তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিন-রোডমার্চের সেবায় সিসিসি

রোডমার্চ বিএনপির, আর তাদের ব্যানার টানান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) লোকজন! তাঁরা সিটি করপোরেশনের গাড়িও ব্যবহার করেন। এই গুরুতর অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামে। করপোরেশনের কর্মীরা কোন অধিকারে একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করেন? এটা তো চাকরিবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। রোববার প্রথম আলোর প্রথম পাতায় এ বিষয়ে সচিত্র খবর ছাপা হওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে, করপোরেশনের কাজের শৃঙ্খলা দেখার কি কেউ নেই?


এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ মন্জুর আলমের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এটা দুঃখজনক। প্রথম আলোর প্রতিবেদক শত চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। তিনি কি বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন? তিনি নিজেকে লুকোতে গিয়ে আসলে করপোরেশনের অনিয়মকেই উন্মুক্ত করেছেন। এতে ধারণা করা যায়, বিএনপির রোডমার্চের কাজে করপোরেশনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি মেয়র সাহেবের অগোচরে হয়নি।
মেয়র মোহাম্মদ মন্জুর আলম রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির একজন নেতা। সেটা তিনি হতেই পারেন। কিন্তু যখন তিনি নির্বাচিত মেয়র, তখন তাঁকে অবশ্যই করপোরেশনের কাজ এবং রাজনৈতিক দলের কাজের মধ্যে একটি বিভাজন রেখা টানতে হবে। মেয়র বিএনপির নেতা বলে করপোরেশনের সম্পদ ও লোকবল বিএনপির হয়ে যায় না। করপোরেশনের সম্পদ তিনি তাঁর রাজনৈতিক দলের রোডমার্চের কাজে ব্যবহার করতে দিতে পারেন না। এটা গুরুতর অন্যায় ও অনিয়ম।
প্রথম আলোর সাংবাদিক ছবি তুলতে গেলে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা ব্যানার টানানোর কাজ রেখে করপোরেশনের গাড়ি নিয়ে চলে যান। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে এসে আবার সেই কাজটিই করেন। করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মীরা বিএনপির হয়ে কাজ করতে এতই আন্তরিক যে পত্রিকায় প্রকাশের আশঙ্কাও তাঁদের দমাতে পারে না। সবকিছু উপেক্ষা করে তাঁরা নিরলসভাবে কাজ করে যান। এঁরা করপোরেশনের চাকরি করেন, না বিএনপির—অনুসন্ধান করা দরকার।
নগরের বিলবোর্ডগুলো বিএনপির রোডমার্চের ব্যানারে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। সেগুলোতে এত দিন আলো জ্বলত না। এখন হঠাৎ জ্বলে উঠল। অভিযোগ উঠেছে, সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় এটা সম্ভব হয়েছে। বিএনপির রোডমার্চের প্রচারের জন্য কার টাকায় এই আলোকসজ্জা করা হচ্ছে, তা খুঁজে দেখা দরকার। বিদ্যুতের বিল কি কোনো ব্যক্তি দেবেন, নাকি করপোরেশনের হিসাবের খাতায় জমা হবে, সেটাও পরিষ্কার হওয়া দরকার।
সিটি করপোরেশন চলে জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। এর সম্পদ কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের কাজে ব্যবহার করা যায় না। মেয়র সাহেব নিশ্চয়ই এই সাধারণ কথাটা বোঝেন। এর দায়দায়িত্ব করপোরেশন ও তার মেয়রকেই বহন করতে হবে। অবিলম্বে তদন্ত করা হোক। ব্যানার টানানো, রোডমার্চের প্রচারকাজে ও বিলবোর্ডে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নিলে এসব অনিয়ম দূর করা যাবে না। দলীয় কাজকর্মের সঙ্গে সরকারি সংস্থার কাজের পার্থক্য থাকবে না।

No comments

Powered by Blogger.