নতুন বাস্তবতার সুযোগ নিতে হবে-রোহিঙ্গা শরণার্থী

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় সফর নানা দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। জ্বালানি-সহায়তা, বাণিজ্য সুগম করাসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়েই আলোচনা হয়েছে। তবে মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়টিই সবচেয়ে জ্বলন্ত। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, মিয়ানমারের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে শরণার্থীদের ফেরত নেওয়ার স্পষ্ট অঙ্গীকার একটা অগ্রগতি।


অতীতেও এ ধরনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তার বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। তা ছাড়া, কেবল ফিরিয়ে নিলেই হচ্ছে না, মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে তাদের মর্যাদা না দিলে শরণার্থীরাও ফিরতে রাজি হবে না; অন্যদিকে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও যেনতেন প্রত্যাবর্তন বিষয়ে প্রশ্নমুখর।
এ বিষয়ে গত প্রায় দুই দশকের অভিজ্ঞতা বানরের তৈলাক্ত লাঠি বেয়ে ওঠার মতো। এর আগে ২০০৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মিয়ানমার সফরের সময়ও শরণার্থী প্রত্যাবাসনে চুক্তি হিয়েছিল। কিন্তু ২০০৫ সালে সেই প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। মিয়ানমার সরকার এ বিষয়ে কখনোই দায়িত্বশীল ছিল না। তবে মন্দের ভালো এই যে, সামরিক বাহিনী-সমর্থিত হলেও বর্তমানে মিয়ানমারে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতাসীন। তাদের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা যেমন অবান্তর নয়, তেমনি বাংলাদেশকেও আরও তৎপর হওয়া প্রয়োজন।
১৯৯০-৯১ সালে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী সামরিক সরকারের উৎপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সহযোগিতায় এদের বেশির ভাগকেই ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু এখনো প্রায় আড়াই লাখ শরণার্থী বাংলাদেশের মাটিতে অবস্থান করছে। এদের অনেকেই আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত না থাকায় চিহ্নিত করা কঠিন। এই বাড়তি উন্মূল জনসংখ্যার ভার নিতে গিয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে অর্থনৈতিক চাপ তৈরি হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যাও ঘটছে। এমনকি প্রায় ৬০ হাজার রোহিঙ্গা জাল বাংলাদেশি পাসপোর্টে সৌদি আরবে গিয়েছে বলে প্রমাণ মিলেছে।
বাংলাদেশ গোড়া থেকেই মানবিকতা দেখিয়ে তাদের আশ্রয় দিয়েছে এবং বাংলাদেশের ভূমি ও অর্থনীতির সুবিধাও তারা পাচ্ছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মিয়ানমারকে যতটা চাপ দেওয়ার কথা, ততটা দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশের অসুবিধার দিকটিও তাদের নজরে পড়ছে বলে মনে হয় না। জটিল রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে এ সমস্যা সংকটে গড়াতে পারে—বাংলাদেশের এই উদ্বেগ ক্ষমতাবান আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বুঝতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.