পবিত্র কোরআনের আলো-ইহুদি-খ্রিস্টানদের জন্যও আরব ভূমির অধিকার সঙ্কুচিত করার নির্দেশ

৯. ক্বা-তিলুল্লাযীনা লা ইউ'মিনূনা বিল্লাহি ওয়া লা বিলইয়াওমিল আখিরি ওয়া লা ইউহার্রিমূনা মা হার্রামাল্লাহু ওয়া রাসুলুহু ওয়া লা ইয়াদীনুনা দীনাল হাক্কি মিনাল্লাযীনা ঊতুল কিতাবা হাত্তা ইউ'ত্বুল্ জিয্ইয়াতা আ'ন ইয়্যাদিউন ওয়া হুম সা-গিরুন।


৩০. ওয়া ক্বালাতিল ইয়াহুদু উ'যাইরু ইবনুল্লাহি ওয়া ক্বালাতিন্ নাসারাল্ মাসিহু ইবনুল্লাহ্; যালিকা ক্বাওলুহুম্ বিআফ্ওয়া-হিহিম্; ইউদ্বা-হিঊনা ক্বাওলাল্লাযীনা কাফারূ মিন্ ক্বাবলু; ক্বা-তালাহুমুল্লাহু আন্না ইউ'ফাকূন।
৩১. ইত্তাখাযূ আহ্বা-রাহুম্ ওয়া রুহ্বানাহুম আর্বা-বাম্ মিন্ দূনিল্লাহি ওয়াল্ মাছীহাব্না মারইয়ামা; ওয়া মা উমিরু ইল্লা- লিইয়া'বুদু ইলাহান ওয়াহিদা; লা ইলাহা ইল্লা হুয়া; ছুব্হানাহূ আ'ম্মা ইউশ্রিকূন।
৩২. ইউরীদূনা আন ইউত্বফিঊ নূরাল্লাহি বিআফ্ওয়াহিহিম্ ওয়া ইয়া'বাল্লাহু ইল্লা আন ইয়্যুতিম্মা নূরাহু ওয়া লাও কারিহাল্ কাফিরূন। [সুরা : আত্-তাওবা, আয়াত : ২৯-৩২]

অনুবাদ : ২৯. যাদের এর আগে কিতাব দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে যারা আল্লাহর ওপর ইমান রাখে না এবং পরকালেও বিশ্বাস করে না, আর আল্লাহ ও তাঁর রাসুল যা কিছু হারাম করেছেন, তা হারাম মনে করে না এবং সত্য ধর্মকে নিজের ধর্ম বলে স্বীকার করে না, তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাও_যতক্ষণ না তারা বশ্যতা স্বীকার করে স্বেচ্ছায় জিজিয়া কর আদায় করে দিয়ে তোমাদের অধীনে বসবাস করতে বাধ্য হয়।
৩০. ইহুদিরা বলে, উজায়ের আল্লাহর পুত্র, আর খ্রিস্টানরা বলে, ইসা মাসিহ আল্লাহর পুত্র। এ সবই তাদের মুখের (বানানো) কথা। এরা তাদের আগে যারা আল্লাহর অবাধ্য হয়ে গিয়েছিল, তাদের মতোই কথা বলছে। এদের আল্লাহ ধ্বংস করুন! এরা বিভ্রান্ত হয়ে কোন দিকে উল্টে যাচ্ছে?
৩১. এরা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের আহবার ও রুহবান (অর্থাৎ ইহুদি ধর্মগুরু ও খ্রিস্টান পুরোহিতদের) প্রভু বানিয়ে নিয়েছে এবং ইসা ইবনে মরিয়মকেও অনুরূপভাবে প্রভু বানিয়েছে। অথচ তাদের এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করার হুকুম দেওয়া হয়নি। তিনি ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই। তারা যেভাবে আল্লাহর শরিক বানায়, তা থেকে তিনি সম্পূর্ণ পবিত্র।
৩২. তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর নুরকে নিভিয়ে দিতে চায়। অথচ আল্লাহ তাঁর নুরকে পুরোপুরি উদ্ভাসিত করবেনই, যদিও অবাধ্যরা তা অপছন্দ করে।

