ইতিবাচক, তবে জনপ্রত্যাশা পূরণ হয়নি-মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন

ন্ত্রিত্ব কোনো মেয়াদি চাকরি হিসেবে দুনিয়ার কোথাও কখনো বিবেচিত হয়নি। ব্রাজিলে গত ১১ মাসে অর্ধডজন মন্ত্রী দুর্নীতি ও অযোগ্যতার দায়ে অপসারিত হয়েছেন। বাংলাদেশের বাস্তবতায় মনে হয়, যত অনিয়ম-অঘটনই ঘটুক না কেন, মন্ত্রিত্ব যথেষ্ট পোক্ত চাকরি। আওয়ামী লীগের বৃহৎ কলেবরের মন্ত্রিসভা নিয়ে গোড়া থেকেই নানামুখী সমালোচনা ছিল। বিশেষ করে বলা হয়েছিল, অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতার চেয়ে অনেকের ক্ষেত্রে আনুগত্যই ছিল মন্ত্রিত্ব পাওয়ার চাবিকাঠি।


অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্ব আনার কারণে যে ধরনের গতিশীলতা সৃষ্টির আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছিল, তা গত তিন বছরে অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে।
বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সৈয়দ আবুল হোসেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ফারুক খান, নৌ খাতের অনিয়মের জন্য শাজাহান খানসহ কয়েকজন মন্ত্রী ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়ে আসছিলেন। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে যাঁদের সমালোচনা হয়নি, সে ক্ষেত্রে অযোগ্যতা ও অদক্ষতার বিরাট অভিযোগ রয়েছে। সার্বিকভাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দ্বিতীয় মন্ত্রিসভা তার আগের মন্ত্রিসভার চেয়ে বেশি সাফল্য দেখাতে সক্ষম হয়েছে তেমনটি কেউ মনে করেন না। সে কারণে রদবদল নিয়ে মানুষের মধ্যে তেমন আশার সঞ্চার ঘটেনি। এমনকি সরকারি দলও সন্তুষ্ট হতে পেরেছে বলে জানা যায় না; যদিও অনেকেই বলছেন, ক্ষমতাসীন দল যেখানে অন্যের পরামর্শ গ্রহণে একেবারেই অনাগ্রহী সেখানে সমালোচনার পটভূমিতে যোগাযোগ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দুই মন্ত্রীকে সরানোটা তাৎপর্যপূর্ণ। এতে অন্তত প্রমাণ মেলে, খেয়ালখুশি-মাফিক সরকার চালানোর সুযোগ নেই।
তবে মন্ত্রিসভা রদবদলে জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন আছে বলে মনে হয় না। সৈয়দ আবুল হোসেন গণমাধ্যমের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। কারণ, সংসদে বিরোধী দল না থাকার কারণে তিনি গণমাধ্যমের খোরাকে পরিণত হয়েছিলেন। যোগাযোগ থেকে সরিয়ে তাঁকে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় দেওয়া হয়েছে। যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনও (বিটিআরসি) নাকি তাঁর অধীনে নেওয়া হচ্ছে। এখন এই সংস্থাটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে ভাগ করে আলাদা রেল মন্ত্রণালয় করা হয়েছে। এটি দেশবাসীরও দাবি ছিল। কিন্তু বিজ্ঞান ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে কী কারণে দুই টুকরো করা হলো, তার কোনো যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা নেই। দুটি মন্ত্রণালয় ভেঙে চারটি মন্ত্রণালয় করার মতো উদ্যোগ প্রশাসনিক সংস্কার কমিটির আগেকার সুপারিশেরও পরিপন্থী। ওই কমিটি এবং উন্নয়ন সহযোগীরা বরাবরই বাংলাদেশের জন্য মাথাভারী প্রশাসন এড়ানো এবং মন্ত্রিসভার কলেবর ছোট রাখার সুপারিশ করে আসছে।
দরকার ছিল ছাঁটাই, কিন্তু হলো সামান্য রদবদল। প্রতিবারই দেখা যায়, মন্ত্রিসভার সদস্যদের অনিয়ম ও অদক্ষতা প্রশ্রয় দেওয়া হলে দলকে তার চরম খেসারত দিতে হয়। গত দুটি সাধারণ নির্বাচনের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্যের ভরাডুবি। সরকার যদি শিক্ষা নিতে চায়, তবে সময় হয়তো এখনো অবশিষ্ট রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.