শিশু রিয়া হত্যাকাণ্ড-পরিকল্পনায় মা, আর বাস্তবায়নে প্রেমিক

মা রোজিনার অনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় আড়াই বছরের শিশু রিয়া। কারণ একটি বাচ্চাসহ রোজিনাকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি তার প্রেমিক সুলতান। শেষ পর্যন্ত পরকীয়ার মোহে অন্ধ হয়ে নিজ সন্তানকে খুন করার পরিকল্পনা করে রোজিনা। আর এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের দায়িত্বটি পালন করে সুলতান। গত ৩ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে মুখে রুমাল চেপে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় রিয়াকে। এ ঘটনায় নিহত রিয়ার মা রোজিনা বেগম (২৭) ও


তার প্রেমিক সুলতান মাহমুদকে (২৬) গ্রেফতার করা হলে তারা পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করে। গত শনিবার রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। এ ব্যাপারে রোজিনার পঙ্গু স্বামী নুরুল হক বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা
দায়ের করেছেন।
হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সুলতান সাংবাদিকদের জানায়, দেড় বছর আগে মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে রোজিনার পরিচয়। কয়েক দিনের মধ্যেই তারা শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে রোজিনা তাকে বিয়ে করার জন্য সুলতানকে চাপ দেয়। দুই মাস আগে রোজিনা নিজের গলার স্বর্ণের চেইন বিক্রি করে রাজধানীর হাজারীবাগে সুলতানকে একটি মেস ঠিক করে দেয়। ওই মেসে রোজিনা নিয়মিত যাতায়াত করত।
সুলতান আরও জানায়, মেয়েসহ তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করলে রোজিনা নিজেই রিয়াকে খুন করার বুদ্ধি দেয়। সে অনুযায়ী ৩ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউক্লিয়ার বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায় নিয়ে রিয়াকে শ্বাসরোধে হত্যা করে সুলতান। মুখে রুমাল চেপে ও দেয়ালে ঠেসে ধরে নির্মমভাবে হত্যার পর রিয়াকে সেখানেই ফেলে রাখা হয়।
তবে নিজ সন্তানকে হত্যার পরিকল্পনা অস্বীকার করে রোজিনা জানায়, মোবাইল ফোনে সুলতান তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে। স্বামী শারীরিকভাবে অসুস্থ (এক হাত ও এক পা নেই) হওয়ায় সুলতানের সঙ্গে তার সম্পর্ক গভীর হয়ে ওঠে। এরপর রিয়াকে সঙ্গে নিয়ে রোজিনা তার সঙ্গে শিশুপার্ক ও চিড়িয়াখানাসহ বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত বেড়াতে যেত।
রোজিনা আরও জানায়, তার দেখাদেখি রিয়াও সুলতানকে 'জান' বলে ডাকত। সুলতান প্রথম দিকে রিয়াকে নিজের মেয়ের মতো আদর করার ভান করত। কিন্তু বিয়ের জন্য চাপ দিলে মেয়েসহ তাকে বিয়ে করাতে রাজি হয়নি। পরে সুলতানের কাছে মেয়েকে ছাড়াই যাওয়ার জন্য রাজি হয় রোজিনা। এ অবস্থায় ওই দিন রিয়া ও রোজিনার সঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যায় সুলতান। রোজিনা ডাক্তারের কক্ষে ঢুকলে সেখান থেকে রিয়াকে নিয়ে সটকে পড়ে সুলতান।
গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মনিরুল ইসলাম বলেন, শিশু রিয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের মা রোজিনা বেগমকে হাজারীবাগের নিজ বাসা এবং প্রেমিক সুলতানকে নারায়ণগঞ্জে তার ভাইয়ের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত দু'জনই শিশুটিকে খুনের কথা স্বীকার করেছে। রিয়াকে হত্যায় ব্যবহৃত রুমালটিও উদ্ধার হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.