ট্রানজিট হোক বার্গেনিং চিপস by মোঃ মিজানুর রহমান

বিশ্বায়নের যুগে বাংলাদেশ একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হয়ে থাকতে পারে না। বরং ভৌগোলিক অবস্থানগত বিশেষ সুবিধা ভোগ এবং তা ব্যবহার করে অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে পারে। ট্রানজিট নতুন কোনো বিষয় নয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অনেক দেশ ট্রানজিটের মাধ্যমে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্যকে বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। মনে রাখতে হবে, এখন বিশ্বায়নের যুগ, আগে ছিল স্নায়ুযুদ্ধের যুগ। সময়ের সঙ্গে গতি ও প্রকৃতি পাল্টে যায়। তাই বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে।


ট্রানজিট হতে পারে একটি বার্গেনিং চিপস। এ বার্গেনিং চিপসকে কাজে লাগিয়ে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন, সীমান্ত সমস্যা, সমুদ্রসীমা চিহ্নিতকরণ এবং বাণিজ্য ঘাটতিসহ সব অমীমাংসিত বিষয়ের সমাধান করার সুযোগ হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে সমতা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে দরকষাকষির মাধ্যমে সর্বোচ্চ স্বার্থ আদায় করতে হবে। ট্রানজিটের পক্ষে অবস্থান নিয়েও জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা যায়। ভারতকে ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার নামে যে ভারতবিরোধী মনোভাব তা একেবারেই অর্থহীন। আর ট্রানজিট শুধু ভারতকেই নয়, নেপাল-ভুটানসহ অন্য প্রতিবেশী দেশগুলোকেও দেওয়া হবে। আমার জানা মতে, ট্রানজিটের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত কোনো দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন তো হয়ইনি, বরং অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে। আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুযায়ী, ট্রানজিট চুক্তির অধীনে কোনো ধরনের সামরিক সরঞ্জাম, অস্ত্র, গোলাবারুদ বা সামরিক লোকজনের চলাচলের সুযোগ নেই। ট্রানজিটের মাধ্যমে কেবল বাণিজ্য এবং পরিবহন চলাচলের সুবিধা রয়েছে। ভারতকে ট্রানজিট প্রদানের ফলে সমন্বিত ট্রানজিট ফিসহ আমরা যে রাজস্ব আয় এবং অন্যান্য খাতের আয়ের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে ত্বরান্বিত করতে পারি তার একটি রূপরেখা দিতে চাই।
প্রথমে আমরা বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করতে পারব। আমরা জানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অভাবে কৃষক পর্যাপ্ত সেচ দিতে পারে না, প্রয়োজনীয় সার পায় না, হাজার হাজার অ্যাপার্টমেন্ট ব্যবহারের অযোগ্য থাকে। আর এ ক্ষেত্রে ট্রানজিটের মাধ্যমে ভুটানের উদ্বৃত্ত ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ থেকে এবং ভারত, মিয়ানমারসহ অন্যান্য দেশ থেকে চাহিদামতো বিদ্যুৎ ও গ্যাস আমদানি করতে পারলে একটি বিনিয়োগ বন্ধের পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব। দ্বিতীয়ত, শিল্পায়নের ক্ষেত্রে নতুন নতুন শিল্প স্থাপনা যেমন পোশাক শিল্প, পাট শিল্প, চামড়া শিল্প এবং ওষুধ শিল্প প্রভৃতি স্থাপনা তৈরি করা যাবে। সেখানে কর্মসংস্থান হবে লাখ লাখ বেকার মানুষের। তৃতীয়ত, ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহারের মাধ্যমে নেপাল-ভুটানসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং আমাদের পণ্যগুলো বেশি করে রফতানি করা যাবে। ভুটানের বাজারে আমাদের দেশের 'প্রাণ কোম্পানির' যে জনপ্রিয়তা রয়েছে ট্রানজিটের মাধ্যমে এ জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ভুটানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর বাজার আয়ত্ত করা যাবে। চতুর্থত, যোগাযোগ তথা অবকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করলে ব্যাপক বিপ্লব সাধিত হবে। তখন দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে উৎসাহী হবে। দেশে অর্থনীতির চাকা আরও সচল হবে। এককথায়, ট্রানজিটের মাধ্যমে অমীমাংসিত বিষয়গুলোকে দূর করে আমরা অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে ত্বরান্বিত করতে পারব।
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, প্রাইম ইউনিভার্সিটি
 

No comments

Powered by Blogger.