আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ সিকিভাগও হয়নি by অমরেশ রায়

প্রায় দুই বছরে আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচিতে লক্ষ্যমাত্রার সিকিভাগও পূরণ হয়নি। কেন্দ্রের তদারকির অভাব ও দুর্বল নেতৃত্বের কারণে সারাদেশে কার্যত স্থবির হয়ে আছে এ কর্মসূচি। খোদ ঢাকা মহানগরসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক জেলায় সদস্য সংগ্রহ শুরুই হয়নি। এদিকে কর্মসূচি শেষ না হওয়ায় দেশের সিংহভাগ এলাকায় দলের তৃণমূল সম্মেলনও শুরু করা যায়নি।  ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত দলের বর্ধিত সভায় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয়


সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজের সদস্যপদ নবায়নের মাধ্যমে কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ওই সময়ই কেন্দ্র থেকে নতুন সদস্য ফরম ছাপিয়ে দলের ৭২টি সাংগঠনিক জেলার অধিকাংশে বিতরণ করা হয়। আর কর্মসূচিতে গতি আনতে ওই বছরের ১৮ মার্চ সব সাংগঠনিক জেলায় সাংগঠনিক সফরের কর্মসূচিও নেওয়া হয়। কিছুদিন চলার পর সদস্য সংগ্রহ অভিযান গতি হারিয়ে ফেলে।
সারাদেশে প্রতি ইউনিয়নে কমপক্ষে ২ হাজার করে এবং সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলো মিলিয়ে এক কোটি নতুন সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। দলের বর্তমান সদস্য এক কোটি ধরে নতুন সদস্য সংগ্রহের মাধ্যমে এ সংখ্যা দুই কোটিতে উন্নীত করাই ছিল এর উদ্দেশ্য। বিশেষ করে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে ভোট দেওয়া তরুণ সমাজসহ নারীদের নতুন সদস্য হিসেবে যুক্ত করে দলীয় রাজনীতিতে সরাসরি নিয়ে আসার উদ্দেশ্যেই এ কার্যক্রম শুরু হয়। দল ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক তৎপরতা কমে আসা, জেলায় জেলায় গ্রুপিং ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বেড়ে যাওয়া, মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দূরত্ব সৃষ্টি এবং সাত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিষ্ক্রিয়তাসহ নানা কারণে সদস্য সংগ্রহ অভিযান পূর্ণতা পায়নি বলে জানা গেছে।
এদিকে সদস্য সংগ্রহে গতি না থাকায় দলের তৃণমূল সম্মেলনগুলোও শুরু করা যায়নি। দলীয় ফোরামে বৈঠক করে গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ উপজেলা এবং এপ্রিল-জুন পর্যন্ত জেলা সম্মেলনগুলো শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্মেলন করতে হলে কাউন্সিলর নির্ধারণের লক্ষ্যে সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি শেষ করাটাই ছিল সবচেয়ে জরুরি। সদস্য সংগ্রহ শেষ না হলে সম্মেলন শুরু সম্ভব নয়_ এ বাস্তবতা থেকে তৃণমূল সম্মেলন শুরুর সময় এক দফা পিছিয়েও দেওয়া হয়। এরপরও এখন পর্যন্ত দেশের সিংহভাগ জেলায় তৃণমূল সম্মেলন শুরুই হয়নি।
দলের কমপক্ষে ৩০ জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৫টির মতো জেলায় এ কর্মসূচি এখনও শুরুই হয়নি। অনেক জায়গায় শুরু হলেও কেবল সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সদস্যপদ নবায়নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে কর্মসূচি। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত এ কার্যক্রম শুরুই করতে পারেনি। অবশ্য নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এমএ আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া উভয়েই সমকালকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির উদ্বোধনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেন, গত বছরের প্রথম ভাগে নেতাকর্মীরা দেশজুড়ে পৌরসভা ও পরে ইউনিয়ন পরিষদসহ বেশ কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এরপর বর্ষা মৌসুম শেষে শোকের মাস আগস্ট ও রোজার মাস একসঙ্গে শুরু হয়। পরে দুটি ঈদসহ নানা কারণে সারাদেশে যথাসময়ে সব জায়গায় সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করা যায়নি। এরপরও তার বিভাগে লক্ষ্যমাত্রার ৬৫-৭০ ভাগ এবং ক্ষেত্রবিশেষে ১০০ ভাগই পূরণ হয়ে গেছে।
দলের মানিকগঞ্জ জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মহিউদ্দিন নানা কারণেই তার জেলায় কর্মসূচি শুরু করা যায়নি বলে জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, ১০-১৫ দিন আগে কেন্দ্র থেকে সদস্য ফরম আনা হয়েছে। জেলা সদরে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিগগির উপজেলা পর্যায়েও বর্ধিত সভা করে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কর্মসূচি শুরু করা হবে।
ফরিদপুর জেলা সভাপতি কাজী জায়নুল আবেদীন জানান, তার জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে মাত্র ভাঙ্গা ও সদরপুর উপজেলার সদস্য সংগ্রহ শেষ হয়েছে। বোয়ালমারী উপজেলারটি হওয়ার পথে। প্রায় এক বছর আগে সদর উপজেলার কার্যক্রম শুরু হলেও বর্তমানে বন্ধ।

No comments

Powered by Blogger.