আহা কী আনন্দ আজ ... by ইমদাদ হক

রেডি, ওয়ান, টু, থ্রি, হুর... র... র... রে...।' চুলের সঙ্গে ম্যাচ করা কালো টুপিগুলো শূন্যে উড়ল। ক্লিক ক্লিক শব্দে আলোকিত হয়ে উঠল পুরো প্রাঙ্গণ। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীরাও যেন একই রঙের পাখি হয়ে ডানা মেলে আকাশে উড়তে চাইলেন। আনন্দে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরলেন। গাইলেন উচ্ছ্বাসের গান। শিক্ষার্থীদের অভিন্ন রঙের কালো গাউনে ভরে উঠে পুরো নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস। অন্য আর কয়টা দিনের চেয়ে ভিন্ন এদিনটি। চারদিকে হৈ-হুল্লোড় আর


চেঁচামেচি। রঙ-বেরঙের ফেস্টুন আর পোস্টার দিয়ে সাজানো পুরো ক্যাম্পাস। উৎসবমুখর পরিবেশ, গান, গল্প, আড্ডায় ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। তাদের চোখে-মুখেও আনন্দের ঝিলিক। শেষবারের মতো বন্ধুদের সঙ্গে সমবেত আড্ডায় অতীতের স্মৃতিচারণ আর ভবিষ্যতের স্বপ্নে মেতে ওঠা। শিক্ষা জীবনে তো একবারই সমাবর্তন। তাই তো বসে থাকে না হাতের ক্যামেরাও। বহু প্রতীক্ষার পর পাওয়া এদিনটি তারা স্মরণীয় করে রাখছিলেন ক্যামেরার ফ্রেমে।
গল্পে গল্পে চলে আসে আগের দিনের কথা। সেই যে পড়াশোনা শেষ করে চলে যাওয়া, কতদিন পর আবার পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা! আবার সেই পুরনো দিনের খুনসুটি। তবে এবার বাড়তি পাওনা, কারও কারও সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন আরেকটি মুখ। কেউবা কচিশিশুর মুখে আব্বু ডাকেও অভ্যস্ত। তবে গল্পের চেয়ে সবার সঙ্গে ছবি ওঠানোতেই মজা পাচ্ছিলেন তারা।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ৩ জানুয়ারি বসুন্ধরা এলাকায় নিজস্ব ক্যাম্পাসে আয়োজন করে গ্র্যাজুয়েট সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের নিয়ে 'সমাবর্তন' অনুষ্ঠানের। এ ইউনিভার্সিটির ১৫তম সমাবর্তন ছিল এটি। এবারের সমাবর্তনে এক হাজার ৭৪ শিক্ষার্থীকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেওয়া হয়। অসামান্য কৃতিত্বের জন্য ৬ শিক্ষার্থীকে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলেন মাসাদা কামাল, তাসনিম তৈয়ব, সমির আনোয়ার, নাফিস রহমান, এম ইসলাম উদ্দিন আহমেদ ও তানভীর আহমেদ চৌধুরী।
শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, শিক্ষামন্ত্রী মোঃ নুরুল ইসলাম নাহিদ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. হাফিজ জিএ সিদ্দিকী, বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান। সমাবর্তন বক্তব্য রাখেন ব্যাংকক ইউনিভার্সিটির (থাইল্যান্ড) প্রেসিডেন্ট মাথানা সান্তিবাত।
নাম রেজিস্ট্রেশনের দিন থেকেই সমাবর্তন অনুষ্ঠান ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলে জল্পনা-কল্পনা। কবে থেকে সমাবর্তন পোশাক পাবেন তারা, ওইদিন তাদের কী করতে হবে, কী ঢঙে তারা ছবি তুলবেন, কোথায় কোথায় ছবি ওঠানো হবে_ এসব প্রশ্ন যেন আর শেষ হচ্ছিল না। অবশেষে আসে কাঙ্ক্ষিত সেই দিন। আবেগাপ্টু্নত হয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা।
পড়াশোনার পাট চুকিয়েই একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি শুরু করেন সিনথিয়া। এরপর আর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়নি। ইউনিভার্সিটিতে আসার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সুযোগ মেলেনি। কে কোথায় আছে, কী করছে_ বন্ধুদের খোঁজখবর জানার আগ্রহটাও সীমাবদ্ধ ছিল নিজের মধ্যেই। অবশেষে ইউনিভার্সিটির সমাবর্তন এনে দিল সে সুযোগ। কত দিন পর প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে দেখা। জড়িয়ে ধরেন প্রিয় বান্ধবীকে। মেতে ওঠেন সেই পুরনো গল্পে। ক্লাস ফাঁকি, কফি আড্ডা, ইচ্ছামতো ঘুরতে বের হওয়া_ আরও কত কী!
নস্টালজিয়ায় ভাসতে থাকেন সমাবর্তনে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠান শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর নৈশভোজে মিলিত হন তারা। সময়টা যেন আগের চেয়ে বজ্জাত হয়ে গেছে! ঘড়ির কাঁটা লাফিয়ে লাফিয়ে চলে। শেষ হয়ে আসে প্রিয় বন্ধুদের মিলনমেলা। পুরনো স্মৃতিতে ভর করে একরাশ নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে ঘরে ফেরেন সমাবর্তনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা।

No comments

Powered by Blogger.