চট্টগ্রাম বন্দর-উন্নতির ধারা বজায় থাকুক

বাংলাদেশে ভালো কিছু ঘটলে দ্রুত সে বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। নতুন নতুন স্থানে তার প্রতিফলন দেখতে চায় সবাই। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এমন খুশির বার্তা এসেছে রোববারের সমকালে। 'চট্টগ্রাম বন্দরে মন্দের চেয়ে ভালো কাজ বেশি' শিরোনামের খবরে বলা হয়, দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে এখন প্রতিটি জাহাজের গড় অবস্থানকালীন সময় দু'দিনেরও কম। ৬ বছর আগে যা ছিল ১০ দিন, তিন বছর আগে ৫ দিন, এমনকি জরুরি অবস্থার সময়েও ছিল আড়াই থেকে তিন দিন।


মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছিল_ শ্রমিক অসন্তোষ ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ফের উদ্বেগের দিনগুলোর কথাই স্মরণ করিয়ে দিতে শুরু করে। কিন্তু এখন পণ্য খালাসে হয়রানি ও চার্জ কমেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ চিত্র আশাব্যঞ্জক। কীভাবে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো? এর একটি কারণ স্বচ্ছতা_ টেন্ডারের মাধ্যমে বিভিন্ন টার্মিনালের কাজ দেওয়া হয়েছে। কাস্টম হাউসের অটোমেশনের অনেক কাজ আগেই হয়েছে। এখন বন্দরের অনেক কাজও স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হয়। আগে পণ্য খালাস করতে ব্যবসায়ীদের ২৪টি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হতো, সই নিতে হতো ১৬ স্থানে। ইয়ার্ডে পণ্য খালাস করতে ব্যবসায়ীদের দিতে হতো ১২শ' টাকা, এখন দিচ্ছেন ৩০০ টাকা। পরিস্থিতির উন্নতি ঘটার আরেকটি কারণ নতুন ও আধুনিক সরঞ্জাম স্থাপন। এ জন্য ভালো মানের সরঞ্জাম আনা হয়েছে। এর ফলে মালামাল বোঝাই ও খালাসের কাজে গতি এসেছে। শ্রমিক অসন্তোষ কমার কারণেও বন্দরের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে শুরু করেছে। সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিরও উন্নতি ঘটেছে এবং তার প্রতি স্বীকৃতি রয়েছে আন্তর্জাতিক সমাজের। নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো কাজ করায় নানা দেশের জাহাজ বন্দরের আশপাশে নিরাপদবোধ করে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে, এটাই প্রত্যাশা। বাংলাদেশে অনেক সময় সাফল্য ধরে রাখা যায় না। জরুরি পরিস্থিতির সময় সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে থাকায় বন্দরের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছিল। কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি। রাজনৈতিক সরকারের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ বন্দরের কাজ ক্রমে উন্নত করে চলা। এ জন্য কয়েকটি অপরিহার্য করণীয় হচ্ছে : বন্দরের ক্যাপিটাল ড্রেজিং সম্পন্ন করা, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে অপারেটর নিয়োগ, শ্রম অসন্তোষ স্থায়ীভাবে দূর করার জন্য সব শ্রমিক সংগঠনকে আইনের আওতায় আনা এবং বন্দরের কাজ পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় করা। ছোটখাটো চুরির ঘটনা বন্ধেও পদক্ষেপ নিতে হবে। সব কাজ একসঙ্গে করে ফেলা যাবে না, কিন্তু এটাও মনে রাখা চাই যে, জরুরি কাজ অবহেলা করলে তার খেসারত দিতে হয়।
দেশে আমদানি-রফতানি বাড়ছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যত বাড়বে, বন্দরের ওপর চাপ বাড়বে। এটাও মনে রাখতে হবে, চট্টগ্রাম বন্দরকে ভারত, নেপাল, ভুটানসহ আশপাশের দেশগুলো ব্যবহার করতে আগ্রহী। এশিয়ার আরও অনেক দেশ এ বন্দর ব্যবহারে উৎসাহ দেখাচ্ছে। এ প্রয়োজন মেটানো বর্তমান ক্ষমতায় সম্ভব নয়। তবে বর্তমান পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব হলে বন্দরটি দেশের জন্য উপার্জনের বড় উৎস হয়ে উঠতে পারে। একই সঙ্গে মংলা বন্দরকেও আধুনিক মানসম্পন্ন করে তোলায় মনোযোগী হতে হবে। এসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়লে তার সুফল মেলে, এটাই তো অভিজ্ঞতা।

No comments

Powered by Blogger.