নয়াদিল্লিতে বোমা হামলা-জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় সম্মিলিত প্রয়াস জরুরি

ভারতের রাজধানী নয়াদিলি্লতে হাইকোর্টের বহিরাঙ্গনে থাকা অভ্যর্থনাকক্ষে গত বুধবার সকালে এক শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণে ১২ জন নিহত এবং ৮৫ জন আহত হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে 'পাকিস্তানভিত্তিক' জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী (হুজি) এক ই-মেইল বার্তায় এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে। ভারতের পুলিশ ই-মেইলের সূত্র ধরে কাশ্মীর থেকে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকও করেছে।


হামলার পর পরই সারা ভারতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং এ সময় ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। তিনি এই হামলাকে 'সন্ত্রাসীদের কাপুরুষোচিত হামলা' হিসেবে আখ্যায়িত করে সে দেশের সব দলকে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে নামার আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেতা এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।
ভারত দীর্ঘদিন ধরেই জঙ্গি হামলার শিকার হয়ে আসছে। ভারতীয় পার্লামেন্টে হামলা, মুম্বাইয়ের হোটেলে হামলা, ট্রেনে-মার্কেটে বোমা হামলায় এরই মধ্যে ভারতে শত শত লোকের প্রাণহানি ঘটেছে। পাকিস্তান ও কাশ্মীরভিত্তিক বেশ কিছু জঙ্গি সংগঠন এখনো দেশটিতে সক্রিয় রয়েছে বলে গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়। সেখানে শুধু হুজি নয়, জৈশ-ই-মোহাম্মদ, লস্কর-ই-তৈয়বাসহ আরো কিছু জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। হুজির সঙ্গে তালিবান ও আল-কায়েদার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। পাকিস্তানেও এরা অত্যন্ত তৎপর। সেখানেও প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে বোমা হামলার ঘটনা। একই দিনে অর্থাৎ গত বুধবার পাকিস্তানের কোয়েটায় এক সেনা কর্মকর্তার বাড়িতে প্রথমে গাড়িবোমা ও পরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ২৪ জন নিহত এবং ৮২ জন আহত হয়েছেন। হুজির শীর্ষ নেতা ও আল-কায়েদার সিনিয়র সদস্য ইলিয়াস কাশ্মীরি সম্প্রতি পাকিস্তানে নিহত হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করলেও সংগঠনটির শক্তি যে কমেনি, দিলি্ল হামলার মধ্য দিয়ে তা-ই প্রমাণিত হলো। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ই-মেইল বার্তায় বলা হয়েছে যে ভারতীয় পার্লামেন্টে হামলার দায়ে জঙ্গি আফজাল গুরুকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বাতিল না করা হলে তারা এ ধরনের হামলা চালাতেই থাকবে। বাংলাদেশেও হুজি একসময় ভয়ংকর রূপে আবির্ভূত হয়েছিল। বর্তমানে এদের তেমন তৎপরতা না থাকলেও যেকোনো সময় আবার আত্মপ্রকাশ করতে পারে। বিভিন্ন সময় পাকিস্তানি এবং ভারতীয় বেশ কিছু জঙ্গি ও সন্ত্রাসী বাংলাদেশে ধরাও পড়েছে। এতে ধারণা করা যায়, আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলোরও সম্পৃক্ততা রয়েছে। কাজেই জঙ্গিবাদের হুমকিতে শুধু ভারত নয়, প্রকৃত অর্থে গোটা উপমহাদেশই নিমজ্জিত। তাই এদের দমনে তিন দেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এবং সামাজিকভাবেও ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস অত্যন্ত জরুরি। এক দেশে হামলা চালিয়ে জঙ্গিরা আরেক দেশে যেন আশ্রয় নিতে না পারে, সে জন্য দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয় থাকতে হবে। আন্তদেশীয় গোয়েন্দা নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করতে হবে। সমাজ তথা জনগণকেও এ ব্যাপারে সচেতন ভূমিকা পালনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ কখনো সমাজের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করা না গেলে উপমহাদেশের প্রতিটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতেই থাকবে।
ভারতের নয়াদিলি্লতে বোমা হামলায় নিহতদের পরিবার ও আহতদের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাচ্ছি। আমরা আশা করছি, সবার সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে অচিরেই উপমহাদেশের মানচিত্র থেকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের কালোছায়া অপসারিত হবে।

No comments

Powered by Blogger.