৭০০ কোটি! by আসিফ আহমেদ

লতি অক্টোবর মাসেই বিশ্বের লোকসংখ্যা ৭০০ কোটি হবে! এটা মাইলফলক (নাকি কিলোমিটার ফলক?) সংখ্যা। বিশ্বে যদি সম্পদের প্রাচুর্য থাকত, সবার জন্য যদি খাদ্য-বাসস্থান-চিকিৎসা নিশ্চিত করা যেত, তাহলে ৭০০ কোটিতে পেঁৗছানো হতো উৎসবের মস্ত উপলক্ষ। সোভিয়েত ইউনিয়নের অস্তিত্ব যখন ছিল তখন তাদের প্রচারমাধ্যম 'বীরমাতা' খেতাবের খবর ফলাও করে প্রচার করত। কেউ ১০ সন্তানের জননী হলে তাকে এ ধরনের খেতাব দেওয়া হতো।
জনসংখ্যা বাড়াতে কমিউনিস্টশাসিত দেশটির আরও নানা ধরনের প্রণোদনা ছিল। তাদের এ ধরনের পদক্ষেপের একটি বড় কারণ ছিল বিশাল ভূখণ্ড। দেশটির আয়তন ছিল অনেক বড়, কিন্তু সে তুলনায় মানুষ নিতান্তই কম। তাছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্যাসিস্ট জার্মানির নিষ্ঠুর গণহত্যার শিকার হয়েছিল লাখ লাখ নাগরিক। রণাঙ্গনে লড়েও অনেকের প্রাণ যায়। এ কারণে তারা লোকসংখ্যা বাড়ানোর প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগী হয়েছিল। সেখানের নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছিল শ্রমশক্তির জোগান নিশ্চিত করতে হলে মানুষের সংখ্যা বাড়াতেই হবে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশ এখন বিভিন্ন দেশ থেকে লোক নিচ্ছে নানাভাবে। এর প্রধান কারণ তাদের বড় ভূখণ্ড। উন্নত এসব দেশের নাগরিকদের অধিক সন্তানের পরিবার গঠনে কোনোভাবেই উৎসাহিত করা যাচ্ছে না। এ কারণেই অন্য দেশের ওপর নির্ভরতা। তাদের দেশের নারীদের যদি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নারীদের মতো আট-দশজন সন্তান গ্রহণে রাজি করানো যেত, তাহলে বিদেশনির্ভরতা অবশ্যই কমে যেত; কিন্তু বাস্তবে এটা সম্ভব নয়।
উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পরিস্থিতি কিন্তু একেবারেই ভিন্ন। প্রায় সব দেশই জনসংখ্যার চাপে পিষ্ট। তাদের খাদ্য ভাণ্ডার তেমন সমৃদ্ধ নয়। শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে সরকার চাইলেও বরাদ্দ সীমিত রাখতে বাধ্য হয়। বেকার সংখ্যা বিপুল। এ অবস্থায় তাদের কাছে 'বড় নয়, বরং ছোট পরিবারই' আদর্শ হওয়ার কথা। বিশ্বে ৭০০ কোটি লোক_ এ পরিসংখ্যান তাদের কাছে আনন্দের নয়, বরং আরও উদ্বেগের কারণ। বাংলাদেশের কথাই ধরা যাক। আমাদের লোকসংখ্যা ১৫ না ১৬ কোটি, এটা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। অনেকের অভিযোগ, সরকার লোকসংখ্যা কিছুটা কমিয়ে দেখাতে চায় যাতে মাথাপিছু আয় বেশি দেখানো সম্ভব হয়। এটা সঠিক হোক বা না হোক, ইতিমধ্যে যে লোকসংখ্যা দেশে রয়েছে তাদেরই অনেক বেশি ধরা হয়। রাজধানী ঢাকায় এখন দেড় থেকে দুই কোটি লোকের বসবাস। তাদের নূ্যনতম সুবিধাও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তারপরও দেশের অন্যান্য শহরের তুলনায় ঢাকায় ছোটখাটো কাজের সুযোগ অপেক্ষাকৃত বেশি থাকায় প্রতিদিন শত শত বাড়তি মুখ ভিড় করছে এখানে। এর বাইরেও তো রয়েছে স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি, যা রয়েছে দেশের সর্বত্র। বছরে ২৫-২০ লাখ নতুন মুখ আসছে দেশে। বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়টির প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চলেছেন। কিন্তু লোকসংখ্যা সীমিত রাখতে হবে, এ বিষয়টি এখন পর্যন্ত সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হয়ে উঠতে পারেনি। এ ধারা চলতে থাকলে আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি ঘটতে থাকবে তাতে সন্দেহ নেই।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের লোকসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। চলি্লশ বছরে তা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আমাদের ছোট ভূখণ্ড তার চাপ সহ্য করতে পারছে না। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যে, জবরদস্তি করে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না। শিক্ষার প্রসার ও জনগণকে সচেতন করে তোলার পাশাপাশি পরিবার পরিকল্পনা সামগ্রীও স্বল্পমূল্যে কিংবা প্রয়োজনে বিনামূল্যে সরবরাহ করতে হবে। এ জন্য বছরে শত শত কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হলেও সরকারের লোকসান নেই। কারণ, লোকসংখ্যা বর্তমান হারে বাড়তে থাকলে তাদের নানা প্রয়োজন মেটাতে যে ভর্তুকি দিতে হবে তার তুলনায় এটা কমই থাকবে। এখন সরকারই তার অগ্রাধিকার নির্ধারণ করুক।

No comments

Powered by Blogger.