বিদ্রোহী এসময় কোয়ালিশন প্রভিশনাল অথারিটি সদর দফতর ঘিরে রেখেছিল। এই খবর পেয়ে ৭০ মাইল দূর থেকে বস্ন্যাকওয়াটার সদস্যরা ছুটে আসে। তারা রসদ সরবরাহ নিশ্চিত করে এবং আহত এক মেরিনকে নিরাপদে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায়। ২০০৫ সালের এপ্রিলে একটি এমআই-৮ হেলিকপ্টার বিধ্বসত্ম হলে ৬ বস্নাকওয়াটার সদস্য মারা যায়। এছাড়া আরও তিন বুলগেরিয়ান এবং দুই ফিজিয়ানের মৃতু্য হয়। প্রাথমিক সংবাদে জানা যায়, হেলিকপ্টারটি রকেটচালিত গ্রেনেডের আঘাতে ভূপাতিত হয়। ২০০৬ সালে বাগদাদের গ্রিন জোনে দুর্ঘটনায় একটি মার্কিন সামরিক যান ধ্বংস হয়।
বাগদাদ
২০০৫ সালের ১৬ ফেব্রম্নয়ারি, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরে কর্মকর্তাদের একটি গাড়িবহরকে নিরাপত্তা প্রদানে নিয়োজিত চার বস্ন্যাক ওয়াটার সদস্য একটি ইরাকি গাড়ী লৰ্য করে ৭০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে।
গাড়ির চালকের ভাগ্য সম্পর্কে জানা যায়নি। কারণ গুলিবর্ষনের পর বস্ন্যাকওয়াটার কমর্ীরা সেখানে থামেনি। পরে বস্ন্যাকওয়াটার কমর্ীরা তদনত্মের সময় মিথ্যা কথা বলেছিল। তারা বলেছিল বিদ্রোহীদের একটি গাড়ি তাদের গাড়িকে ধাক্কা দিয়েছিল। আসলে এই অভিযোগ সঠিক নয়। তবে তাদের বিরম্নদ্ধে কোন শাসত্মিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
২০০৬ সালে বড়দিনের প্রাক্কালে ইরাকি ভাইস-প্রেসিডেন্ট আবদেল আবদুল মাহদির একজন নিরাপত্তা রৰী গুলিতে নিহত হয়। ইরাক সরকারের অভিযোগ, বস্ন্যাকওয়াটার কমর্ী এনড্রু জে মুনেন এর গুলিতে ওই নিরাপত্তা কমর্ী খুন হন। মুনেন মাতাল অবস্থায় গুলি চালায়। পরে অ্যালকোহল এবং আগ্নেয়াস্ত্র আইনে বস্ন্যাকওয়াটার মুনেনকে চাকুরি থেকে বরখাসত্ম করে। তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো হয়।

No comments

Powered by Blogger.