বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার চেষ্টা by বি রামন

. বিশ্বস্ত সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ ধারণা করছে, ২০০৯ সালের অক্টোবরে নিষিদ্ধ হিযবুত তাহ্‌রী ১৬ জন মাঝারি পদবির সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছে, যা গত ডিসেম্বরে ধরা পড়েছে।


২. এই ষড়যন্ত্র ধরে ফেলার কথা ঢাকায় ১৯ জানুয়ারি ২০১২ একটি সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ মাসুদ রাজ্জাক প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যে ১৬ জন কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার এই ভয়ানক ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ব্যাপারে সেনাবাহিনীর কাছে সুস্পষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। এই ষড়যন্ত্র প্ররোচিত করেছে বিদেশে বসবাসরত কিছু বাংলাদেশি।
৩. তিনি আরো বলেছেন, দুজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, লে. কর্নেল এহসান ইউসুফ এবং মেজর জাকিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু কবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সে সম্পর্কে কিছু বলেননি। তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, কর্তৃপক্ষ একজন চাকরিরত সেনা কর্মকর্তা মেজর জিয়াউল হককে খুঁজছে, যিনি ইউসুফ এবং জাকিরের গ্রেপ্তারের পর গা-ঢাকা দিয়েছেন।
৪. ষড়যন্ত্রের অভিযোগটির বিস্তারিত ব্যাখ্যায় রাজ্জাক বলেছেন, জিয়াউল হক চাকরিরত কর্মকর্তাদের কাছে ৯-১০ তারিখে সরকার উৎখাতের একটি পরিকল্পনার বর্ণনা দিয়ে ই-মেইল ছড়িয়ে দিয়েছেন। সেনা কর্তৃপক্ষ হিযবুত তাহ্‌রীকে অভিযুক্ত করে বলেছে, তারা এই ই-মেইল বার্তা ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছে। রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে যে, এই পরিকল্পনার কথা উন্মোচিত হওয়ার পর একটি বড় সেনানিবাসের প্রধান একজন মেজর জেনারেলকে (নাম বলা হয়নি) ঢাকায় তলব করা হয়েছে। তাঁর এই পরিকল্পনায় ঠিক কী ভূমিকা ছিল সেটা জানা যায়নি।
৫. ২০ জানুয়ারি বিতরণ করা লিফলেটে হিযবুত তাহ্‌রী বলেছে : আজ জুমার নামাজের পর দেশব্যাপী মসজিদের বাইরে বক্তব্যের আয়োজন করেছে হিযবুত তাহ্‌রী। বাংলাদেশকে শেখ হাসিনা সরকারের ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের করদরাজ্যে পরিণত করার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন। বক্তারা বলেছেন, হাসিনাকে ভারতের সহায়তায় ক্ষমতায় এনেছে আমেরিকা। আমেরিকার হাতে একটি পরিকল্পনা রয়েছে এই অঞ্চলে ইসলামিক খেলাফত এবং চীনের উত্থানকে বাধাগ্রস্ত করার। সে কারণেই তারা ভারতের সঙ্গে কৌশলগত পার্টনারশিপ গড়ে তুলেছে এ অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে এবং এ অঞ্চলের মুসলিম দেশগুলোকে শক্ত করে মুঠোবদ্ধ করে রাখতে। এই শত্রুদেশগুলো বাংলাদেশের সরকার, বিরোধী দল এবং সেনাবাহিনীর কিছু শীর্ষ কর্মকর্তাকে এজেন্ট হিসেবে ব্যবহার করছে দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান করে ভারতের হাতকে মুক্ত করতে। এটা করতে পারলে ভারত আমেরিকার সঙ্গে মিলে ইসলাম এবং চীনকে প্রতিহত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবে। এই অশুভ পরিকল্পনার সামনে সব বাধাকে মুছে ফেলার পরিকল্পনা করেছে। এই কারণেই আমাদের মেধাবী কর্মকর্তাদের হাসিনার সহায়তায় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। এই উদ্দেশ্যেই হাসিনা হিযবুত তাহ্‌রীকে নিষিদ্ধ করে নিষ্ঠুরভাবে এই দলকে দমন করার নীতি অবলম্বন করেছে এবং এখন সে সেনাবাহিনীর মধ্যে যাঁরা দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং ইসলামকে অনুসরণ করেন তাঁদের অপহরণ, গ্রেপ্তার এবং পদচ্যুত করে সেনাবাহিনীকে পরিশুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বক্তারা সেনাবাহিনীর নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের অবিলম্বে হাসিনা ও তাঁর সরকারকে উৎখাত করার আহ্বান জানিয়েছে এবং সচেতন ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক দল হিযবুত তাহ্‌রী কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলা হয়েছে। হিযবুত তাহ্‌রী খিলাফত রাষ্ট্র গঠন করে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ভারত এবং তাদের দোসরদের বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাখ্যান করবে। খিলাফত এই দেশকে বিশ্বের সুপার পাওয়ার হিসেবে গড়ে তুলতে প্রথম থেকে কাজ শুরু করবে। এটাই বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক প্রয়োজন নিশ্চিত করবে এবং দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধান করে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব ঘুচিয়ে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে এবং একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন করে মুসলিম উন্মাহর সঙ্গে শরিক হবে।
৬. অন্য একটি লিফলেটে বাংলাদেশের মানুষকে উদ্দেশ করে হিযবুত তাহ্‌রী পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, 'হে মুসলমানগণ, তোমরা কয়েক দশক ধরে ভারতীয় আগ্রাসনের শিকার। এই শত্রুরাষ্ট্র পিলখানায় তোমাদের অফিসারদের হত্যা করেছে, ফারাক্কায় বাঁধ নির্মাণ করেছে, অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করেছে এবং সীমান্তে তোমাদের ভাই ও বোনকে হত্যা করছে। এবং তোমাদের বর্তমান সরকার ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তোমাদের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন তোমাদের টিকে থাকার একমাত্র পথ শত্রুকে প্রতিহত এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা। সুতরাং আর সময় নষ্ট করো না। বর্তমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং অন্যান্য দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখনই সময়। তোমাদের শুধু একটিই পদক্ষেপ নিতে হবে তা হলো শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করে হিযবুত তাহ্‌রীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে জনগণকে ডাক দিতে হবে। হিযবুত তাহ্‌রীই একমাত্র দল, যারা এই দেশকে এ অঞ্চলের নেতৃত্বের জায়গায় নিয়ে যাবে। আমরা খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করব এবং কুরআন ও সুন্নাহ চালু করব। আমরা তোমাদের অর্থনৈতিক দুর্দশা ঘুচিয়ে অর্থনীতিকে শিল্পোন্নত করব। আমরা একটি আধুনিক শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন করব এবং আমাদের একটি অ্যাকশন প্ল্যান রয়েছে ভারতকে পুনরায় একটি মুসলমানের ভূমিতে পরিণত করে ইসলামী শাসনব্যবস্থার অধীন নিয়ে আসার, যা স্থায়ীভাবে ভারতের আগ্রাসনকে নিবৃত্ত করবে।'
৭. হিযবুত তাহ্‌রী বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মাঝারি এবং নিম্ন পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে সক্রিয় কাজ করছে, পাশাপাশি উসকানি দিয়ে যাচ্ছে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে এই দুটি দেশে ইসলামী শাসন চালু করার এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতকে উচ্ছেদ করার। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার পর এরা ভারতীয় মুসলমানদের জন্য হাত প্রসারিত করতে চায়।

লেখক : ভারতের মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব। বর্তমানে চেন্নাইভিত্তিক ইনস্টিটিউট অব টপিক্যাল স্টাডিজের পরিচালক। শ্রীলঙ্কা গার্ডিয়ানে প্রকাশিত নিবন্ধ ভাষান্তর করেছেন : মহসীন হাবিব

No comments

Powered by Blogger.