রাজশাহীর সাজাপ্রাপ্ত ১০ জেএমবি সদস্য জামিনে মুক্ত by আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ

রাজশাহীতে জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ৩০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত জেএমবির ১১ জন সদস্য আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১০ জন এখন বাইরে রয়েছেন। একজন অন্য মামলায় কারাগারে আছেন।
জামিনে মুক্ত ব্যক্তিরা হলেন: পুঠিয়া উপজেলার মাহেন্দ্রা গ্রামের মেরাজুল ইসলাম, মুনসুর রহমান, ইব্রাহিম হোসেন, জাকির হোসেন; পবা উপজেলার মধ্যপুঠিয়াপাড়া গ্রামের মোজাম্মেল হক; বাগমারা উপজেলার ক্ষুদ্রলিনা গ্রামের এনামুল


হক; রাজশাহী মহানগরের মতিহার থানার নলখোলার জহুরুল ইসলাম ও দিঘির পারিলা গ্রামের আবু জাফর এবং জয়পুরহাটের ভাদসা গুচ্ছগ্রামের বিপ্লব হোসেন, জামালপুরের শেখের ভিটা গ্রামের গোলাম মোস্তফা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাচৌকা গ্রামের শাহ ওয়ালী উল্লাহ।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ২০০৫ সালের জুলাই মাসে পবা উপজেলার একটি বাড়িতে গোপন বৈঠকের সময় জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ওই ১১ জন সদস্যকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরে জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে বাংলা ভাইয়ের সহযোগী হিসেবে তাঁদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়। ২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল রাজশাহীর বিশেষ দায়রা জজ আদালত-১-এ এই মামলার রায়ে প্রত্যেক আসামির ৩০ বছরের কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রাজশাহীর কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, গত জুন মাসে এই মামলার নয় আসামি এবং সেপ্টেম্বর মাসে একজন হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে কারাগার থেকে ছাড়া পান। এ ছাড়া এক বছর আগেই শাহ ওয়ালী উল্লাহ জামিন পান। তবে অন্য মামলায় বর্তমানে তিনি দিনাজপুর জেলা কারাগারে বন্দী আছেন।
গত শুক্রবার পুঠিয়ার মাহেন্দ্রা গ্রামে গিয়ে জামিনে মুক্তি পাওয়া ইব্রাহিমের সঙ্গে কথা হয়। তিনি গ্রেপ্তারের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি দাবি করেন, তিনি জেএমবির সদস্য ছিলেন না। অন্যদের সঙ্গে তিনি পবা উপজেলার মধ্যপুঠিয়াপাড়া গ্রামে তাবলীগ জামায়াতের দাওয়াত দিতে গিয়েছিলেন। তখন বৃষ্টি শুরু হলে তাঁরা ওই গ্রামের মোজাম্মেল হকের বাড়িতে আশ্রয় নেন। মোজাম্মেলের সঙ্গে তাঁর প্রতিবেশীর শত্রুতা ছিল। ওই প্রতিবেশী পুলিশকে খবর দিয়ে তাঁদের ধরিয়ে দিয়েছে।
তবে পুলিশ সূত্র জানায়, তাঁরা তাবলীগ জামায়াতের কেউ না। মূলত জেএমবিকে সংগঠিত করতে দাওয়াতি কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। এরই অংশ হিসেবে ওই রাতে তাঁরা বৈঠক করছিলেন।
ইব্রাহিমের সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তাঁর চাচাতো ভাই মুনসুর রহমান। তিনি দর্জির কাজ করতেন। মুনসুর প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, একই গ্রামের স্বর্ণকার জাকির হোসেনের সঙ্গে দাওয়াতি কার্যক্রমে গিয়ে তিনিও পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন। তিনি বলেন, এই মামলা থেকে বের হয়ে আসতে তাঁর পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে।
জামিনে মুক্তি পাওয়া মেরাজুল ইসলামের বাড়িতে গেলে তাঁর মা বলেন, মেরাজুল এখন একটি বেসরকারি জুট মিলে কাজ করেন।
জানতে চাইলে রাজশাহীর পুলিশ সুপার এস এম রোকন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, জেএমবির এসব সদস্য জামিনে থাকলেও পুলিশের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.