লিড-২০১২ সম্মেলনে সায়মন ড্রিং-তরুণদের বিকাশে দুয়ার খুলে দিতে হবে

কুশে টিভির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিবিসি, রয়টার্স ও লন্ডনের দ্য টেলিগ্রাফ-এর সাবেক প্রতিনিধি সায়মন ড্রিং বলেছেন, ‘তরুণদের মধ্যে যে অমিত সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে, তার বিকাশে রাজনীতিবিদদের দুয়ার খুলে দিতে হবে। তা না হলে জগৎ পাল্টাবে না, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন পূরণ হবে না।’ দক্ষিণ এশিয়ার তরুণদের দুই দিনের সমাবেশের গণমাধ্যমবিষয়ক অধিবেশনে গতকাল রোববার বক্তারা এ অভিমত দেন। সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড


ইন্ডাস্ট্রি এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) যৌথভাবে ‘লিড-২০১২’ শীর্ষক দুই দিনের এ সম্মেলনের আয়োজন করে। ‘হোয়াট ডাজ ইট টেক টু কানেক্ট অ্যান্ড ইন্সপায়ার?’ শীর্ষক অধিবেশনে সঞ্চালনা করেন ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক ও প্রকাশক মাহ্ফুজ আনাম। দেড় ঘণ্টার আলোচনায় প্যানেল আলোচকেরা নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা বলেন। এরপর তাঁরা সমাবেশে আগতদের প্রশ্নের উত্তর দেন।
একুশে টিভির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিবিসি, রয়টার্স ও লন্ডনের দ্য টেলিগ্রাফ-এর সাবেক প্রতিনিধি সায়মন ড্রিং নিজের অভিজ্ঞতার কথা শোনাতে গিয়ে বলেন, চার দশকে পৃথিবীর নানা প্রান্তে অন্তত ২২টি যুদ্ধ ও আন্দোলনের জন্য তিনি প্রতিবেদন সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল ২০০০ সালে একুশে টিভির যাত্রা। তিনি বলেন, ‘তরুণেরা যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত একুশে টিভি। আমরা তিন শর বেশি সহকর্মীর ওপর আস্থা রেখে যাত্রা শুরু করেছিলাম, যাদের বেশির ভাগেরই টিভিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু তারা তাদের অদম্য ইচ্ছাশক্তি, প্রত্যয় দিয়ে একুশে টিভির সাফল্য রচনা করেছিল।’
স্মৃতিতে ফিরে গিয়ে আবেগ্লাপুত সায়মন ড্রিং বলেন, ‘এর দুই বছর পর আমার জীবনে এল বিষাদময় দিন, যেদিন আদালতের রায়ে বন্ধ হয়ে গেল একুশে টিভি।’
পাকিস্তানের ডন পত্রিকার কলামিস্ট ভারতীয় সাংবাদিক জাবেদ নাকভি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে শুধু বাংলাদেশ ও পাকিস্তানই নয়, শ্রীলঙ্কা কিংবা নেপালের কেন অনাস্থার সম্পর্ক, তা চিন্তার খোরাক জোগায়। একে অন্যের সংযোগ কখনোই হবে না, যতক্ষণ না আধিপত্যবাদী মনোভাব দূর হবে।’
নেপালের হিমাল সাউথ এশিয়ান-এর সম্পাদক কনক মনি দীক্ষিত বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার উন্নতির স্বার্থেই আমাদের আত্মজিজ্ঞাসা ও আত্মসমালোচনা জরুরি।’
প্রশ্নোত্তর পর্বে অনুষ্ঠানের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশের স্যাটেলাইট চ্যানেল ভারতে সম্প্রচারের ব্যাপারে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে অগ্রগতি হবে বলে আশা করে বাংলাদেশ।
হলুদ সাংবাদিকতা রোধে গণমাধ্যম, প্রেস কাউন্সিল ও সরকারের ভূমিকা সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘সমস্যাটি বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই আছে। আর বাংলাদেশে প্রেস কাউন্সিলকে পর্যাপ্তভাবে কাজে লাগানো হয় না। হলুদ সাংবাদিকতা রোধের সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে, যে গণমাধ্যম এ ধরনের সাংবাদিকতার চর্চা করে, সেটি বর্জন করা। হলুদ সাংবাদিকতা বন্ধের নামে বিধিনিষেধ আরোপের লক্ষ্যে নিবর্তনমূলক আইন প্রবর্তন কাম্য হতে পারে না।’
জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের কথা জানতে চাইলে সায়মন ড্রিং বলেন, ‘অবশ্যই একুশে টিভি চালু ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। একুশে টিভি বন্ধের পর আমি যখন বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হই, তখন পেছন ফিরে মনে হচ্ছিল, তিন শর বেশি তরুণের স্বপ্ন কীভাবে চুরমার হয়ে গেল।’
নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীর বলেন, ‘সামাজিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে সাংবাদিকতা করলে জনগণের দুঃখ-বেদনা নিয়ে কথা বলতে হবে।’

No comments

Powered by Blogger.