মিসরে ক্ষমতায় আসছে ব্রাদারহুড!

মিসরের আইনসভার নিম্নকক্ষ মজলিস আল সা’আবের (দ্য পিপলস অ্যাসেম্বলি) নির্বাচনে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হয়েছে ইসলামপন্থী দলগুলো। এর মধ্যে মুসলিম ব্রাদারহুড একাই প্রায় ৪১ শতাংশ আসনে জয়ী হয়েছে। নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে উদারপন্থীদের। নিম্নকক্ষের মোট আসন ৪৯৮টি। অবশ্য এখনো ১১ শতাংশ আসনের ভোট গ্রহণ বাকি রয়েছে। গত শনিবার ব্রাদারহুড পার্লামেন্ট নির্বাচনের তথ্য প্রকাশ করেছে। মিসরের নির্বাচন কমিশন অবশ্য এখনো


ভোটের আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করেনি। প্রথম দফার নির্বাচনে এক এলাকার ভোট গ্রহণ বাতিল করা হয়। সেখানে আবার ভোট হবে। এ ছাড়া ১০ ও ১১ জানুয়ারি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কয়েকটি আসনে ভোট হবে। মুসলিম ব্রাদারহুড-সমর্থিত ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি ভোটের ফলাফলের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে ফেসবুকে তাদের পৃষ্ঠায় এসব তথ্য দিয়েছে।
ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ করে ব্রাদারহুড জানায়, মিসরের উদারপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো এ পর্যন্ত ৯ শতাংশ আসন পেয়েছে। ওফাদ পার্টি ৯ শতাংশ ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মোবারকের অনুগতরা ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে। গণবিক্ষোভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা তরুণদের সংগঠনগুলো পেয়েছে মাত্র ২ শতাংশ আসন। এ ছাড়া মধ্যপন্থী ইসলামি দল আল ওয়াসাত ২ শতাংশ আসন পেয়েছে। বাকি আসনগুলো পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
সর্বশেষ ফলাফলে দেখা গেছে, ব্রাদারহুড ও তার মিত্র দলগুলোর গণতান্ত্রিক মোর্চা নিম্নকক্ষের ৪১ শতাংশ আসনে জয়ী হয়েছে। অন্যদিকে কট্টরপন্থী ইসলামি দল নূর পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট ২০ শতাংশ আসন পেয়ে ভোটের ফলাফলে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।
নূর পার্টি কঠোরভাবে দেশে ইসলামি আইনের প্রয়োগ চায়। তাদের চেয়ে তুলনামূলক মধ্যপন্থী অবস্থান ব্রাদারহুডের। দলটি উদারপন্থী দলগুলোর সঙ্গে জোট বাঁধার পক্ষে, যাতে তাদের সঙ্গে নিয়েই মিসরে ইসলামপন্থীদের শাসনের সম্ভাবনা সৃষ্টি করা যায়।
ভোটের এ ফলাফলে এটি এখন স্পষ্ট, মিসরে নতুন সংবিধান প্রণয়নে ইসলামপন্থীরাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। নতুন আইনসভা সংবিধানের খসড়া প্রণয়নের জন্য যোগ্য ১০০ জন ব্যক্তিকে বেছে নেবে।
ব্রাদারহুড প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ভোটের ফলাফল যা-ই হোক না কেন, ভিন্নমতাদর্শে বিশ্বাসী সব পক্ষই তাদের মতামত দিতে পারবে। তবে ইসলামপন্থী দলগুলোর বিরাট উত্থান দেশের একটি অংশ ও পশ্চিমা শাসকদের ভাবিয়ে তুলেছে।
এদিকে নিম্নকক্ষের নির্বাচন প্রায় শেষ হয়ে আসার পর সংবিধান প্রণয়নের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। নতুন সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কতটা কমানো হবে, তা নিয়েই আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রবল গণ-আন্দোলনে প্রেসিডেন্ট মোবারক পদত্যাগে বাধ্য হওয়ার পর মুসলিম ব্রাদারহুড শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হিসেবে মিসরের রাজনীতিতে আবির্ভূত হয়। সুশৃঙ্খল ও চমৎকার সাংগঠনিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা দলটির বিশাল সমর্থক গোষ্ঠী রয়েছে। কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ আইনসভার নির্বাচনে দলটি ভোটের ফলাফল নিজেদের অনুকূলে নিতেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।
মিসরের নির্বাচন কমিশন জানায়, গত মঙ্গল ও বুধবার তৃতীয় দফার নির্বাচনে ৬২ শতাংশ ভোট পড়েছে।

No comments

Powered by Blogger.