ব্যানার-পোস্টারের রাজনীতি নেতাদের তোষামোদি by সাইফুল হক মোল্লা

নেতাদের ছবি যুক্ত করে আকর্ষণীয় পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন তৈরি করা হয়েছে। আর তা শোভা পাচ্ছে জনবহুল স্থানগুলোতে। নিজের বা সমর্থকদের টাকায় বানানো এসব পোস্টারে ছেয়ে গেছে কিশোরগঞ্জ শহর। সচেতন মহল বিষয়টিকে মেধাহীন রাজনীতিতে নেতাদের তোষামোদি হিসেবে দেখছেন।
আফজল মিয়া (ছদ্মনাম)...দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় কিশোরগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা। শুভেচ্ছান্তে মো. আবদুর রহমান (ছদ্মনাম), সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা...। এ ধরনের পোস্টার এখন হরহামেশাই দেখা যায়। কোনো দলের নেতা হতে চান, বা নেতা হয়ে গেছেন তাতে শুধু নয়, বিভিন্ন উৎসব ঘিরে জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে লাগানো পোস্টারে দেয়াল ভরে যায়। দলের প্রধানসহ একাধিক নেতার ছবিসহ এসব পোস্টারে প্রচারকারী নিজের নাম ও পদবি উল্লেখ করেন।
জাতীয় নেতা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা নিজের টাকায় পোস্টার ছাপিয়ে এভাবেই নিজেকে জনগণের সামনে জাহির করছেন। রাজনীতিতে নিজেকে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠা করার এই প্রবণতা বিস্তৃত হচ্ছে। এতে করে রাজনীতিতে সুযোগ্য নতুন নেতৃত্ব আসতে পারছে না। মেধাবী তরুণ ও শিক্ষিত সচেতন রাজনীতিকেরা এ ধারার সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে রাজনীতি থেকে দূরে সরে রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারি কর্মকর্তা জানান, ঢাকায় যেতে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে মহাখালী পর্যন্ত দুই দিকে শুধু পোস্টার ও ফেস্টুনই চোখে পড়ে। জনগণকে তাঁরা আর কত শুভেচ্ছা জানাবেন। লোকজন এসব কর্মকাণ্ড দেখতে দেখতে বিরক্ত। পোস্টার-রাজনীতির বেড়াজাল ও সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে সুস্থ রাজনীতির ধারায় ফিরে আসতে হবে। তবেই ভালো মানুষ ও মেধাবীরা রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন।
কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম খান বলেন, এটা একটা মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। আগে রাজনীতিতে মেধাবীরা আসতেন। তাঁরা বিভিন্ন গঠনমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে নেতৃত্ব লাভ করতেন। কর্মকাণ্ড ও ভালো বক্তব্য দিতে পারায় তাঁদের পরিচিতি রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ত। ফলে তাঁদের দুর্বল মানসিকতার শিকার হতে হতো না। নিজেকে পোস্টারের মাধ্যমে জাহির করার প্রয়োজন মনে করতেন না। আর এখন যাঁরা রাজনীতি করেন, তাঁরা রাজনীতিকে একটি শক্তি ও ব্যবসা বলে মনে করেন। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর শক্তি তাঁদের নেই। তাই তাঁরা বিভিন্ন অসুন্দর পন্থায় ব্যবসা ও ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এসব পথ অবলম্বন করেন।
জেলা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. শরীফুল ইসলামকে ইংরেজি নববর্ষের বিশাল ছবিসংবলিত পোস্টার সাঁটিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমান রাজনীতির ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার একটি অংশ পোস্টার ছাপিয়ে শুভেচ্ছা জানানো। এ থেকে পরিচিতি পাওয়া যায়। একই সঙ্গে আলোচনা-সমালোচনার বিষয়টি জেনে নিজের সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
ষাটের দশকের ছাত্রনেতা গুরুদয়াল সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান মো. নূরুল ইসলাম বলেন, তাঁদের সময় পড়াশোনা করে মেধাবীদের রাজনীতিতে আসতে হতো। মেধা ও কাজের মূল্যায়নের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হতেন। তখন কারণ ছাড়া পোস্টার-ফেস্টুন করা হলে নেতৃত্ব পর্যস্ত হারাতে হতো। আর এখন কেউ নেতা হতে চাইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ছবিসহ পোস্টার ছেপে রাস্তাঘাট-দেয়াল ভরিয়ে দেন। এটা দুর্বল রাজনীতিকের পরিচয়।

No comments

Powered by Blogger.