ব্যাখ্যা : এ সুরার ২৮ নম্বর আয়াত পর্যন্ত আরবের পৌত্তলিকদের প্রসঙ্গ। ২৯ নম্বর আয়াত থেকে শুরু হচ্ছে আহলে কিতাব তথা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের প্রসঙ্গ। তাবুক যুদ্ধকে কেন্দ্র করেই এগুলোর বিষয়বস্তু। এতে বোঝা যায়, এ আয়াতগুলো নাজিল হয়েছিল ওপরের ২৮টি আয়াতের আগে। কারণ তাবুকের যুদ্ধ হয়েছিল 'বারাআঃ' বা সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণার আগে। তাবুক যুদ্ধ হয়েছিল রোমানদের বিরুদ্ধে, যাদের অধিকাংশই ছিল খ্রিস্টান, আর ইহুদিদের একটা অংশও রোম সাম্রাজ্যে বসবাস করত। আরব উপদ্বীপে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য রাসুল (সা.)-এর কাছে প্রথম করণীয় বিবেচিত হয়েছিল মক্কার কোরাইশসহ পৌত্তলিকদের ওপর বিজয় অর্জন করা। এর পরই আসে আহলে কিতাব বা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের মোকাবিলা করার বিষয়টি। ইহুদি ও খ্রিস্টানরা আদিতে একত্মবাদে বিশ্বাসী ছিল বটে, কিন্তু তাদের ধর্মবিশ্বাস ও কর্মকাণ্ডের মধ্যে অনেক বিভ্রান্তি ও বিচ্যুতি ঢুকে পড়েছিল। বিশেষ করে তারা শেষ নবীর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে ইসলাম গ্রহণ করতে রাজি হচ্ছিল না। সুতরাং ইসলামের অবস্থানকে নিষ্কণ্টক করার জন্য আরব উপদ্বীপের ইসলামী রাষ্ট্রের আনুগত্য স্বীকার করানো এবং জিজিয়া কর প্রদানে বাধ্য করা একান্ত জরুরি ছিল। আরব উপদ্বীপকে একক মুসলিম রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য পৌত্তলিকদের সত্য ধর্মের অনুসারী করানোর পাশাপাশি আহলে কিতাবদেরও সেখান থেকে বিতাড়িত করার লক্ষ্য ছিল, তবে জিজিয়া করের বিনিময়ে তাদের আনুগত্যে আনার বিষয়টি ছিল প্রাথমিক বিবেচনা। জিজিয়া কর মুসলিম রাষ্ট্রের যুদ্ধক্ষম অমুসলিম নাগরিকদের থেকে আদায়যোগ্য এক ধরনের নিরাপত্তা 'কর'। এটা নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও সংসার বিরাগী ধর্মগুরুদের ওপর আরোপিত হয় না। প্রকৃতপক্ষে এটা মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাস করে প্রতিরক্ষাকার্যে তাদের কায়িক অংশগ্রহণ না করার বিনিময়ে প্রদেয় কর। যুদ্ধকালীন সময়েও এই করের বিনিময়ে অমুসলিমরা মুসলিম রাষ্ট্রে সব রকম নাগরিক অধিকার ভোগ করে। ৩০, ৩১ ও ৩২ নম্বর আয়াতে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের দ্বারা একত্ববাদ কিভাবে বিকৃত হয়েছে এবং একত্ববাদ থেকে কিভাবে বিচ্যুত হয়েছে তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তারা তাদের প্রয়াত নবী-রাসুলদের ওপর মিথ্যা আরোপ করে আল্লাহর সঙ্গে শরিক বানিয়ে নিয়েছিল এবং তাদের ধর্মগুরুদের অধিক ক্ষমতা দিয়ে ধর্মকে বিকৃত করার সুযোগ করে দিয়েছিল।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.