জয়পুরহাটে কিডনি বিক্রি-অসৎ চক্রের হোতাদের ধরুন

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, গত পাঁচ বছরে জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার ১৮ গ্রামের দুই শতাধিক অভাবী মানুষ নিতান্ত বেঁচে থাকার তাগিদে নিজেদের কিডনি বেচে দিয়েছে। এসব হতভাগ্য মানুষ হয়তো জানেও না, মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ১৯৯৯-এর ৯ ধারায় বাংলাদেশে রক্ত সম্পর্ক ও স্বামী-স্ত্রীর ১২ ধরনের সম্পর্কের বাইরে কিডনি বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।


মাত্র পাঁচ বছরে একটি নির্দিষ্ট এলাকা থেকে এত মানুষকে দালালরা ফুসলিয়ে কিডনি দিতে আগ্রহী করে তোলার পেছনে দারিদ্র্য ও এনজিও থেকে নেওয়া ঋণ শোধের তাগাদাই যে প্রধান_ তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রকাশিত রিপোর্টেই দেখা যায়, কিডনি বিক্রেতারা প্রাপ্ত টাকায় অভাব মোচন করতে পারেনি। বরং অধিকাংশেরই স্বাস্থ্যগত নানা জটিলতা নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। দালালরা প্রতিটি ক্ষেত্রেই কিডনি বিক্রেতাদের ঠকিয়েছে। তদুপরি কিডনি দানকারীর জন্য অবশ্যপালনীয় কতগুলো শর্তও এসব ক্ষেত্রে পালন করা হয়নি। সংবাদপত্রের রিপোর্টেই দেখা যায়, দেশের নামি হাসপাতাল বঙ্গবল্পুব্দ শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বারডেম, কিডনি ফাউন্ডেশন ও ইউনাইটেড হাসপাতালেই অধিকাংশ কিডনি সংযোজিত হয়েছে। এসব হাসপাতালের কারও কারও সঙ্গে কিডনি দালালচক্রের যোগসাজশ থাকাটা খুবই সম্ভব। তবে এর দায় তারা পুরোপুরি এড়িয়ে যেতে পারে না। কারণ, কিডনিদাতা ও গ্রহীতার সঙ্গে রক্ত সম্পর্কসহ আইনসিদ্ধ কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই তারা সংযোজনের অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে, অন্যথায় নয়। মানুষের অভাবের সুযোগ নিয়ে আর যা-ই হোক দান করা ছাড়া অর্থের বিনিময়ে লব্ধ কিডনি বা আইনসিদ্ধ নয় তেমন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন কোনো হাসপাতালেরই করা উচিত নয়। আর জনগণ যাতে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি নিষিদ্ধ সংক্রান্ত আইনটি সম্পর্কে সহজে অবহিত হতে পারে তার জন্য প্রচারণামূলক কর্মকাণ্ড প্রশাসনের পক্ষ থেকে চালানো উচিত। কালাইয়ের দুই শতাধিক মানুষের কিডনি বিক্রির দালালির সঙ্গে জড়িতদের এবং আইনবহির্ভূতভাবে অপারেশনের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত হতে আর কেউ উৎসাহী না হয়। যারা ইতিমধ্যে কিডনি বিক্রি করে শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছে, তাদের ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগের কি কোনো দায়িত্ব নেই?
 

No comments

Powered by Blogger.