বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় : আজ স্বপ্ন পূরণের জয়যাত্রা by পুলক চ্যাটার্জি

রিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশা ও স্বপ্নের প্রতীক। আজ মঙ্গলবার প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্লাসের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে স্বপ্নের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়যাত্রা। 'জ্ঞানই শক্তি' স্লোগানকে তুলে ধরে জিলা স্কুলের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বরণ ও আনুষ্ঠানিক ক্লাস শুরুর উদ্বোধন করবেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।


বরিশালে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুমোদন দেয়। ২০০৯ সালের মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন এবং এ জন্য ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্প মেয়াদ ধরা হয়েছে। ২০১০ সালের ১৬ জুন জাতীয় সংসদে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সংশোধন করে করা হয় 'বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়'। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস হবে সদর উপজেলার কর্ণকাঠিতে। মোট ৫০ একর জমির ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নির্মিত হবে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ সদস্যের প্রথম সিন্ডিকেট গঠন করা হয় ২০১১ সালের ২৯ জুন। ২০১১ সালের ৯ জুলাই সিন্ডিকেটের প্রথম সভার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। ওই সভায় চলতি শিক্ষাবর্ষে (২০১১-১২) ৪০০ শিক্ষার্থী ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত ভর্তি ফরম বিতরণ করা হয়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ওইদিন ঢাকাস্থ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী কার্যালয়ে অনলাইনে ভর্তির আবেদনপত্র গ্রহণ উদ্বোধন করেন। শিক্ষামন্ত্রী মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে রাশেদুল ইসলাম নামে এক ছাত্রের পাঠানো আবেদন গ্রহণ করে ভর্তি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সদর উপজেলার কর্ণকাঠিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর আগে ২০০৯ সালের ২৮ অক্টোবর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বরিশালে এসে কর্ণকাঠিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের স্থান নির্ধারণ এবং দ্রুততার সঙ্গে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। কর্ণকাঠিতে অধিগ্রহণ করা ৫০ একর জমিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসে অবকাঠামো নির্মাণের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। ওই ক্যাম্পাসে প্রাথমিকভাবে ৪টি ভবন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে দুটি একাডেমিক ভবন এবং দুটি প্রশাসনিক ভবন। ৪টি ভবন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। দেড় বছরের মধ্যে এ ৪টি ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ৬টি বিভাগের ৪০০ শিক্ষার্থী নিয়ে আজ ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু করবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথম ব্যাচের ৪০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে মার্কেটিং ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ৭০ জন এবং ইংরেজি, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি ও গণিত বিভাগে ৬৫ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১৫ জন।
বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের ফসল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুর দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে_ শোভাযাত্রা, উদ্বোধনী পর্ব, নবীনবরণ, চা-চক্র এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আজ সকাল ১০টায় নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে থেকে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে শোভাযাত্রার সূচনা করবেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শোভাযাত্রাসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, বরিশাল সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. হারুন অর রশিদ, ইতিহাসবিদ ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য সিরাজউদ্দিন আহম্মেদ এবং সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর মোঃ হানিফ। শোভাযাত্রা জিলা স্কুলে স্থাপিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে গিয়ে শেষ হবে। ওই ক্যাম্পাসেই শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. হারুন অর রশীদ খান ক্লাস শুরুর মাহেন্দ্রক্ষণে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা ব্যক্ত করে বলেন, অবস্থানগত কারণে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হবে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে আকর্ষণীয় ক্যাম্পাস। একদিকে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ, অপরদিকে নিকটবর্তী দুর্গাপুরে স্থাপিত হবে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। কীর্তনখোলা নদীর অপর প্রান্তে স্থাপিত হবে মেরিন একাডেমী। ফলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হবে বিশেষ জ্ঞানার্জনের পাদপীঠ। প্রফেসর ড. হারুন অর রশিদ বলেন, দেশি-বিদেশি উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে নেটওয়ার্কিং সৃষ্টির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়াই তার বিশেষ ইচ্ছা। তিনি বলেন, কৃষি ও মৎস্যভিত্তিক অঞ্চল হিসেবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এগ্রিকালচার ও ফিশারি অনুষদ খোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সদস্য ও বরিশাল শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. বিমল কৃষ্ণ মজুমদার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক যাত্রার সাফল্য কামনা করে বলেন, প্রথম ব্যাচে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে মেধাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া না গেলেও যে ক'জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তারা শিক্ষা কার্যক্রম রীতিমতো চালিয়ে নিতে পারবেন। এ ছাড়া বিশেষ বিষয়গুলোতে ভিজিটিং প্রফেসর নেওয়া হবে। সুতরাং শিক্ষার্থীদের কোনো রকম সমস্যা হবে না। প্রফেসর ড. বিমল কৃষ্ণ মজুমদার জানান, ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের যাতে অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তায় থাকতে না হয়, তারা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে পড়াশোনা করতে পারে এ জন্য বিভিন্ন ব্যাংক এবং ধনাঢ্য ব্যক্তিদের আহ্বান জানানো হয়েছে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়ার জন্য। এ ক্ষেত্রে ব্যাপক সাড়াও পাওয়া গেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, একদিন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় হবে উপমহাদেশের আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments

Powered by Blogger.