পবিত্র কোরআনের আলো-মদিনার ইহুদিরা স্বেচ্ছায় শান্তিচুক্তি করেও বারবার তা ভঙ্গ করেছিল

৫. ইন্না শাররাদ্দাওয়াবি্ব ইন্দাল্লাহিল্লাজিনা কাফারু ফাহুম লা-ইয়ু'মিনুন। ৫৬. আল্লাজিনা আহাদতা মিনহুম ছুম্মা ইয়ানকাদুনা আহাদাহুম ফি কুলি্ল মাররাতিন ওয়া হুম লা-ইয়াত্তাক্বুন। ৫৭. ফাইম্মা তাছক্বাফান্নাহুম ফিল হারবি ফাছাররিদবিহিম মান খালফাহুম লাআ'ল্লাহুম ইয়াজ্জাক্বারুন। ৫৮. ওয়া ইম্মা তাখাফান্না মিন ক্বাওমিন খিয়ানাতান ফামবিজ ইলাইহিম আলা সাওয়া-ই। ইন্নাল্লাহা লা-ইউহিব্বুল খায়িনিন। (সুরা আল-আনফাল, আয়াত-৫৫-৫৮)


অনুবাদ : ৫৫. নিশ্চয়ই ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী প্রাণীদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট জীব হলো তারা, যারা অবাধ্যতার পথ অবলম্বন করেছে। সুতরাং তারা ইমান আনছে না।
৫৬. এরা তো সেই সব লোক, যাদের সঙ্গে আপনি সন্ধিচুক্তি করেছিলেন। এরপর তারা প্রতিবার সুযোগ পেলেই চুক্তি ভঙ্গ করেছে। এরা একেবারেই দায়িত্বনিষ্ঠ নয়।      
৫৭. সুতরাং যুদ্ধকালে যদি তোমরা তাদের নাগালের মধ্যে পাও তাহলে তাদেরকে তাদের পেছনের মূল শক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে এবং এমন শাস্তি দেবে, যাতে পরবর্তী সময়ে মনে থাকে।
৫৮. তোমরা যদি কোনো সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে (চুক্তিভঙ্গজনিত) বিশ্বাসঘাতকতার আশঙ্কা করো, তাহলে তোমরাও সেই চুক্তি সোজা তাদের দিকে ছুড়ে মারো (অর্থাৎ চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দাও। কিন্তু আগে চুক্তি ভঙ্গ করো না)। আল্লাহ তায়ালা চুক্তি ভঙ্গকারীদের পছন্দ করেন না।

ব্যাখ্যা : ৫৫ নম্বর আয়াতে কাফির তথা আল্লাহর অবাধ্য মানুষদের মর্যাদার শুরুটা আল্লাহর কাছে কোথায় তা বর্ণনা করা হয়েছে। মানুষ পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ জীব। সমগ্র সৃষ্টিজগতে মানুষের মর্যাদা আল্লাহর কাছে সবার ওপরে। তবে সে মানুষকে অবশ্যই হতে হবে সৎ ও দায়িত্বনিষ্ঠ। কিন্তু যে মানুষ আল্লাহর অবাধ্য তথা কাফির, তার মর্যাদা একেবারে সবার নিচে। মানুষের মধ্যে তো বটেই, ইতর প্রাণীদের চেয়েও সে নিকৃষ্ট। কারণ মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে শোনা, বোঝা ও বিবেকবুদ্ধি কাজে লাগানোর যোগ্যতা দিয়ে। এ জন্যই মানুষের ওপর রয়েছে দায়িত্ব। বুঝেশুনে বিবেকবুদ্ধি কাজে লাগিয়ে মানুষ সঠিক পথ গ্রহণ করবে, এটা তার জন্মগত দায়িত্ব। তথাপি সে বোঝার চেষ্টা না করলে পশু অপেক্ষা অধম সাব্যস্ত হবে বৈকি। এই সুরার ২২ নম্বর আয়াতেও অনুরূপ বাণী রয়েছে।
৫৬ নম্বর আয়াতের মাধ্যমে মদিনা ও এর আশপাশে বসবাসকারী ইহুদিদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে নবী করিম (সা.)-এর চুক্তি হয়েছিল যে মদিনা রাষ্ট্রে ইহুদি, মুসলিম এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরা পারস্পরিক সহযোগিতা ও শান্তিতে বসবাস করবে। তারা একে অন্যের শত্রুর সহযোগিতা করবে না। কিন্তু ইহুদিরা এ চুক্তি বারবার ভঙ্গ করেছে এবং বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তারা গোপনে মক্কার কাফিরদের সঙ্গে যোগসাজশে ষড়যন্ত্র করেছে। ৫৭ নম্বর আয়াতে এসব বিশ্বাসঘাতক ষড়যন্ত্রকারীর বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা যদি কোনো যুদ্ধে মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ময়দানে আসে, তাহলে তাদের এমন শিক্ষা দিতে হবে, যাতে বিশ্বাসভঙ্গের পরিণাম তারা হাড়ে হাড়ে টের পায়। আর শুধু তারাই টের পায় না, বরং তাদের পেছনে থেকে যারা তাদের উসকানি দেয়, তাদেরও তা ভোগ করতে হয়। এখানে পেছনের শক্তি বলতে মক্কার কুরাইশদের বোঝানো হয়েছে এবং তাদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৫৮ নম্বর আয়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যদি তাদের পক্ষ থেকে বিশ্বাসভঙ্গের কোনো প্রমাণ নাও পাওয়া যায়, কিন্তু সুযোগ পেলে বিশ্বাস ভঙ্গ করে মুসলিমদের বড় ধরনের ক্ষতি করার আশঙ্কা থাকে সে সম্পর্কে। বলা হয়েছে, 'তুমিও সে চুক্তি সোজা তাদের দিকে ছুড়ে মারো।' অর্থাৎ এরূপ ক্ষেত্রে মুসলমানদের আদেশ দেওয়া হচ্ছে, তারা যেন পরিষ্কারভাবে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয়। সেই সঙ্গে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে, বিশ্বাসঘাতকতার আশঙ্কা দেখা দিলে আগেই তাদের বিরুদ্ধে চুক্তিবিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না। আগে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিতে হবে। অন্যথায় সেটা চুক্তিভঙ্গের কারণ হবে, যা আল্লাহ পছন্দ করেন না।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.