লেনদেনের ভারসাম্যে ক্রমেই অবনতি হচ্ছে

দেশের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়কালে পণ্যবাণিজ্যে ঘাটতি বাড়ার পাশাপাশি চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, আলোচ্য সময়কালে চলতি হিসাবে এক কোটি ৪০ লাখ ডলারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আর গত বছরের একই সময়ে চলতি হিসাবে ছিল ৭৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত।


আবার একই পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) চলতি হিসাবে ৪৩ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত হয়েছে। যদিও ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি প্রকাশিত প্রাথমিক প্রাক্কলনে এই চার মাসে চলতি হিসাবে ৩৭ কোটি ডলারের ঘাটতি উল্লেখ করা হয়।
সর্বশেষ পরিসংখ্যানে চার মাসের উপাত্ত সংশোধন করায় তা উদ্বৃত্ত হয়ে গেছে। তবে কীভাবে এই সংশোধন করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা জানা সম্ভব হয়নি।
চলতি হিসাবে মূলত কোনো দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেনের হিসাব প্রতিফলিত হয়। নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। মোটা দাগে এটার উদ্বৃত্ত বোঝায় যে নিয়মিত লেনদেনের ক্ষেত্রে দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে বোঝায় যে ঋণ করে সেই ঘাটতি পূরণ করতে হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে আরও দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে পণ্যবাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আর প্রথম চার মাসে ঘাটতি ছিল ২৪২ কোটি ১০ লাখ ডলার। অন্যদিকে গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে পণ্যবাণিজ্যে ঘাটতি ছিল ২৭৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
পণ্য রপ্তানি আয়ের তুলনায় পণ্য আমদানি ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়। বাংলাদেশে এই ঘাটতি বরাবরই হয়ে আসছে।
পণ্যবাণিজ্যের পাশাপাশি সেবা খাতের বাণিজ্যেও ঘাটতি বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সেবা খাতের বাণিজ্যে আয় হয়েছে ১১৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। বিপরীতে সেবা খাতের বাণিজ্যে ব্যয় হয়েছে ২৩০ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ফলে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
অন্যদিকে গত ২০১০-১১ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সেবা খাতের বাণিজ্যে ঘাটতি ছিল ৯৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
লেনদেনের ভারসাম্য সারণি পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে আর্থিক হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। তবে গত অর্থবছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ১২৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
মূলত এই সময়কালে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ও পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় আর্থিক হিসাবের ঘাটতি খানিকটা কমেছে। এই সময়কালে ৩৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। আর পুঁজিবাজারে পোর্টফোলিও বিনিয়োগ এসেছে সাড়ে আট কোটি ডলারের।
সার্বিকভাবে লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯৭ কোটি ৮০ লাখ ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

No comments

Powered by Blogger.