পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়-হরতালে বাড়াবাড়ি

ঢাকা সিটি করপোরেশন বিভক্তির প্রতিবাদে ৪ ডিসেম্বর বিএনপির ডাকা হরতাল চলাকালে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যেসব ধ্বংসাত্মক ও সংঘাতময় ঘটনা ঘটেছে, তাতে হরতাল আহ্বানকারী ও তাতে বাধাদানকারী উভয় পক্ষের বাড়াবাড়ি লক্ষ করা গেছে।


হরতালের ডাক দিয়েছিল বিএনপি, তাদের দায়িত্ব ছিল হরতাল যেন শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয় সেই চেষ্টা করা। কিন্তু বিএনপির কর্মী-সমর্থকেরা সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনের অপেক্ষায় না থেকে বরং উল্টো ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করতে যানবাহনে ভাঙচুর চালিয়েছেন, কয়েক ডজন গাড়ি তাঁরা ভাঙচুর করেছেন। এমনকি, হরতালকারীরা পুলিশের একটি গাড়ি ও দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গিয়ে ধৈর্য-সংযমের পরিচয় দেয়নি, বরং জবরদস্তিমূলক আচরণ করেছে। পুলিশের আচরণে মনে হয়েছে, হরতাল করাই যেন একটি বেআইনি কাজ। তারা ভুলে গেছে, শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ প্রকাশ করার অধিকার যেকোনো ব্যক্তি, সংগঠন বা রাজনৈতিক দলের রয়েছে। সেই অধিকার পালনে বাধা দেওয়া উচিত নয়, বরং পুলিশের উচিত প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ হতে সহযোগিতা করা। হরতালকারী দেখা মাত্র লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যাওয়া, কোমরে দড়ি বেঁধে ধরে নিয়ে যাওয়া পুলিশের কর্তব্য নয়।
সবচেয়ে আপত্তিকর বিষয় ছিল পুলিশের সহযোগিতায় সরকারদলীয় কর্মীদের সহিংস আচরণ। সংবাদপত্রে ছবি ছাপা হয়েছে, জজ আদালত এলাকা থেকে পুলিশ এক হরতাল-সমর্থককে কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যাচ্ছিল, হঠাৎ পুলিশের সামনেই সেই কোমরে দড়ি বাঁধা ব্যক্তিকে মারধর শুরু করে সরকার-সমর্থক এক ব্যক্তি। এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বটে, কিন্তু বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষকে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকদের সাধারণ মানসিকতার প্রতিফলন ঘটেছে এতে। তাঁরা পুলিশের সুরক্ষায় থেকে প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার পরিবর্তে বলপ্রয়োগের মানসিকতা এবং বলপ্রয়োগের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সুরক্ষা নেওয়া কোনো সভ্য গণতান্ত্রিক সমাজে কল্পনা করা যায় না। কেউ হরতাল-ধর্মঘট ডাকলে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা পুলিশের দায়িত্ব, এখানে সরকারি দলের কর্মী-সমর্থকদের কোনো ভূমিকা নেওয়া উচিত নয়। হরতাল পালন আর হরতাল প্রতিহত করার এই সহিংস চর্চা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.