অবাধ তথ্যপ্রবাহ-নিশ্চিত হোক সবার অধিকার

থ্য পাওয়া মানুষের অধিকার। দেশের মানুষের জন্য তথ্যপ্রবাহ অবাধ করতে তথ্য কমিশন গঠন করা হয়েছিল ২০০৯ সালে। ২০১১-এ এসে সেই তথ্য কমিশনের কার্যক্রম প্রথমবারের মতো চোখে পড়ল। তথ্য না দেওয়ায় প্রথমবারের মতো দুই সরকারি কর্মকর্তাকে ভর্ৎসনা ও জরিমানা করা হয়েছে।


তথ্যপ্রযুক্তি এখন মানুষের দোরগোড়ায় পেঁৗছে গেছে। বর্তমান মহাজোট সরকারের নির্বাচনী ওয়াদা ছিল তথ্য অধিকার আইন নিশ্চিত করা। সেই ওয়াদা পূরণ করতেই গঠন করা হয় তথ্য কমিশন। তথ্য কমিশন গঠন করার পরও তথ্যপ্রাপ্তি-সংক্রান্ত বিধিমালা, তথ্য অধিকার সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা প্রবিধিমালা, তথ্য অধিকার প্রকাশ ও প্রাপ্তি প্রবিধিমালা চূড়ান্ত করাসহ নানা জটিলতায় শুরুতে কমিশনের কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। অনেক বাধা সত্ত্বেও তথ্য কমিশন কাজ করতে পারছে এবং দেশের মানুষ তথ্য কমিশনের কাছে নিজেদের অভিযোগ তুলে ধরতে পারছে। যদিও আজকের দিনে অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগে কোনো তথ্যই গোপন থাকে না। গোপন তথ্যের ভাণ্ডার সবার জন্য যেন উন্মুক্ত করে দিয়েছে ইন্টারনেটভিত্তিক প্রতিষ্ঠান উইকিলিকস। নানা গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়ে উইকিলিকস এখন বিশ্বব্যাপী সাড়া ফেলে দিয়েছে। উইকিলিকসের তথ্যভাণ্ডারে বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাজনীতিকদের নিয়েও নানা তথ্য রয়েছে, এমনকি সরকারের নীতিনির্ধারণী অনেক কর্মকাণ্ডের নেপথ্য কাহিনীও আছে উইকিলিকসের সংগ্রহে। একটু একটু করে উইকিলিকসের ভাণ্ডার থেকে সেসব তথ্য এখন বাইরে আসতে শুরু করেছে। প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে অতীত ও বর্তমানে অনেক ঘোঁট পাকানোর চেষ্টা হয়েছে। ক্ষমতার বলয় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতার কাছের মানুষদের সম্পর্কে বিদেশি কূটনীতিকদের ধারণা সম্পর্কে নানা তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে উইকিলিকসের তথ্যভাণ্ডার থেকে। উইকিলিকস থেকে পাওয়া তথ্যে বিগত জোট সরকারের আমলের প্রভাবশালী মহল সম্পর্কে নানা তথ্য যেমন বেরিয়ে এসেছে, তেমনি বর্তমান সরকারের আমলের প্রভাবশালী মহলটি সম্পর্কে বিদেশি কূটনীতিকদের ধারণাও প্রকাশ পেয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য যে ইতিবাচক নয়, সেটা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। উইকিলিকসে প্রকাশিত তথ্যকে ভিত্তিহীন বলারও কোনো সুযোগ নেই। উইকিলিকস বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যেসব তথ্য ফাঁস করেছে, এসব তথ্যের বেশির ভাগই ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে পাঠানো।
তথ্য অধিকার আইন পাসের পর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তথ্য অধিকারের ব্যাপারে দেশের মানুষকে সচেতন করার জন্য নানা প্রচার চালানো হয়েছে। তথ্য পাওয়া মানুষের অধিকার, এই তথ্য মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও দেশের মানুষের কাছে পেঁৗছে দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, এই অধিকার দেশের মানুষ কতটা ভোগ করতে পারছে বা ভোগ করছে। প্রথমবারের মতো তথ্য কমিশনের দেওয়া রায় থেকে এটা অন্তত প্রমাণিত হয়েছে, তথ্য অধিকারের ব্যাপারে সরকার সচেতন। এখন দরকার স্বচ্ছতা ও সচেতনতা। তথ্য অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। সচেষ্ট ও আন্তরিক হতে হবে। আজ উইকিলিকস বিভিন্ন দেশের অতিগোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে, তথ্য কখনো চাপা রাখা যায় না। বেরিয়ে আসে। তেমনি দেশের অভ্যন্তরেও তথ্য গোপন করার চেষ্টা যেন না হয়। একই সঙ্গে নানা তথ্য থেকে আমাদের এখনই সচেতন হওয়ার সুযোগও আছে। এখন থেকে সচেতন হতে পারলে আমাদের আগামী দিনগুলো সুন্দর ও নিষ্কণ্টক হবে। বর্তমান সরকার ও বিরোধী দল সম্পর্কে উইকিলিকস থেকে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তা থেকে নিজেদের সংশোধনের একটা উপায়ও খুঁজে বের করতে হবে।
তথ্য কমিশনের দেওয়া প্রথম রায়কে অবশ্যই মোবারকবাদ জানাতে হবে। এই রায় থেকে মানুষের যে তথ্য অধিকার আছে, সেটা আবার প্রমাণিত হয়ে গেল। সাধারণ মানুষের এই অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সবার কাছে পেঁৗছে দিতে হবে তথ্যের অবাধ প্রবাহ।

No comments

Powered by Blogger.