দুর্ভোগে সাধারণ যাত্রীরা-জেলা-উপজেলায় বাসের সংকট

সাহাব উদ্দিন (৩৪)। সপরিবারে চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার আইটপাড়া এলাকা থেকে নোয়াখালীর সেনবাগ রাস্তার মাথায় আসেন গতকাল রোববার সকালে। সকাল আটটা থেকে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও তিনি বাস পাননি। বাধ্য হয়ে তাঁকে বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে। শুধু সাহাব উদ্দিন নন, গতকাল কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের হাজারো যাত্রীকে এ ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। চার দলের চট্টগ্রাম অভিমুখে


রোডমার্চ ও কুমিল্লায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পথসভা এবং ফেনীতে সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য এসব জেলার বিএনপির নেতারা বিপুলসংখ্যক বাস, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার ভাড়া করায় সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের স্বল্পতা দেখা দেয়।
ঢাকার বাইরে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
কুমিল্লা: রোডমার্চের কারণে গতকাল নগরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল অনেকটাই ফাঁকা ছিল। মাঝেমধ্যে চাঁদপুর ও নোয়াখালীগামী কয়েকটি বাস টার্মিনাল ছেড়ে যেতে দেখা যায়।
বিএনপির সূত্র জানায়, পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় খালেদা জিয়ার পথসভায় লোকজন নেওয়ার জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও বরুড়ার সাবেক সাংসদ জাকারিয়া তাহের বরুড়া উপজেলার জন্য ৭০টি বাস ও ৮০টি ট্রাক ভাড়া করেন। তিনি সদর দক্ষিণ এলাকার জন্য ৪০টি বাস ভাড়া নেন। নাঙ্গলকোটের সাবেক সাংসদ আবদুল গফুর ভূঁইয়া ৫০টি বাসে করে পথসভায় লোক আনেন। অন্যদিকে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র মনিরুল হক ছয়টি বাস ভাড়া নেন। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিন-উর-রশিদ ৩০টি বাসে করে পথসভায় লোক আনেন। এ ছাড়া বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা পাঁচ শতাধিক মাইক্রোবাস নিয়ে পথসভায় আসেন।
কুমিল্লা মোটর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলী মনসুর ফারুক বলেন, বাসগুলো ভাড়ায় যাওয়ার কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা): ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম অংশে গতকাল যাত্রীদের গাড়ির জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা যায়। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি জি এম তাহের পলাশী জানান, চৌদ্দগ্রামের সমাবেশে আসার জন্য তাঁরা ২০টি গাড়ি ভাড়া করেন।
কুমিল্লা-ফেনী যাত্রাপথে চলাচলকারী মদিনা পরিবহনের মালিক সমিতির সভাপতি ওয়াজি উল্ল্যাহ ভূঞা বলেন, ‘জেলা থেকে আমাদের সব যানবাহন বিএনপির নেতৃবৃন্দ ভাড়া নিতে চাইলে আমরা আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তক্রমে গতকাল সব মালিককে গাড়ি চালাতে নিষেধ করি।’
নোয়াখালী: সোনাপুর, বসুরহাট, কালামুন্সী, চৌমুহনী চৌরাস্তাসহ বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড অনেকটা যানবাহনশূন্য দেখা যায়।
বেলা পৌনে ১১টার দিকে বেগমগঞ্জের জমিদারহাট বাজারে বাসের জন্য অপেক্ষমাণ ১৫-১৬ জন যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিরোধী দল রোডমার্চের জন্য বাস ভাড়া করে জনগণকে ভোগান্তির মধ্যে ফেলেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বাস পাওয়া যাচ্ছে না।
