এই যোগসাজশের অভিযোগ গুরুতর-সরকারি হাসপাতালে রোগনির্ণয়

ঙ্গলবারের প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগনির্ণয়-ব্যবস্থার যে চিত্র পাওয়া যায়, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। হাসপাতালটির পাঁচটি বিভাগের মোট ৪২টি রোগনির্ণয় যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে আছে; এই সুযোগে বেসরকারি রোগনির্ণয় কেন্দ্রগুলো ওই হাসপাতালের রোগীদের নিয়ে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।


প্রথম আলোর প্রতিবেদনটির সঙ্গে প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর শরীর থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করছেন বেসরকারি একটি রোগনির্ণয় কেন্দ্রের একজন কর্মী। অভিনব চিত্র বটে।
দুশ্চিন্তার বিষয় কয়েকটি। প্রথমত, সরকারি হাসপাতালটির নিজস্ব রোগনির্ণয় যন্ত্রপাতিগুলো দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে আছে, কিন্তু সেগুলো মেরামত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কেন হয়নি, এই প্রশ্নের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অন্যান্য বিষয়সহ আরও একটি বিষয়: ওই হাসপাতালের একশ্রেণীর চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ানের ব্যক্তিগত স্বার্থ। অভিযোগ আছে, তাঁদের যোগসাজশেই হাসপাতালটিতে অনুপ্রবেশ ঘটেছে বেসরকারি রোগনির্ণয় কেন্দ্রগুলোর। শুধু তা-ই নয়, সরকারি হাসপাতালটিতে চাকরি করার পাশাপাশি তাঁরা বেসরকারি রোগনির্ণয় কেন্দ্রগুলোতেও সময় দেন।
দ্বিতীয়ত, এমন অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায় যে রোগনির্ণয় কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে চিকিৎসকেরা প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে রোগীদের অতিরিক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে থাকেন। সেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার গুণগত মান নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন থেকে যায়। ফলে সুচিকিৎসা নিশ্চিত হয় না কিন্তু রোগীদের প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সরকারি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে থাকার পরও যদি রোগীদের বেসরকারি রোগনির্ণয় কেন্দ্রগুলোর মুনাফালিপ্সার শিকার হতে হয়, তবে এর চেয়ে দুঃখজনক বিষয় আর কী হতে পারে?
তৃতীয়ত, সরকারি হাসপাতালের রোগনির্ণয় ব্যবস্থার অকার্যকারিতা যদি সেই হাসপাতালের চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ানদের জন্য লাভজনক একটা ব্যাপার হয়, তবে তাঁরা চাইবেন হাসপাতালের রোগনির্ণয়ের যন্ত্রপাতি যেন সব সময়ই বিকল থাকে। এমনকি সচল যন্ত্রপাতিও তাঁরা অব্যবহূত অবস্থায় ফেলে রেখে বেসরকারি রোগনির্ণয় কেন্দ্রগুলোর ব্যবসার পথ খোলা রাখবেন।
শুধু রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নয়, আরও অনেক সরকারি হাসপাতালের রোগনির্ণয় ব্যবস্থার চিত্র কমবেশি একই রকম। কিন্তু চিকিৎসক-টেকনিশিয়ানদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো সত্য হলে তা শুধু নৈতিকভাবেই অগ্রহণযোগ্য নয়, গুরুতর অপরাধের পর্যায়েও পড়ে। সরকারি হাসপাতালগুলোকে এই দুরবস্থা থেকে উদ্ধার করা একান্ত জরুরি। বেসরকারি রোগনির্ণয় কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সরকারি হাসপাতালগুলোতে চাকরিরত চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ানদের সব ধরনের সংশ্লিষ্টতা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করার সময় এসেছে।

No comments

Powered by Blogger.