শিশু ইশরাত হত্যা-মায়ের সম্মতিতে হত্যার দাবি যুবকের, মায়ের অস্বীকার

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু ইশরাত হত্যার ঘটনায় শিশুটির মা (২৭) ও তাঁর পরিচিত সুলতান মাহমুদ (২৬) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। কর্মকর্তাদের দাবি, সুলতান রুমাল দিয়ে নাক-মুখ চেপে ধরে শিশুটিকে হত্যা করেন। হত্যার পরিকল্পনার বিষয়টি মা জানতেন। গত ৩ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আড়াই বছরের মেয়ে ইশরাতকে নিয়ে চিকিৎসা করাতে আসেন তার মা। তিনি তখন দাবি করেছিলেন,


ঢোকার সময় ফটকে অপরিচিত এক দম্পতি শিশুটিকে ভেতরে নেওয়া যাবে না বললে তিনি মেয়েকে বাইরে রেখে চিকিৎসকের কক্ষে যান। ফিরে এসে অনেক খোঁজাখুঁজির পর হাসপাতালের একটি সিঁড়িঘরে শিশুটির লাশ পান।
গতকাল রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে ওই মা ও সুলতানকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে বক্তব্য দেন ডিবির উপকমিশনার (দক্ষিণ) মনিরুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত শনিবার রাতে লালবাগ এলাকা থেকে শিশুটির মাকে এবং নারায়ণগঞ্জের পাগলা থেকে সুলতানকে গ্রেপ্তার করা হয়। সুলতান দাবি করেন, এক-দেড় বছর আগে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিশুটির মায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের সূত্রপাত হয়। সম্প্রতি তাঁকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন শিশুটির মা। সুলতান বাচ্চাসহ বিয়ে করা সম্ভব নয় বলে জানান। পরে দুজনে মিলে শিশুটিকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
তবে শিশুটির মা সুলতানের এই দাবি সত্য নয় বলে জানিয়েছেন। হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথাও অস্বীকার করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘সুলতান আমার মেয়েকে মারছে। এখন নিজে বাঁচার জন্য আমাকে ফাঁসাচ্ছে।’
সুলতানের দাবি, কোথা থেকে শিশুটিকে নিয়ে, কোথায় মারতে হবে সবই একদিন আগে (২ ডিসেম্বর) ঠিক করা ছিল।
তবে শিশুর মা এসব অস্বীকার করে বলেন, সুলতান তাঁর মেয়েকে হত্যার জন্য তাঁর পিছে পিছে মেডিকেলে এসেছেন। বাবা পরিচয় দিয়ে শিশুটিকে তিনি অপেক্ষার কক্ষ থেকে নিয়ে যান। মেয়ে হারিয়ে তিনি যখন পাগলপ্রায় তখন সুলতান বারবার তাঁকে ফোন করে নানা রকম পরামর্শ দিচ্ছিলেন। যখন তিনি মেয়ের লাশ পান, তারপর থেকে সুলতানের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, শুধু সুলতানের বক্তব্যের ভিত্তিতে নয়, হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ পেয়েই শিশুটির মাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত রুমালটিও সুলতানের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে।
অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তা মো. শহীদুল্লাহ বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর শিশুর মায়ের সঙ্গে সুলতানের অনেকবার মোবাইল ফোনে কথা হয়। শিশুটির মাকে গ্রেপ্তারের পর সুলতানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শিশুটির বাবা প্লাস্টিক কারখানার কর্মী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় ১৩ বছর আগে তিনি বিয়ে করেন। তাঁর স্ত্রী কখনোই সংসারের প্রতি উদাসীন ছিলেন না। তাঁদের বড় মেয়ের বয়স ১১। আড়াই বছর আগে ছোট মেয়েটা হয়। এরপর নানা অসুখে ভোগে মেয়েটা। তার মা রাত-দিন সেবা করে মেয়েকে সুস্থ করে তোলেন। তিনি বলেন, ‘এখন পুলিশ বলছে আমার বউ হত্যার পরিকল্পনা করেছেন। কিন্তু আমি মেয়ের প্রতি কখনোই তাঁর ভালোবাসার কমতি দেখি নাই।’
শিশুটির দাদি বলেন, লালবাগে তাঁদের ১২ সদস্যের যৌথ পরিবার। বউয়ের মধ্যে তিনি কখনোই কোনো অস্বাভাবিক আচরণ দেখেননি। পরিবারের সদস্যদের প্রতি তিনি যত্নবান ছিলেন। বিশেষ করে ছোট মেয়েটির (নিহত) প্রতি তাঁর টান ছিল বেশি।
শিশুর বাবা বলেন, হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন আগে তাঁর নম্বরে অজ্ঞাত একজন ফোন করেন। তাঁর বড় মেয়ে সেই ফোনটি ধরে। অপরপ্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘তোমার মারে বলো বেশি বাড়াবাড়ি না করতে। তাইলে কিন্তু খবর আছে।’

No comments

Powered by Blogger.