সুগন্ধা কিং বাসমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের ৯৫টির মধ্যে ৬০টি বাস রোডমার্চে যাওয়ার জন্য ভাড়া নিয়েছে বিএনপি। জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কামাক্ষ্যা চন্দ্র দাস জানান, নোয়াখালী থেকে তিন শতাধিক যাত্রীবাহী বাস লোকজনকে নিয়ে ফেনীর জনসভায় গেছে। একই সঙ্গে মাইক্রোবাস গেছে আরও কয়েক শ।
লক্ষ্মীপুর: জেলা বিএনপির সূত্র জানায়, রোডমার্চে অংশ নিতে ৫০টি বাস ও ২০টি প্রাইভেট কারযোগে নেতা-কর্মীরা গতকাল লক্ষ্মীপুর ছেড়ে যান।
শহরের উত্তর তেমুহনীর লোকাল পরিবহনের লাইনম্যান মো. রিয়াদ বলেন, সাধারণত ছয় মিনিট পরপর লক্ষ্মীপুর-চৌমুহনী যাত্রাপথে গাড়ি চলাচল করে। কিন্তু রোডমার্চের জন্য গাড়ি ভাড়া নেওয়ায় গতকাল ৩০-৩৫ মিনিট পরপর গাড়ি চলাচল করে। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়।
জেলা বাসমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম সালাহউদ্দিন বলেন, অনেক বাসমালিক ভয়ে সামান্য টাকায় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের কাছে বাস ভাড়া দিয়েছেন। তিনি বলেন, জেলা থেকে ৫০টি বাস রোডমার্চে যাওয়ায় পরিবহনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
তবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন বলেন, ভয়ভীতি নয়, ভাড়া দিয়েই মালিকদের কাছ থেকে বাস আনা হয়েছে।
রায়পুর (লক্ষ্মীপুর): চট্টগ্রাম লোকাল সার্ভিসের কেরানি নিজাম উদ্দিন জানান, রায়পুর-চট্টগ্রাম যাত্রাপথে লোকাল সার্ভিসের ১৬টি বাস চলাচল করে। এর মধ্যে ১০টি বাস ভাড়া করে নিয়ে যাওয়ায় বাসসংকট দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, অনেক যাত্রী চার-পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বাস না পেয়ে বাড়ি ফিরে যান। দুজন যাত্রী বলেন, তাঁরা চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য সকাল ১০টায় বাসস্ট্যান্ডে আসেন। কিন্তু বেলা একটা পর্যন্ত বাস না পেয়ে তাঁরা বাড়ি ফিরে যান।
ফেনী: জনসভার কারণে দুপুর থেকে ফেনী শহরে রিকশাসহ কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করতে দেননি দলীয় কর্মীরা। শহরে চলাচলকারী গ্রিন টাউন সার্ভিসের বাসগুলোও সকাল থেকে বন্ধ ছিল। সোনাগাজীর চর চান্দিয়া গ্রামের আবদুল হক জানান, টমটম ও রিকশায় চড়ে তাঁকে শহরে আসতে হয়েছে।
পরশুরাম (ফেনী): পরশুরাম-ফেনী সড়কসহ পরশুরামের বিভিন্ন সড়ক গতকাল প্রায় যানবাহনশূন্য ছিল। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব জানান, জনসভায় যোগ দেওয়ার জন্য তাঁরা ১১০টি গাড়ি ভাড়া করেন।
মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট: সকালে চারদলীয় জোটের গাড়িবহর পল্টন ছাড়িয়ে মতিঝিল শাপলা চত্বরের কাছে পৌঁছেই যানজটে পড়ে। কাঁচপুর সেতুর এক পাশে যান চলাচল সকাল থেকে বন্ধ থাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এই যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে আটকা পড়ে রোডমার্চের কয়েক হাজার গাড়ি। গাড়িবহরকে যানজট পার করিয়ে দিতে পুলিশের বেশ বেগ পেতে হয়।
বিরোধীদলীয় নেত্রীর গাড়িবহর কাঁচপুর সেতু অতিক্রম করে দুপুর পৌনে একটার দিকে। কুমিল্লার চান্দিনার মাধাইয়া পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার পথ যেতে সময় লাগে সাড়ে তিন ঘণ্টা।

No comments

Powered by Blogger.