পবিত্র কোরআনের আলো-মানুষকে দায়িত্বনিষ্ঠ করে তোলার জন্য আল্লাহ রাসুল ও কোরআন পাঠিয়েছেন

৮. ওয়া মা নুরছিলুল মুরছালীনা ইল্লা মুবাশ্শিরীনা ওয়া মুনযিরীনা; ফামান আ-মানা ওয়া আসলাহা ফালা খাওফুন আ'লাইহিম ওয়া লা-হুম ইয়াহ্যানূন। ৪৯. ওয়াল্লাযীনা কায্যাবূ বিআয়া-তিনা- ইয়ামাচ্ছুহুমুল আ'যা-বু বিমা কা-নূ ইয়াফছুক্বূন।


৫০. ক্বুল্ লা আক্বূলু লাকুম ই'নদী খাযা-য়িনুল্লা-হি ওয়া লা আ'অলামুল গাইবা ওয়া লা আক্বূলু লাকুম ইন্নী মালাকুন; ইন আত্তাবিউ' ইল্লা মা ইঊহা ইলাইয়্যা; ক্বুল হাল ইয়াছতাওয়িল আ'মা ওয়ালবাসীরু আফালা তাতাফাক্কারূন।
৫১. ওয়া আনযির বিহিল্লাযীনা ইয়াখা-ফূনা আঁইইউহ্শারূ ইলা রাবি্বহিম লাইছা লাহুম্ মিন্ দূনিহী ওয়ালিইয়্যুওঁয়ালা শাফীউ'ন লাআ'ল্লাহুম ইয়াত্তাক্বূন।
[সুরা : আল আনয়াম, আয়াত : ৪৮-৫১]
অনুবাদ :
৪৮. আমি তো নবী-রাসুলদের পাঠিয়েছি সৎকর্মের শুভ পরিণতি সম্পর্কে সুসংবাদ প্রদান এবং অসৎকর্মের অশুভ পরিণতির জন্য সতর্ক করতে। অতঃপর যে ব্যক্তি ইমান আনবে এবং তাদের প্রদর্শিত পথে নিজেদের সংশোধন করে নেবে এমন সব লোকের কোনো ভয় নেই এবং তাদের চিন্তিত হওয়ারও কিছু নেই।
৪৯. অন্যদিকে যারা আমার আয়াতগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে চাইবে তাদের সেই নাফরমানির জন্য প্রাপ্য শাস্তি তাদের ঘিরে ধরবে।
৫০. (হে নবী!) আপনি বলুন, আমি তো তোমাদের বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ধনভাণ্ডার রয়েছে, আর আমার কাছে বিমূর্ত জগতের সব খবরও নেই। আর আমি তো তোমাদের এ কথাও বলি না যে, আমি একজন ফেরেশতা। আমি কেবল সেই ওহিরই অনুসরণ করি, যা আমার ওপর নাজিল করা হয়। আপনি বলুন, অন্ধ আর চক্ষুষ্মান ব্যক্তি কি কখনো সমান হতে পারে? তোমরা কি (এসব বিষয়) একেবারেই ভেবে দেখো না?
৫১. (হে নবী!) আপনি এই কোরআনের মাধ্যমে সেসব লোককে পরকালের ব্যাপারে সতর্ক করে দিন যারা এ ভয় করে যে তাদেরকে তাদের প্রভুর সামনে একত্র করা হবে। সেদিন তাদের জন্য তিনি ছাড়া কোনো বন্ধু বা কোনো সুপারিশকারী থাকবেন না। এর ফলে হয়তোবা তারা দায়িত্বনিষ্ঠ হয়ে ওঠবে।
ব্যাখ্যা
এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে এ কথা আরো স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, তিনি তাঁর রাসুল মুহাম্মদ (সা.) এবং এই কোরআন কেন পাঠিয়েছেন। রাসুলকে পাঠানো হয়েছে মানব জাতিকে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য এবং সতর্ক করার জন্য। যারা সৎ কাজ করবে, রাসুলের প্রদর্শিত পথে চলবে তাদের জন্য রয়েছে পুরস্কার, সম্মান ও শুভ পরিণতি। আর যারা অসৎ কাজ করবে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্য হবে তাদের জন্য এতে রয়েছে ভয়ংকর শাস্তির সতর্কবাণী। 'বাশিরান-ওয়া নাজিরান' শব্দ যুগলের অর্থ এই 'সুসংবাদ দান ও সতর্কীকরণ'। ৪৮ নম্বর আয়াতে এই বিষয়টা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। অন্যদিকে ৪৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, এর বিপরীত চিত্রটির কথা। যারা আল্লাহর আয়াতগুলোকে অস্বীকার করবে, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। উল্লেখ করা প্রয়োজন, কাফেররা যে রাসুল (সা.)-এর কাছে মুজিজা দেখার দাবি জানাত এরই জবাবে এ আয়াতে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে রাসুলের প্রকৃত কাজটি কী।
৫০ নম্বর আয়াতে খুব স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে, রাসুল আসলে কী ও কেমন। রাসুল প্রকৃত অর্থেই একজন মানুষ। তাঁর মধ্যে অলৌকিকতা কিছু নেই। তিনি আল্লাহর কাছ থেকে ওহি লাভ করেছেন এবং তিনি পূত-পবিত্র চরিত্রের অধিকারী। সুতরাং তাঁর কাছ থেকে অলৌকিকতা দেখতে চাওয়া খামখেয়ালিপনা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাঁর কাছ থেকে মানুষ শিক্ষা নেবে দায়িত্বনিষ্ঠতা, আল্লাহর কাছে আত্মনিবেদন এবং সত্য ও ন্যায়ের প্রতি দ্ব্যর্থহীন অঙ্গীকার। ৫১ নম্বর আয়াতে এই বিষয়ই স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। মানুষের পক্ষে সৎকাজের প্রতি আগ্রহী হওয়া এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকা তখনই সহজ হয় যখন সে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতায় বিশ্বাস করে। প্রত্যেক মানুষকে শেষ বিচারের দিন আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে, এই বিশ্বাসে যারা সত্যিকারে অবিচল তারাই মুত্তাকি বা দায়িত্বনিষ্ঠ হয়ে উঠতে পারে বলে আশা করা যায়।

গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.