নতুন কমিশন গঠনে মতৈক্য চাই-ডিসিসি নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গত রোববার ৯০ দিনের মধ্যে দ্বিধাবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) নির্বাচন অনুষ্ঠান করার অনুরোধ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দিয়েছে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব কি না, এ নিয়ে সংশয় আছে। ইসি এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না জানালেও নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন রোববারই বলেছেন, মেয়াদের শেষে এসে তাঁরা ডিসিসির নির্বাচন করতে আগ্রহী নন।


আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে এ কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে; এই কমিশন যদি নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়ও, সময়স্বল্পতার কারণে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না বলেই মনে করেন ছহুল হোসাইন।
ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে সরকার শুরু থেকেই গড়িমসি করেছে। ডিসিসি ভাগ করার দোহাই দিয়ে নির্বাচন ঠেকিয়ে রাখা কিংবা নির্বাচিত প্রতিনিধির স্থলে অনির্বাচিত প্রশাসক নিয়োগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আছে মাত্র দুই মাস। তারপর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। আইন অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন। কিন্তু এ সরকার শুধু যদি আইন মাথায় রেখেই নতুন নিয়োগের উদ্যোগ নেয় তাহলে প্রশ্ন উঠবে, বিরোধী দলগুলো আপত্তি জানাতে পারে। বিরোধী দল ইতিমধ্যে বলে দিয়েছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, তারা আলোচনার ভিত্তিতে নতুন কমিশন গঠন করতে আগ্রহী।
সরকারের এই বক্তব্য যদি আন্তরিক হয়, তাহলে মতৈক্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের সময় সরকার বলেছিল, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করা হবে। নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী হবে তখনই, যখন সব পক্ষ তার প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা বোধ করবে; সে জন্য সমঝোতার ভিত্তিতেই নতুন নিয়োগ হওয়া বাঞ্ছনীয়। বিএনপি আমলে একতরফা নির্বাচন কমিশন গঠনের পরিণতি খুব খারাপ হয়েছে। আশা করি, আওয়ামী লীগ বা মহাজোট সরকার একই ভুল করবে না।
এখন সরকারের উচিত নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া, অন্তত আলোচনার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করা। বিরোধী দলেরও কর্তব্য হবে সেই উদ্যোগে ইতিবাচকভাবে সাড়া দেওয়া, অনড় বিরোধিতামূলক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে কার্যকর রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হওয়া। আলোচনাই একমাত্র পথ। কৌশলে কাউকে নির্বাচনী যুদ্ধের বাইরে রাখা, কিংবা জয়ী হতে পারব না বলে নির্বাচন বর্জনের প্রবণতা পরিহার করতে হবে।
নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য এবং গণতন্ত্র মানুষের জন্য। এই সরল সত্যটি আশা করি ক্ষমতাসীন বা বিরোধী রাজনীতিকেরা ভুলে যাবেন না। নির্বাচন কমিশনসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠনে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে ন্যূনতম সমঝোতা ও মতৈক্যের বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.