চরাচর-প্লাস্টিক শিল্পের বিকাশ by আজিজুর রহমান

বাংলাদেশে দ্রুত বিকশিত হচ্ছে প্লাস্টিক শিল্প। একসময় দেশে প্লাস্টিকের পণ্য আমদানি করা হতো। এখন অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছর সরাসরি ৬০০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজসহ এর পরিমাণ ১২ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশে তৈরি প্লাস্টিকের পণ্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, নিউজিল্যান্ড, পোল্যান্ড, বেলজিয়াম, চীন, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়াসহ


ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও এশিয়ার উঠতি অর্থনীতির দেশগুলোতেও রপ্তানি হচ্ছে। প্রতিবছর চার হাজার কোটি টাকার পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে বাংলাদেশে। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে মোট জাতীয় আয়ে অর্থাৎ জিডিপিতে প্লাস্টিক শিল্পের অবদান ছিল ১ শতাংশ। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ শতাংশে। বাংলাদেশে প্লাস্টিক শিল্পের বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখছে প্রধানত গার্মেন্ট শিল্প। মূলত গার্মেন্ট শিল্পের রপ্তানি বাড়ায় এর সঙ্গে প্লাস্টিকের প্যাকেজিংও বেড়েছে। আর প্লাস্টিকের পণ্য রপ্তানি হয় মূলত প্যাকেজিং শিল্পের সঙ্গে। তবে বাংলাদেশ থেকে বিশ্ববাজারে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিল্মস, কম্পিউটার এক্সেসরিজ, অডিও-ভিডিও ক্যাসেট, বৈদ্যুতিক সুইচ, মেলামাইন টেবিলওয়্যার, ওভেন স্যাকস, পিভিসি পাইপ, পলিথিনশিট, হ্যান্ড গ্লাভস, রশি, ভিবেল্ট, খেলনা, প্লাস্টিকের শপিং ব্যাগ, গার্বেজ ব্যাগ, টুথ ব্রাশ, কলম ও প্লাস্টিকের ফুল। আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের চাহিদা প্রতিবছর ১০ শতাংশেরও বেশি হারে বাড়ছে। এ ছাড়া দেশে-বিদেশে দিন দিন চাহিদা বাড়ছে প্লাস্টিক ফার্নিচার, পিপি ওভেন ব্যাগস, পিভিসি পাইপ, প্লাস্টিক হার্ডওয়্যার, বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত বোতল, ওষুধের প্যাকেট ও খেলনার। প্লাস্টিকপণ্যের বহুমুখী চাহিদা রয়েছে। পানি সরবরাহের ট্যাংক, ইনজেকশনের সিরিঞ্জ, গৃহস্থালি কাজে প্রয়োজনীয় সব তৈজসপত্র_থালা, বাটি, জগ, মগ, গ্লাস, চা ছাঁকনি, চেয়ার-টেবিল-মোড়া, সাবান কেইস, ঝুড়ি, বালতি, বদনা, জামার বোতাম, হ্যাঙ্গার_এমন হাজারো পণ্য তৈরি হচ্ছে। দাম কম ও সহজে পরিবহনযোগ্যতার কারণেই প্লাস্টিক পণ্যের ব্যাপক চাহিদা। এক তথ্যে জানা যায়, ফলমূল, সবজিসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য যথাযথ প্যাকিংয়ের অভাবে পরিবহনের সময় বছরে ২০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। প্লাস্টিক বঙ্ েকরে এসব কৃষিপণ্য পরিবহন করা হলে ক্ষতির হাত থেকে যেমন রক্ষা পাওয়া যাবে, তেমনি প্লাস্টিকপণ্যের চাহিদাও বেড়ে যাবে। আশির দশকের শুরুর দিকে পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু প্লাস্টিক কারখানা গড়ে ওঠে। ছোট-বড় মিলিয়ে দেশে এখন প্লাস্টিক শিল্প কারখানার সংখ্যা গত বছর ছিল দুই হাজার ৯৯৭টি। এর ৫২টি বড়, ৯৮০টি শিল্প মাঝারি এবং এক হাজার ৯৬৫টি ক্ষুদ্র কারখানা। প্লাস্টিক শিল্পের কারখানাগুলো বেশির ভাগই ঢাকাকেন্দ্রিক।
আজিজুর রহমান

No comments

Powered by Blogger.